এডিএইচডি শিশুদের চঞ্চলতা কমানোর ১০ উপায়
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২১:৫৬ অপরাহ্ন
অনুপম স্বাস্থ্য ডেস্ক: সকল এডিএইচডি (attention deficit hyperactivity disorder) শিশু চঞ্চল নয়। কিন্তু যারা চঞ্চল, তাদের একদণ্ড বসিয়ে রাখা যায় না। তাদের এই ক্রমাগত ছুটাছুটি বাবা-মাকে একসময় হতাশ করে ফেলে, আবার স্কুলে টিচাররাও তাদের জন্যে ক্লাস ব্যবস্থাপনায় সমস্যায় পড়েন। কিন্তু এ শিশুরা শুধু শারীরিকভাবেই চঞ্চল নয়, তাদের মস্তিস্কও একইরকম কর্মব্যস্ত থাকে।
তাদের চিন্তাধারার কোনো সুনির্দিষ্ট ট্র্যাক থাকে না- এই এখন এদিকে মন, পরক্ষণেই অন্য কিছু নিয়ে ভাবনা।
এ ধরনের শিশুদের ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে তাদের চঞ্চলতা কমানো। তাদের বাহ্যিক এবং মানসিক চঞ্চলতা কমানো সম্ভব হলেই তখন তাদেরকে উদ্দিষ্ট কাজে মনোনিবেশ করানো সহজতর হবে।
সংশ্লিষ্ট বাবা-মায়েরা এডিএইচডি শিশুদের চঞ্চলতা হ্রাসের জন্য চেষ্টা করে দেখতে পারেন- এমন দশটি পদ্ধতির কথা এখানে বলা হলো-
ভালো ব্রেকফাস্ট : যদি স্কুলের টিচার আপনাদের জানায় যে আপনার সন্তান ক্লাসে গিয়ে নিজের আসনে বসতে চায় না এবং কেবল ছুটাছুটি করে তাহলে তার সকালের ব্রেকফাস্টের দিকে মনোযোগ দিন। ক্ষুধাবোধ চঞ্চলতা বাড়ায়। স্কুলে যাবার আগে তার ভরপেট স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট নিশ্চিত করুন।
যোগ ব্যায়াম/মেডিটেশন : মেডিটেশন বা যোগ ব্যায়াম বা ডিপ ব্রিদিং- এসব বিষয় মন শান্ত করা ও নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা চর্চার জন্য খুব ভালো কাজে দেয়। এ চর্চাগুলো মনোস্থির করে এবং একইসঙ্গে শারীরিক অস্থির নড়াচড়াকেও নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়ক। আপনার এডিএইচডি সন্তানকে এসব রিলাক্সেশন টেকনিক কিভাবে শেখানো যাবে, তা এতদবিষয়ে দক্ষ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করুন।
হেঁটে আসতে বলুন : বাসায় তার চঞ্চলতা বেশি দেখলে তাকে বাইরে হেঁটে আসতে বা একটু ঘুরে আসতে বলুন। বাইরে হেঁটে আসা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে স্থির করবে এবং সেটি তার জন্যে ব্যায়ামের কাজও করবে। ঘরের বাইরে ঘুরে আসা এবং ব্যায়াম এডিএইচডি শিশুদের চঞ্চলতা হ্রাসে সহায়ক। আর যদি আপনার সন্তান ছোট হয় এবং বাইরে একা হেঁটে আসার উপযোগী না হয়, তবে তার জন্যে দিনব্যাপী কিছু অ্যাকটিভিটি প্ল্যান করুন।
বোরডোম বক্স (BoredomBox) : শিশুকে আকর্ষণ করে এমন কোনো কাজ না থাকলেই সে অস্থির চঞ্চল হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই তার জন্যে একটি Boredom বক্স তৈরি করুন। এ বাক্সে সে যে সব জিনিষ পছন্দ করে সেসব রাখতে পারেন। একই সাথে যেসব জিনিস পেলে সে সময় কাটাতে পারে, যেমন ছবি আঁকার সরঞ্জাম, লেগো সেট, তার পছন্দের কোনো পোশাক ইত্যাদি। মাঝে মাঝে এ বাক্সের জিনিসপত্র পালটে নিন, যাতে সে এটি নিয়েও একঘেয়েমিতে না পড়ে। অন্যান্য সময়ে বাক্সটি চোখের আড়ালে রাখবেন, শুধু প্রয়োজনের সময় সেটি বের করুন।
