কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ফের সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুন ২০২৪, ৫:৩৫:১৮ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: কয়েক ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে আবার জলাবদ্ধতার কবলে সিলেট শহরের শতাধিক এলাকা। শনিবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এ বৃষ্টিতে নগরের অনেক স্থানে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি হয়ে যায়।
শনিবার রাতে সিলেট নগরের মাত্র ৩ ঘন্টায় রেকর্ড ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই ভারি বৃষ্টিতে আবার তলিয়ে যায় সিলেট নগর। এনিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইবার জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হলো সিলেট নগরের বাসিন্দাদের।
শনিবার রাত ৯ টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ১২ টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি চলে। এতে নগরের বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে। পানিতে তলিয়ে যায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলাও। এতে দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা। অবশ্য রোববার সকালে পানি নেমে যায়।
এরআগে গত ২ জুন রাতে ভারি বৃষ্টিতে সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানিতে তলিয়ে যায় নগরের শতাধিক এলাকা। এতে দুর্ভোগে পড়েন এসব এলাকার বাসিন্দারা। সে রাতেও ওসমানী হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়েছিলো।
শনিবার রাত ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের দরগামহল্লা, পায়রা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কাজলশাহ, মেডিকেল রোড, বাগবাড়ি, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, সোবহানীঘাট, উপশহর, যতরপুর, তেরোরতন, সোনারপাড়া, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘিরপার, পাঠানটুলা, মিয়া ফাজিলচিশত, জালালাবাদ, হাউজিং এস্টেট, শাহি ঈদগাহ, ঘাসিটুলা, হাওয়াপাড়া, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, জামতলা ও তালতলা এলাকায় পানি থইথই করছে। ঘরমুখী মানুষেরা যানবাহনের অভাবে পানি মাড়িয়ে হেঁটেই ফিরছিলেন। এসব এলাকার বেশিরভাগ বাসায় পানি ঢুকে পড়ে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসর সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. সজিব জানিয়েছেন শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত ৩ মিলিমিটার এবং ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর রাত ১২ টা থেকে রোববার সকাল ৬ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয় ৩৪ মিলিমিটার।
নগরের দরগাহ মহল্লা এলাকার বাসিন্দা, প্রকাশনা সংস্থা চৈতন্য’র সত্ত্বাধিকারী রাজিব চৌধুরী বলেন, শনিবার রাতে কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতেই দরগাহ মহল্লা এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে। এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে।
তিনি বলেন, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এনিয়ে দুইবার বাসায় পানি ঢুকলো। সিলেটে সবচেয়ে বড় যন্ত্রনার নাম জলাবদ্ধতা।
কলেজ শিক্ষক সালমান ফরিদ ফেসবুকে লিখেন- স্মার্ট সিলেট সিটি গড়ার কথা বলছেন মেয়র। অথচ মাত্র ২ ঘন্টারবৃষ্টিতে মিরের ময়দান এলাকার কেওয়াপাড়ার আমার বাসায় পানি উঠে যায়। নিচতলায় পানি থৈথৈ করছে।
নগরের একাধিক বাসিন্দা বলেন, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের সব নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। অনেকে রাতের খাবার প্রস্তুত করার আগেই রান্নাঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন। এ ছাড়া অনেক বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানির সঙ্গে ভেসে ময়লা-আবর্জনাও ঢুকে পড়েছে। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তি পোহান লোকজন। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন গত দেড় দশকে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
এর আগে গত ২৯ মে এক রাতের ঢলে তলিয়ে গিয়েছিলো সিলেটের পাঁচ উপজেলা। পুরো জেলায় দেখা দিয়েছিলো বন্যা পরিস্থিতি। তবে বন্যার পানি এখন কমে আসছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির মধ্যে এক সপ্তাহের মধ্যে দুইবার ডুবল সিলেট নগর।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারনে কিছুক্ষন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিলো। তবে সকাল হওয়ার আগেই পানি নেমে গেছে।