কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ৩:২১:২৮ অপরাহ্ন
শাওন মাহমুদ: বস্তুজগৎ অণু-পরমাণু দিয়ে তৈরি। অণু-পরমাণু ভাঙলে পাওয়া যায় ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন। এগুলো আরও ছোট কণা দিয়ে তৈরি। যা কোয়ার্ক নামে পরিচিত।
সবকিছুই মূলত কণা। কিন্তু এই কণা আসলে কী? গতিপ্রকৃতি কেমন?— এ নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা।
এই ধোঁয়াশা কাটাতেই পল ডিরাক কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি বা ক্ষেত্র তত্ত্বের জন্ম দেন। এই তত্ত্ব বলে— পুরো মহাবিশ্ব জুড়ে অনেকগুলো ক্ষেত্র ছড়িয়ে আছে।
টানটান বিছানা চাদরের মতো। ইলেকট্রন, প্রোটন হলো সেই বিছানার চাদরে ছোট ছোট কম্পন বা ঢেউ। এদের কি নির্দিষ্ট কোনো রং, বর্ণ আছে! না, ইলেকট্রনের রং বলতে কিছুই নেই। কম্পনের কোনো রং হয় না।
মহাবিশ্বের আলাদা কোনো অস্তিত্ব নেই। ক্ষেত্রগুলোর সম্মিলিত অবস্থাই মহাবিশ্ব। এগুলোকে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র বলে। সকল মৌলিক কণা এদের নিজ ক্ষেত্রে সৃষ্ট কম্পন ছাড়া আর কিছুই নয়। যেমন, কোয়ার্ক হলো কোয়ার্ক-ক্ষেত্রে কম্পন, হিগস-বোসন হলো হিগস-ক্ষেত্রে কম্পন।
অর্থাৎ কণা বলতে বিন্দুর মতো যে বস্তুটির কথা আমাদের মাথায় আসে, বাস্তবতা সেটি নয়। প্রশ্ন করা যেতে পারে— ইলেকট্রন তো ভরশূন্য নয়। ইলেকট্রনের ভর ৯.১x১০-৩১ কিলোগ্রাম। কম্পনের ভর থাকে কী করে?
এখানে একটা মজার বিষয় আছে। আমরা যে ভর অনুভব করি, তা আসে হিগস ক্ষেত্র থেকে। মহাবিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা ক্ষেত্রগুলো একে অন্যের সাথে মিশে আছে। অনেকটা দুই প্রকার স্যুপ এক পাত্রে মিশে থাকার মতো। ইলেকট্রন-কম্পন যখন ঘন হিগস স্যুপের ভেতর চলাচল করে, এর গতি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। সেই বাধাই আমরা ভর হিসেবে অনুভব করি।
কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব থেকেই স্ট্যান্ডার্ড মডেলের উদ্ভব। স্ট্যান্ডার্ড বা আদর্শ মডেল হলো কণাপদার্থবিজ্ঞানের একটা পর্যায় সারণি। যেখানে বস্তুকণা ও বলের বাহক কণাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
কণার দ্বৈত চরিত্রের সঠিক ব্যাখ্যা দেয় ক্ষেত্র তত্ত্ব। সেইসাথে পল ডিরাকের অন্যতম অবদান— প্রতিপদার্থ বা অ্যান্টিম্যাটারের আধুনিক ধারণাও এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া।
মহাজগতের সকল কণা ও শক্তি মূলত নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কম্পন ছাড়া আর কিছুই নয়। এই তত্ত্বকে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব বলা হয়।
প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের মধ্যে তিনটিই ক্ষেত্র তত্ত্ব মেনে চলে। ব্যতিক্রম কেবল মহাকর্ষ বল। মহাবিশ্বের চার ভাগের তিনভাগ এই তত্ত্ব দিয়ে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। তারপরেও বিগ ব্যাং, সিঙ্গুলারিটি, ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জির মতো কিছু বিষয় অমীমাংসিতই থেকে যায়।
তবে পদার্থবিজ্ঞানীরা থেমে নেই। তাঁরা চেষ্টা করছেন কীভাবে এই তত্ত্বের সাথে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মেলবন্ধন ঘটিয়ে একটা সর্বজনীন তত্ত্ব দাঁড় করানো যায়। যাকে বলা হবে ‘থিওরি অব এভরিথিং’। (কালের কণ্ঠের সৌজন্যে)