১৯ সন্তানকে হত্যা করেও টিকল না সাম্রাজ্য
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুন ২০২৪, ৭:০৬:০১ অপরাহ্ন
সারওয়ার চৌধুরী
কনস্টন্টিনোপল দখল করেছিলেন যে-রোমান রাজা তার নাম ছিল কনস্টান্টিন ১ম। তার নামানুসারে ঐ অঞ্চলের নাম কনস্টান্টিনোপল রাখেন। আগের নাম ছিল বাইজেন্টিওন। যার হাত থেকে খোয়া যায় কনস্টান্টিনোপল ও একই সাথে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতন হয় সেই শেষ রাজার নাম কনস্টান্টিন ষষ্ট। তিনি পালাইওলোগোজিড রাজবংশের সন্তান।
কেন দু’জনের নাম কনস্টান্টিন? নামের মর্মার্থ কিছু কি নাই? দু’জন দুই রাজবংশের সন্তান, এক রাজবংশের না। অথচ নাম অভিন্ন।
★
নবি মুহাম্মাদ স: জগতে এলেন নবি ঈসার আ: পরে শেষ নবি হয়ে। ঈসার আ: অনুসারীরা খৃষ্টান। মুহাম্মাদের স: অনুসারীরা মুসলিম। যে-সময়খণ্ডে খৃষ্টান ধর্মের পোপের নির্দেশে ক্রসেড চলছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পরে এক, সেই সময়খণ্ডে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্থান হল। তারা খৃষ্টীয় আগ্রাসন হটিয়ে দিচ্ছিল প্রবল প্রতাপে।
ওসমানীয় সুলতান যিনি কনস্টান্টিনোপল জয় করেছিলেন তাঁর নাম মুহাম্মাদ—সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ। (আল ফাতিহ মানে বিজয়ী, মানে গাজী)। ওসমানীয় সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হলেও সেই আদ্রিয়ানোপোল ও কনস্টান্টিনোপল রিপাবলিক অব টার্কির ভিতর অপরাজিত আছে এখনও।
উল্লেখ্য, কনস্টান্টিনোপলের বর্তমান নাম ইস্তাম্বুল, এমন এক জায়গা, যে-জায়গা সম্পর্কে ফরাসী রাজা নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, ‘যদি পৃথিবী একটি দেশ হতো, কনস্টান্টিনোপল হতো রাজধানী।
★
ওসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ওসমান গাজীর পুত্র ওরহান গাজী বিয়ে করেছিলেন বাইজেন্টাইন প্রিন্স জন ষষ্ট কান্তাকুজেনাসের মেয়ে প্রিন্সেস থিওদোরা কান্তাকুজিনকে। একদিকে তারা পরস্পরের শত্রু, অন্যদিকে জামাই—শশুর মায়ার সম্পর্ক। বিস্ময়করভাবে দুটি সম্পর্ক ফলপ্রসূ হয়েছিল।
জন ষষ্ট ছিলেন গ্রিক বংশোদ্ভূত সজ্জন মানুষ।
১৩৪৬ সালে রাজা জন পঞ্চম পালাইওলোগাস ক্ষমতাচ্যুত করার প্রয়াসে সুলতান ওরহান গাজী প্রকাশ্যে সমর্থন করেন তার শশুর জন ষষ্টকে। পরে যখন শশুর কো-এমপেরোর হলেন, ১৩৪৭-১৩৫৪ সময়খণ্ডে, জন ষষ্ট সুযোগ দিলেন সুলতান ওরহানকে ইউরোপ অংশের গালিপোলি অববাহিকা দখলে নেওয়ার।
সুলতান ওরহানের সাথে জন ষষ্টের আত্মীয়তা এবং আত্মীয়তার সুযোগে ওসমানীয় সাম্রাজ্য ইউরোপে বিস্তৃতি ও পরে সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ কর্তৃক কনস্টান্টিনোপল জয় সহজ হয়েছিল।
এ সম্পর্ক রচনা গভীর অর্থবোধক নয় কি?
★
১৫২০ সালে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী সুলতান সুলাইমান ক্ষমতাসীন হন। একই বছর পোল্যান্ডের এক অর্থডক্স পুরোহিতের ঘরে জন্ম নেন এক মেয়ে, যিনি পরে অপহৃত হয়ে, ক্রিমিয়ার দাস বাজার থেকে ক্রীতদাসী হয়ে সুলতান সুলাইমানের প্রাসাদে আসেন। পরে এই মেয়ে হুররাম হন সুলাইমানের স্ত্রী। পরে প্রধান উপদেষ্টা হয়ে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী হয়ে ওঠেন। এবং সুলতান সুলাইমানের পর পর্যায়ক্রমে পতনের দিকে যেতে থাকে।
★
সুলতান প্রথম বায়েজিদ ইউরোপের দিকে বেপরোয়া গতিতে অগ্রসর হচ্ছিলেন। ক্রুসেডার রাষ্ট্রগুলোর দিশাহারা অবস্থা।
এরিমাঝে মঙ্গোল দিগ্বিজয়ী তাইমুর বেপরোয়া হয়ে উঠলেন বায়েজিদের হাত থেকে আনাতোলিয়া ছিনিয়ে নিতে। ক্রুসেডাররাও তাইমুরকে সমর্থন দিল। কেন?
শেষ পর্যন্ত বায়েজিদের মৃত্যু হল। কিন্তু প্রতিষ্ঠার এক শ বছরের মাথায় ওসমানীয় সাম্রাজ্য ধ্বসে যাওয়ার উপক্রম হলেও, ঘুরে দাঁড়ায় তারা। যেনবা এখনও সময় হয় নি বিলুপ্তির, বিশেষ কাজ বাকী। টিকে থাকলো তারা আরও সোয়া পাঁচ শ বছর। অতঃপর তাদেরও ইতি হল।
★
ওসমানীয় সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ, যিনি কনস্টান্টিনোপল জয় করেছিলেন, যিনি এথেন্স জয় করে একেবারে ইতালির কাছে চলে গিয়েছিলেন। যিনি আয়াসোফিয়াকে মসজিদে রুপান্তর করেছিলেন, যিনি সুলতানদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে, ওসমানীয় সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্যে পরবর্তীতে সুলতান পরিবারের ভিতরে কারে কারে মেরে ফেলতে হবে, এ বিষয়ে কানুনও করেছিলেন।
এ কানুন অনুযায়ী পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসা সুলতান তৃতীয় মুহাম্মাদের ১৯ সন্তান হত্যা করা হয়েছিল।
তবু টিকলো না সাম্রাজ্য।
* ইতিহাসের গুপ্ত রহস্য পাঠ—সারওয়ার চৌধুরী (অপ্রকাশিত বই থেকে)