স্টারমারের সেই মন্তব্য: দুঃখ প্রকাশ সত্বেও তীব্র সমালোচনার মুখে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুলাই ২০২৪, ৩:১৯:০৬ অপরাহ্ন
লন্ডন অফিস: যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন আর হাতে গোনা ক’দিন পর। বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা স্যার কেইর স্টারমার দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, এ নিয়ে লেবার পার্টি এবং স্টারমার দুঃখ প্রকাশ সত্বেও বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে ক্ষোভ থামছে না। নিজ দল ও বাংলাদেশি কমিউনিটির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। এ ইস্যুতে বিতর্ক চলছে দেশজুড়ে। যুক্তরাজ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসী থাকার পরও বাংলদেশকে তিনি উল্লেখ করা কিছু অর্থ বহন করে বলে বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকেরা মনে করেন।
উল্লেখ্য, আগামী ৪ জুলাই যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে গত সোমবার ডেইলি সান আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্টারমার অবৈধ অভিবাসী হিসেবে উদাহরণ টানতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টানেন। তার এ বক্তব্যে বিপাকে পড়েছেন লেবার পার্টির মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা। নির্বাচনের আগে ঐ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসী নিয়ে স্টারমারের এ বক্তব্য তীব্র ক্ষোভ-সমালোচনা তৈরি করেছে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে। এমনকি এ বক্তব্য দেওয়ার পর নিজ দলের সদস্যদেরও তোপের মুখে পড়েছেন এ নেতা। দলীয় নেতার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় লেবার পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটসের ডেপুটি লিডার ও কাউন্সিলর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবিনা আখতার লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন।
পার্টির বিবৃতি ও স্টারমারের দুঃখ প্রকাশ
টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তীব্র ক্ষোভের মুখে এর ব্যাখ্যা দিয়েছে লেবার পার্টি। বাংলাদেশের সঙ্গে লেবার পার্টির সম্পর্ক তুলে ধরে দলটি জানায়, স্টারমার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এমন মন্তব্য করেননি। বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের দলের সঙ্গে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কমিউনিটির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ও বন্ধুত্বপূর্ণ। স্টারমার নিজেও কয়েক বার বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন উল্লেখ করেছেন। এ বক্তব্যের পর বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের কাছে একটি সাক্ষাত্কার দেন স্টারমার। সেই সাক্ষাত্কারেটি নিয়ে রিপোর্ট করেছে ব্রিটেনের দ্য টেলিগ্রাফ। সাক্ষাত্কারে স্টারমার বলেন, এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমি কাউকে আঘাত করে বক্তব্য দেইনি। যেখানে তিনি আরো বলেন, ‘লেবার পার্টি ও বাংলাদেশিদের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে অনেক সুদৃঢ়। এখানকার বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সঙ্গেও আমার সুসম্পর্ক রয়েছে।’
ওদিকে সান পত্রিকার ঐ শোতে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্টারমার বলেন, ‘আমি মনে করি আগামী দিনে লেবার পার্টি সরকার গঠন করলে বাংলাদেশ ব্রিটেন দুই দেশ একত্রে কাজ করতে পারব। এর ফলে দুই দেশই উপকৃত হবে’। টেলিগ্রাফের ঐ খবরে বলা হয়, নিজ দলের প্রতিনিধি ও নেতাদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পরই ক্ষমা ও ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন স্টারমার। যেখানে তিনি ব্রিটেনের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং এ অবদানের জন্য দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।
বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ক্ষোভ
স্টারমারের সেই মন্তব্যে বাংলাদেশের নাম ব্যবহার হওয়ার কারণে ক্ষোভ বাড়ে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে। এ মন্তব্যের পর সাম্প্রতিক ব্রিটেনের গণমাধ্যমে আলোচনায় ছিল এ সংবাদ। যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশি যে ৩৪ জন লড়ছেন, তাদের মধ্যে লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন আট জন। এর মধ্যে আছেন বর্তমানে এমপি রুশনারা আলি, টিউলিপ সিদ্দিক, রূপা হক ও আফসানা বেগম। ব্রিটেনের গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, স্টারমারের সাম্প্রতিক বক্তব্যে ক্ষুব্ধ কেউ কেউ আবার নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশেষত বাংলাদেশি অধ্যুষিত যেসব এলাকায় বর্তমানে লেবার পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রয়েছেন, সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্টারমারের মঙ্গলবারের বক্তব্য তুলে ধরে নিজেদের পক্ষে ভোটার টানার চেষ্টা করছেন। পদত্যাগ করা টাওয়ার হ্যামলেটের ডেপুটি লিডার সাবিনা আখতার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমি লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছি। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লেবার পার্টির নির্বাচনি প্রার্থী আফসানা বেগমও। টানা চারবার নির্বাচিত এমপি রুশনারা আলি ‘কোনো দেশকে এভাবে এককভাবে বলা ঠিক নয়, এটা ভুল হয়েছে। আমি আমার নেতাদের জানিয়েছি, এভাবে এককভাবে বললে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।’