যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের আলোচনা : বঙ্গবন্ধুকে হত্যা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করার জন্যে—কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ আগস্ট ২০২১, ২:১৪:৩৫ অপরাহ্ন
মুহিব উদ্দিন চৌধুরী, লন্ডন : ‘পাকিস্তানের দালাল ঘাতকেরা সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল ১৫ আগস্ট। ওরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করার জন্যে। ওরা জনবিচ্ছিন্ন ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই তারা যেসব কর্মসূচী, যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল তাতেই স্পষ্ট হয়েছিল তারা পাকিস্তানের ধারায় বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা গণমূখী ছিল না।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ‘মুজিব অবিনশ্বর: ১৫ই আগস্ট বাঙালির ঘুরে দাঁড়াবার শপথের দিন’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
১৫ আগস্ট ২০২১ তারিখে ইউকে সময় দুপুর ১২টায় শুরু হয় এ আলোচনা সভা।
সভায় স্বাগত বক্তব্যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ১৫ আগস্টে শহীদ হওয়া জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আলোচনা শুরুর আবেদন জানান।
ভার্চ্যুয়াল এ সভায় বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি এ দিনের সকল শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। অতীতের সেই সিরাজের বাংলায় শাসকেরা বাংলায় কথা বলতেন না, সেই বাংলার শাসকেরা উর্দু ফার্সিতে কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধুই দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে একটি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের দালাল ঘাতকেরা সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল ১৫ আগস্ট। ওরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করার জন্যে। ওরা জনবিচ্ছিন্ন ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই তারা যেসব কর্মসূচী, যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল তাতেই স্পষ্ট হয়েছিল তারা পাকিস্তানের ধারায় বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা গণমূখী ছিল না।
তিনি বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানের বর্বরোচিত কাজের চিত্র লন্ডনের জনসমাগমস্থলে এখনও তুলে ধরতে পারি। বিদেশী গণমাধ্যমে আমরা কিছু খরচ দিয়ে হলেও এসব আনা দরকার। আমি শ্রদ্ধেয় সুলতান মাহমুদ শরীফ ভাইকে অনুরোধ করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি অবগত করবো।
কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জাতির পিতা হত্যার বিচার করেছেন। আমরা কিছুটা হলেও কালিমা মোচন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। আমরা ক্ষুধার্ত ছিলাম। আমরা দেশে দেশে ভিক্ষা করতাম। এখন ভিক্ষা করা লাগে না। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের কৃষিতে সাফল্য এসেছে। আমরা বাংলাদেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির দেশ হিসাবে গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।
পরে আরেকজন বিশেষ অতিথি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আব্দুর রহমান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আজকের এ দিনে বহু আন্দোলনে মহানায়ক, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের বন্ধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৫ আগস্ট এলে আমরা নিথর হয়ে পড়ি, আমাদের মনে হয় আমরা সব হারিয়েছি। তিনি বলেন, ঘাতকরা জানতো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে এই দেশের স্বাধীনতাকে হত্যা করা যাবে। আমাদের মানচিত্র মুছে ফেলা সম্ভব হবে। তাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়া হয়।
‘মুজিব অবিনশ্বর’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় পরে আরেক বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আজ শোকের দিন কেবল আমাদের জন্য নয়, এ শোক বিশ্বের বিবেকবান মানুষের শোকের দিন। তিনি বলেন, সহস্র বছর পরেও বাংলাদেশ থাকলে এ শোকের দিন ফিরে আসবে। আজ আমরা সবাই সংযুক্ত হয়েছি শোককে শক্তিতে পরিণত করতে। আজ আমাদের শপথের দিন, ঘুরে দাঁড়াবার দিন। তিনি বলেন, পৃথিবীর বহু বড় নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা যদি জুলিয়াস সিজার থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু পর্যন্ত সব হত্যাকান্ড দেখি, যে নির্মমতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে ছিল, সেরকম দ্বিতীয়টি আর নেই। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু সেই গ্রিক মিথলজির ফিনিক্স পাখি, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নেই।
ভার্চ্যুয়াল এ আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। তিনি জানান, আজকের শোক দিবস উপলক্ষে বাদ মাগরিব ব্রিকলেন জামে মসজিদে দোয়া করা হবে শহীদদের জন্যে।
সবশেষে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ’৭৫ সালে আমরা সরকারে ছিলাম। তখন প্রশাসন ছিল, সেনাবাহিনী ছিল, কিন্তু ১৫ আগস্ট কী দেখলাম, তারা যে কারণেই হোক খুনীদের সহযোগী হয়ে গিয়েছিল। তারা বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করে নি। তারা গণতন্ত্র সমাজন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতার দর্শন ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে গিয়েছিল। তাদের অপরাধের শাস্তি বিধান করা উচিত। তিনি বলেন, সেরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয় সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল এ আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।