দৈনন্দিন রুটিন : এডিএইচডি শিশুরা দৈনিক সময়ভিত্তিক রুটিনের মধ্যে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই আপনার এডিএইচডি শিশুর রুটিনটি এমনভাবে করবেন যাতে সে ধারাবাহিকভাবে কিছু একটিভিটিতে ব্যস্ত থাকে।
মিউজিকের ব্যবহার : সফট মিউজিক কিছু কিছু শিশুর ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজে দেয়। হালকা সুর তাদেরকে শান্ত করে তোলে। আপনি বিভিন্ন ধরনের মিউজিক দিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে ঠিক কোন মিউজিক তাকে শান্ত করে, তা নির্ধারণ করতে পারেন। তাকে ঘুম পাড়ানোর সময়, হোমওয়ার্ক করানোর সময় বা খাবারের সময় তার চাঞ্চল্য কমানোর লক্ষ্যে ব্যাকগ্রাউন্ডে হালকা মিউজিক চালিয়ে রাখতে পারেন।
শান্ত এলাকা বা Quiet Time এরিয়া : বাসায় আপনার সন্তানের জন্য একটি Quiet Time এরিয়া তৈরি করুন। সেখানে তার জন্য কিছু বই, পাজল, কালারিং বুক রাখতে পারেন। আপনার অতি চঞ্চল শিশুটি যেন সেখানে গিয়ে শান্তভাবে সময় কাটানোর কিছু উপকরণ পায়, এমন আয়োজন রাখুন।
প্রতিদিন ব্যায়াম : আপনার শিশুর দৈনন্দিন রুটিনে ব্যায়াম যুক্ত করুন। প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট তাকে ব্যায়াম করানোর চেষ্টা করুন। এটি দিনভর তার চঞ্চলতা হ্রাস করবে, তার মধ্যে হতাশাবোধ এবং উদ্বেগ থাকলে সেটিও ব্যায়ামের মাধ্যমে নিরসন হয়। এমনকি শীতের সময় বা বৃষ্টির দিন হলেও এই ব্যায়ামের রুটিনটি ইনডোরে হলেও বজায় রাখার চেষ্টা করুন। একইসঙ্গে ব্যায়ামের অধ্যায়টি যেন তার কাছে আনন্দদায়ক হয়, সেদিকে লক্ষ রাখুন।
নিজে শান্ত থাকুন : শিশুরা আপনার আচরণ অনুসরণ করে। আপনি যদি তাদের সাথে অস্থির বা রাগ বা হতাশ আচরণ করেন, তাদের হাইপার্যাক্টিভিটি আচরণে এর প্রভাব পড়তে পারে। সন্তানের আচরণে যদি একান্তই আপনি রেগে যান তবে সাময়িকভাবে অন্য রুমে চলে যান, নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। এ সময় সন্তানের সাথে কথা বলার সময় নিজের গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন।
ছুটাছুটির বিকল্প হিসেবে স্থির বসিয়ে রাখা : যে এডিএইচডি শিশুটি বসতেই চায়না এবং চাঞ্চল্য কখনোই থামেনা, তাকে এক জায়গায় বসিয়ে রেখে তার Energy Release এর পদ্ধতি বের করুন, যাতে সে স্বীয় চাঞ্চল্যসহ বসে থেকে অন্য কাউকে বিরক্ত না করে। এ ক্ষেত্রে তাকে তার হাতে স্ট্রেস বল বা অন্য কোনো কিছু ধরিয়ে এক জায়গায় বসিয়ে রাখতে পারেন, যাতে সে সেটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চিউয়িং গামও এ ক্ষেত্রে অনেক সময় ভালো কাজে দেয়, যদিও তা স্কুলের ক্লাসরুমে বর্জনীয়।
এডিএইচডি শিশুদের হাইপার্যাক্টিভিটি যদিও কিছু পরিস্থিতিতে অসংযত আচরণ বলে স্বীকৃত, কিন্তু একটি কথা মনে রাখবেন এই অতিচঞ্চলতার কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। এসব শিশুদের ক্রমাগত চঞ্চলতার পাশাপাশি তাদের Endless Energy একটি বিস্ময়ের ব্যাপার। আপনার এডিএইচডি শিশুর চঞ্চলতাকে পরিহার করিয়ে তার Endless Energy কিভাবে তার জীবনে ইতিবাচক সাফল্যের সোপান বানাবেন সে ব্যাপারটি গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখতে পারেন।