১৯৭১-এর চেতনা: নেতৃত্বের প্রত্যাবর্তন অপরিহার্য
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩১:৩১ অপরাহ্ন
মতিউর রহমান
জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি মোকাবেলায় শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। গত আট মাসে বাংলাদেশ একটি সূক্ষ্মভাবে পরিচালিত গোপন ইসলামী জিহাদি অভ্যুত্থানের চিত্র দেখেছে। এই ষড়যন্ত্রের আওতায় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জীবন রক্ষার্থে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অসাংবিধানিক সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক চরিত্রই বদলে দিতে শুরু করেছে। একটি ইসলামী জিহাদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় বাংলাদেশের উদার গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তি পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ড. ইউনুসের সরকার উদার গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বহু রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বাড়ি, দলীয় কার্যালয়, ব্যবসা ও কারখানায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর চালানো হয়েছে।অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন, এবং আরও হাজার হাজার কারাগারে বন্দি রয়েছেন। ভয় ও সন্ত্রাসের একটি আবহ দেশকে গ্রাস করেছে যে পরিস্থিতি ড. ইউনুসের সরকারের বিরোধীদের আত্মগোপন বা নির্বাসনে যেতে বাধ্য করছে।
এই সরকার তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। উপেক্ষা করা হচ্ছে আইনানুগ প্রক্রিয়া ও প্রাথমিক তদন্ত। প্রভাবিত আদালতের মাধ্যমে প্রহসনের বিচারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় প্রদান করা হচ্ছে।
এই সরকার দ্রুত একটি মৌলবাদী ইসলামী জিহাদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে, ইতোমধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত বাংলাদেশের জন্য একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশকে চরমপন্থী শক্তির আঞ্চলিক ঘাঁটিতে পরিণত করতে পারে এবং তা হলে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য তৈরি হবে একটি বড় হুমকি।
এই গুরুতর জাতীয় সংকটে দায়িত্বশীল ও জনমুখী রাজনৈতিক শক্তিগুলো চরম নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। শেখ হাসিনা এখনো দেশের বাইরে, এবং তার দলের নেতারা কেউ আত্মগোপনে, কেউবা নির্বাসনে রয়েছেন। অন্যান্য প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ নেতৃবৃন্দ – যেমন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন – কারাবন্দি রয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)ও নেতৃত্ব সংকটে রয়েছে। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে, আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বহুদিন ধরেই বিদেশে অবস্থান করছেন। সরকার তাদের প্রত্যাবর্তনে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠলেও দলটি এখনো তাদের ফিরে আসা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি।
নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি বিএনপির দাবি ড. ইউনুসের সরকার আওয়ামী লীগের সঙ্গে একত্রে একটি দ্বৈত রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখছে, ফলে তারা তাদের অনির্বাচিত শাসন দীর্ঘায়িত করতে এবং রাজনৈতিক দল ও নেতাদের হেয় করার চেষ্টা করছে।
এই প্রেক্ষাপটে, দায়িত্বশীল, জনমুখী ও সাহসী নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গ্রহণ ও প্রত্যাবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ তার দ্রুত প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে।
তার প্রত্যাবর্তনের তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি একাধিক প্রভাব থাকবে:
১. সাহস ও বৈধতা প্রদর্শন: শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন প্রমাণ করবে যে তার দেশত্যাগ ছিল মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের হুমকি থেকে জীবন রক্ষার জন্য একটি সাময়িক কৌশলগত সিদ্ধান্ত। গত আট মাসের ঘটনাবলী তথাকথিত জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের উদ্যোক্তাদের জনসমর্থন ও বৈধতার অভাব প্রকাশ করেছে এবং একাধিক ঘটনাক্রম প্রমাণ করেছে যে, জুলাই-আগস্টের তথাকথিত অভ্যুত্থানের আয়োজকদের কোনো উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন বা শক্তি নেই। তারা ধূর্ততার সঙ্গে সরকারবিরোধী সুযোগসন্ধানী দলগুলোর সহায়তায় ছাত্রদের সংগঠিত করেছে। সম্প্রতি তারা একটি রাজনৈতিক দলও গঠন করেছে, কিন্তু ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণ তাদের গ্রহণ করেনি। ফলে এখন আর শেখ হাসিনার ওপর জনরোষের হামলার আশঙ্কা নেই। এই অপতৎপরতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেভাবে প্রকাশ্যভাবে সহায়তা করেছে, তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা যদি বাংলাদেশে ফেরেন, তাহলে রাষ্ট্র-সরকার-প্রশাসনের ওপর তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব বর্তাবে।
২.অপপ্রচার মোকাবিলা: শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি নিয়ে যেসব ডানপন্থী শক্তি মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পাবে এবং জনমত প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। প্রমাণিত হবে ডঃ ইউনুস বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা এবং চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন|
৩. রাজনৈতিক প্রতিরোধকে অনুপ্রাণিত করা: তার প্রত্যাবর্তন ড. ইউনুসের সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ ও হতাশ হাজারো রাজনৈতিক নেতা, কর্মী এবং সাধারণ জনগণকে উৎসাহিত করবে এবং ব্যাপক ও সংগঠিত প্রতিরোধ সৃষ্টি করবে।
৪. বিচার বিভাগের অন্যায়কে চ্যালেঞ্জ করা: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচার ও তথাকথিত প্রহসনের আদালতের মুখোমুখি হয়ে শেখ হাসিনা সরকারের সাজানো বিচার প্রক্রিয়ার অসারতা উন্মোচন করবেন।
৫. মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণ: তার নেতৃত্ব জনগণ, সরকারি কর্মকর্তা এবং ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করবে।
“আজ নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যে, ছাত্রছাত্রীদের কোটা আন্দোলনকে কৌশলে অপহরণ করে ড. ইউনুস তার ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধি ও দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের বিপজ্জনক এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।”
৬. রাজনৈতিক ভারসাম্য ও সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা: শেখ হাসিনার উপস্থিতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে তার ও তার দলের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে এবং তাকে বাদ দিয়ে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি মুক্ত থাকুন বা বন্দি, তার উপস্থিতি দেশব্যাপী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে।
মনে করা প্রয়োজন যে, ২০০৭–২০০৮ সালের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়, শেখ হাসিনা প্রাণঘাতী ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং সফলভাবে দেশকে সামরিক শাসনের হাত থেকে উদ্ধার করে সাংবিধানিক ও উদার গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তার সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফলভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করে, দেশকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কের ঘাঁটিতে পরিণত করার অপচেষ্টা প্রতিহত করে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
অতএব,, বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ ও উদার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠা, শান্তি ও জাতীয় উন্নয়ন পুনরুদ্ধার, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকির মোকাবেলা এবং জাতির সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সভাপতি এবং জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক ও অপরিহার্য প্রত্যাবর্তনের কোনো বিকল্প নেই।
এটি জোর দিয়ে বলা প্রয়োজন যে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় প্রত্যাবর্তন শুধুমাত্র ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চেয়েও অনেক বড় গুরুত্ব বহন করে।
বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ-উদার ভিত্তি রক্ষায় এবং দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে জাতি তার নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে।




