সরকারি প্রতিষ্ঠানে ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৪:৫৬ অপরাহ্ন
মেট্রো রেলস্টেশন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস
অনুপম নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে মিরপুর-১০ নম্বরে মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শনে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেছেন ‘দেশের জনগণকে তাদের (দেশব্যাপী তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের) বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায় বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার মত আমার আর কোন ভাষা নেই।’ তিনি সারাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন। বাসস
এছাড়াও তিনি দেশবাসীর প্রতি যারা ১৭ জুলাই থেকে একাধিক দিন ধরে তা-ব চালিয়েছে এবং তাঁর সরকারের জনজীবনকে সহজ এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করতে গত ১৫ বছরে নির্মিত সরকারি স্থাপনায় কোটা আন্দেলনকে পুঁজি করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের প্রতিহত করারও আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, এই মেট্রো রেল করবার সময়ও অনেক বাধা-বিঘ্ন আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছিল। সব বাধা বিঘœ অতিক্রম করে এই মেট্রো রেল আমরা করে দিয়েছি এবং সময়ের আগেই আমরা করতে পেরেছি। আজ মেট্রো রেল বন্ধ কারণ, এই ষ্টেশন সেভাবে ধ্বংস হয়েছে যেটা সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক সিষ্টেম, সম্পূর্ণ মডার্ণ। এটাতো কতদিনে ঠিক হবে আমি জানি না। কস্ট পাবে কিন্তু মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী মেট্রো রেল ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এতে আপনারাই কস্ট পাবেন। দেশের মানুষই কস্ট পাবে। এই ঢাকা শহরের মানুষই কষ্ট পাবেন। ঘন্টার পর ঘন্টা আবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকতে হবে। কর্মস্থলে সময়মত পৌঁছানো আবার ফেরত আসায় দীর্ঘ সময় লাগবে, বসে বসে সেই ট্রাফিক জ্যামে কষ্ট পাওয়া থেকে আপনাদের এই কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ‘তাই আমি আপনাদেরকেই বলবো যে কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি সেই কষ্ট আবার যারা সৃষ্টি করলো তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এর বিচার তাদের করতে হবে। আমি তাদের কাছেই বিচার চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, যে সব স্থাপনা মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করে বেছে বেছে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। যারা উন্নয়নবিরোধী এসব কর্মকান্ডে জড়িত তাদের মানসিকতা কোন ধরনের সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
প্রুধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যারা আজ বিদেশে যাচ্ছে, তারা সেই সম্মান পাচ্ছে। আগে সেটা পেত না। ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে আমাদেরকে একটা বঞ্চনার স্বীকার হতে হয়েছে। আজকে সেটা ছিলনা। কিন্তু আমি জানি না এই যে প্রতিটি স্থাপনা তৈরি করেছি যেগুলো মানুষকে সেবা দেয়, তাদের জীবনযাত্রা সহজ করেছে। মানুষের জীবনকে উন্নত করেছে ঠিক সেইগুলো ভেঙ্গে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেওয়া কী ধরনের মানসিকতা।
সরকার প্রধান বলেন, এই মেট্রো রেলে চড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্বিঘ্নে মানুষ যাতায়াত করছে। এই মেট্রো রেলের ওপর কেন এতো আক্রমন? এটাই আমার প্রশ্ন। এই মেট্রো রেল এবং এর ষ্টেশনগুলো যে আমরা তৈরি করেছি এর সার্ভিসসহ সবকিছুই ছিল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। অন্যান্য বহুদেশের তুলনায় একটি আধুনিক দৃশ্যমান সুন্দর একটা মেট্রো রেল আমরা করেছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধ্বংসের চিহ্ন দেখলাম এটা বিশ্বাস হতে চায়না যে এদেশের মানুষ এটা করতে পারে। কিন্তু, সেই কাজই করেছে। আর আমার দুঃখ লাগে ২০১৮ সালে যখন ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলন করলো আমি সাথে সাথে সেটা মেনে নিয়ে কোটা বাতিল করে দিলাম। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে মামলা করা হলো সরকারের জারি করা পরিপত্র হাইকোর্টে বাতিল হলো। সেটার কিরুদ্ধে সরকার আপিল করলো। সেই সময়ে হাইকোর্টের রায়কে স্থিতাবস্থা দিয়ে তারা একটা সময় (সুপ্রিম কোর্ট) দিলেন। এই সময়ের মধ্যে সকলের বক্তব্য শুনে তারা একটা সিদ্ধান্ত দেবেন।
তিনি বলেন, ‘আমি কোটা আন্দোরনকারি থেকে শুরু করে দেশবাসীকে বললাম একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এটাতো সরকার আপিল করেছে, তাদের হতাশ হতে হবে না। সেই আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে বললাম বিরত থাকতে। একটুতো ধৈর্য ধরতে হবে। যে কোন নগারিককেইতো আইন আদালত মেনে চলতে হবে। আর এই এর সুযোগ নিয়ে সেই ১৭ জুলাই থেকে যেভাবে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হলো।’
তিনি বলেন, ’৭৫ এর পর ২৯টি বছর এদেশের মানুষ বঞ্চিত ছিল। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রীজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে গত ১৫ বছরে মানুষের জীবন যাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
তিনি প্রশ্ন করেন এগুলো কাদের জন্য? এই মেট্রো রেলে কি আমি চড়বো? আমাদের সরকার ও মন্ত্রীরা শুধু চড়বে না জনগণ চড়বে, এটা আমার প্রশ্ন। এর উপরকারিতা আপরারা পাচ্ছেন। এদেশের সাধারণ জনগণ পাচ্ছেন। তাহলে এটার ওপর এতো ক্ষোভ কেন? আমরা বার বার অনুরোধ সত্বেও আন্দোলন, কোটাবিরোধী আন্দোলন। আদালতের রায় নিয়েও আমরা বারবার কথা বলেছি, বোঝাতে চেষ্টা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করতেই কাজ করে যাচ্ছি এবং করেছিও। যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কী অবস্থা ছিল? আর আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের একধাপ উচ্চধাপে উঠে গেছে। সেখান থেকে নামাতে হবে কেন? আমার প্রশ্ন সেটাই।
বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। এই অ্যালাইনমেন্টে (মেট্রোরেলের) আমি পরিবর্তন এমনভাবে করে দিয়েছি যাতে দ্রুত সময়ে হয়।
তিনি এটাকে আরো বাড়িয়ে একেবারে মতিঝিল ও কমলাপুর রেলষ্টেশন পর্যন্ত করে দিয়েছেন। যাতে মানুষ আরো সুন্দরভাবে চলতে পারে। যারা এর ওপর আঘাত করলো এই মেট্রো রেল এভাবে ভাংচুর করলো, যেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ চলাচল করতে পারতো অল্প ময়ের মধ্যে। এদেশের মানুষ কত খুশি ছিল। এই আনন্দ যারা নষ্ট করলো, জনগণের নির্বিঘ্নে চলাচলের পথ যারা রুদ্ধ করলো তাদের বিচার এদেশের জনগণকেই করতে হবে। আমি সেই বিচারের দিকে চেয়ে আছি। আমি এর নিন্দা জানানোর ভাষা পাচ্ছিনা।




