চব্বিশ ঘণ্টা ওয়াইফাই চালু থাকলে যেসব ক্ষতি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯:৪০:২১ অপরাহ্ন
অনুপম স্বাস্থ্য ডেস্ক: ওয়াইফাই থেকে যে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বের হয়, তাতে মাথায় প্রভাব ফেলে । বিশেষজ্ঞদের মতে, যে ঘরে রাউটার আছে সেই ঘরে দীর্ঘক্ষণ থাকলে মাথা ব্যাথার মতো সমস্যা দেখা দিতে থাকে । পরে সেই সমস্যা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাউটার ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকেই কিছু ভুল করে থাকেন ৷ এই ওয়াই-ফাই চালানোর ক্ষেত্রে এমন কিছু ভুল করে বসেন যা আপনাকে আপসোস করতে হতে পারে ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি সারাক্ষণ চালিয়ে রাখা শরীরের জন্য ভীষণভাবে ক্ষতিকর ৷
সাধারণত একটি ওয়াইফাই রাউটার যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা রাত ওয়াইফাই রাউটার চালু রাখলে কয়েক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, “এই ওয়াইফাই ব্যবহারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দু’ভাবেই হয়ে থাকে ৷ মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার থেকে রেডিয়েশন থেকে যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি ওয়াইফাই থেকেও নির্গত রেডিয়েশন শরীরে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে ৷ তাই এটি বেশিক্ষণ চালিয়ে রাখা উচিত নয় ৷”
মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব: বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঘুমানোর জায়গার কাছে রাউটার থাকলে মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে । এটি অনিদ্রা, ক্লান্তি এবং মাইগ্রেনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করারও পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই ঘুমানোর সময় ওয়াইফাই রাউটার বন্ধ করতে বলা হয়।
‘জার্নাল অফ এপিডেমিওলজি’ (Journal of Epidemiology)-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় জানা যায়, যারা রাউটারের কাছাকাছি ঘুমান তাদের মধ্যে মাইগ্রেনের সম্ভাবনা 40 শতাংশ বেশি । ইতালির তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মার্কো ডি পোর্টিও এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ।
গ্যাসের-অম্বল থেকে রক্ষা পেতে দুধ কখন পান করবেন ? জেনে নিন চিকিৎসকের মতামত
আলঝেইমার্স: সারারাত রাউটার চালু রাখলে ক্যানসার, স্নায়বিক সমস্যা ও প্রজনন সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে । ফলে অ্যালঝাইমার্সের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে ।
এই টিপসগুলি মেনে চললে নিরাপদ থাকবে: স্বাস্থ্য সমস্যা ছাড়াও সারা রাত ওয়াইফাই চালু রাখলে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যাও হতে পারে বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওয়াইফাই রাউটারটি ঘর থেকে কিছুটা দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় ৷
রেডিয়েশনের প্রভাব থেকে দূরে থাকতে ঘরের কোনায় রাউটার বসাতে হবে।
স্মার্টফোন থেকে শুরু করে আইপ্যাড ও স্মার্ট টিভি সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে ।
এছাড়াও আরও একটি কারণ রয়েছে। সারা রাত ব্যবহার না করলেও সেটি চলতে থাকছে । এতে বিদ্যুৎ বিলও অনেক বেশি আসে । যদি বিদ্যুৎ বিল বাঁচাতে চান, তাহলে রাতে রাউটারটি বন্ধ রাখতেই পারেন।
মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোন এখন অপরিহার্য একটি উপাদান। দিনের কোনও না কোনও সময় এটি আমরা ব্যবহার করে থাকি। তবে মোবাইল ফোন আমাদের উপকারের পাশাপাশি মারাত্মক ক্ষতিও করে থাকে এ থেকে নির্গত রেডিয়েশনের মাধ্যমে। মোবাইলে কল করার সময় অর্থাৎ ওপাশে রিং বাজার সময়ই ক্ষতিকর এই রেডিয়েশন নির্গত হয় অনেক বেশি।
তাই, আসুন জেনে নিই কিভাবে আমরা এই ভয়ঙ্কর মোবাইল রেডিয়েশনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারি।
কল রিসিভ করার পর মোবাইল ফোন কানের কাছে আনুন। কথা বলার সময় সম্ভব হলে হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করুন। তাতে রেডিয়েশনের ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও বাঁচা যাবে। হাঁটতে হাঁটতে ফোনে কথা বলবেন না। দুর্বল নেটওয়ার্কে রেডিয়েশন বেশি নির্গত হয়। এ সময় কথা সংক্ষিপ্ত করুন।
ঘুমের সময় মোবাইল ফোন মাথার কাছে রাখলে তা ঘুমের পরিমাণ ও গভীরতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন রান্নাঘরে (চুলা থেকে দূরে) বা অন্য কোনও দূরত্বে রাখুন।
গাড়িতে বসা অবস্থায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার সীমিত করুন। গাড়ির ভেতরে রেডিয়েশন শিল্ড থাকায় ফোনসেটটি রেডিয়েশনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। সময়মতো জেগে ওঠার সুবিধার্থে পারতপক্ষে মোবাইল ফোনে নয়, ঘড়িতে অ্যালার্ম দিন।
অন্ধকারে স্ক্রিনের আলো শুধু চোখের ক্ষতিই করে না; ঘুমের জন্যে প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণেও বাধা দেয়। তাই অন্ধকারে এ যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করুন। আর রাতে ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিরত থাকুন।
স্মার্টফোনের বিভিন্ন সার্ভিস যেমন- ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস, ইন্টারনেট সংযোগ ইত্যাদি প্রয়োজন শেষ হলে অফ রাখুন। এগুলোর রেডিয়েশন দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেইসাথে আপনার ব্যক্তিগত অনেক তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যেতে পারে প্রযুক্তি মাফিয়াদের কাছে।
শোবার ঘরে ওয়াইফাই রাউটার রাখবেন না। রাত ১১টায় রাউটার বন্ধ করে দিন। ফোন শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। মোবাইল টাওয়ার থেকে যতটা সম্ভব দূরে বাসা নিন।
নিজ বাসভবনে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করতে দেবেন না। এতে সামান্য আর্থিক ক্ষতি হলেও রক্ষা পাবে আপনার পরিবার ও প্রতিবেশীদের অমূল্য স্বাস্থ্য।