বিশ্বনাথে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বন্যার্তদের বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে আফিজ মেম্বারের প্রেস ব্রিফিং
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুন ২০২৪, ৩:০০:২২ অপরাহ্ন
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি: সিলেটের বিশ্বনাথে ‘অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে’ সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্তদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন সুমন কর্তৃক জোরপূর্বক বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে রোববার (২৩ জুন) বিকেলে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পৌর শহরের পুরাণ বাজার এলাকার একটি পার্টি সেন্টারে উপজেলার রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার আফিজ আলীর উদ্যোগে ওই প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস ব্রিফিয়ে আফিজ আলী মেম্বার বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্তদের সাথে খারাপ আচরণ করে এবং নিজ হাতে পানির লাইন বন্ধ ও সার্কিট ফেলে বৈদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন সুমন বন্যার্তদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বের করে দিলেন। আর এখন আমার উপর মিথ্যা অভিযোগ তুলে সাধু সাজার বান করছেন। বন্যা পরিস্থিতি প্রকট হওয়ার পূবেই আমি দু’তিন দিন তার অফিসে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বন্যার্তদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে কথা বলে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। যার শতভাগ প্রমাণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পাওয়া যাবে। আর এখন তিনি বলছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বন্যার্তদের আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তাছাড়া এবিষয়ে কিছু না জানলেও এমন বিপদের সময়ে মানুষের সাথে মানুষ কি খারাপ আচরণ করতে পারে?
প্রেস ব্রিফিয়ে আফিজ আলী মেম্বার আরোও বলেন, বন্যার্তরা যখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে আশ্রয় নেন, আমি তখন তাদের সাথে ছিলাম না। তাই তারা (বন্যার্তরা) সেই কক্ষের তালা খোলা পেয়েছেন, নাকি তালা ভেঙ্গে ডুকেছেন আমি জানি না। এবিষয়ের শতভাগ প্রমাণও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পাওয়া যাবে। অথচ তিনি (ডা. সুমন) বলছেন আমি নাকি তালা ভেঙ্গে বন্যার্তদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার মান-সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য তিনি (ডা. সুমন) আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করছেন। বন্যার্তদের উদ্ধার করার জন্য ৯৯৯-এ কল যাচ্ছে, থানা থেকেও আমার কাছে কল গেছে। আমি সাথে সাথে ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় থাকা বন্যার্তদের উদ্ধার ও খোঁজ নেওয়ার কাজে ব্যস্থ ছিলাম সেসময়।
আফিজ মেম্বার বলেন, আমি যখন জানতে পারলাম তিনি (ডা. সুমন) বন্যার্তদের সাথে খারাপ আচরণ করে তাদেরকে (বন্যার্ত) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জোরপূর্বকভাবে বের করে দিতে যাচ্ছেন, তখন সাথে আমি তার কার্যালয়ে গিয়ে তার (ডা. সুমন) একদিনের সময় চাই। তিনি আমাকে তা দেননি, বরং আমাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে কথা বলতে থাকেন। আমি সাথে সাথে বিষয়টি আমাদের স্থানীয় আসনের এমপি এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা আক্তার’সহ উবর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন সুমন আমাকে (আফিজ) বলেন বন্যার্তদের জন্য যে মন্ত্রী ৬০ লাখ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন, আপনি এদের (বন্যার্ত)’কে তাদের কাছে নিয়ে যান। মন্ত্রী আমাদেরকে কি কোন বরাদ্ধ দিয়েছেন, যে আমি তাদেরকে এখানে রাখব। মন্ত্রী চাইলে তো আমাদেরকে ২/৩ লাখ টাকা বরাদ্ধ দিতে পারতেন। এখন ওই ৬০ লাখ টাকাতো চাটুকাররা মেরে খাবে। আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ইউএনও’র সেক্টর নয়, যে উনার সাথে আপনার কথা হয়েছে। উনি প্রয়োজনে আমাকে কল করবেন।
আফিজ মেম্বার আরোও বলেন, আমি নিরুপায় হয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সে চলে আসি ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে এব্যাপার কি করা যায় সিদ্ধান্ত নিতে। তখন তিনি আমার কাছ থেকে সব কথা শুনে বন্যার্তদেরকে শাহজালাল পল্লী পরিষদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র আশ্রয় দেওয়ার কথা বলেন। পরবর্তিতে আমি সেখানে যাওয়ার পূর্বেই ইউএনও মহোদয় সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন। আর উনার উপস্থিতিতেই আমি সেই বন্যার্তদের সেখানে যাওয়ার কথা বলি, তারাও সেখানে চলে যায়। এরপর ইউএনও মহোদয় তখন থেকেই তাদেরকে সরকারি সাহায্য সহযোগীতা প্রদান করে আসছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকদের নানান প্রশ্নের জবাবে আফিজ আলী মেম্বার বলেন, আমার কোন আতœীয়-স্বজন সেখানে আশ্রয় নিতে যাননি। বন্যা একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ, আর ওই সমস্যায় পড়েই মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে গেছেন। এটি কোন সিন্ডিকেটের কাজ হয়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারাইতো সরকারি ঔষধ সাধারণ মানুষকে না দিয়ে বাইরে বিক্রি করছেন। এছাড়া তাদের সিন্ডিকেটই নানান অপরাধের সাথে জড়িত রয়েছেন। আর এখন নিজেরা সাধু সাজার জন্য আমাদের তথা এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন। তাছাড়া উনাকে কোন বন্যার্ত মানুষজন যদি আগে না বলেও নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশ্রয় নেয়, কোন অধিকারে তিনি (ডা. সুমন) তাদেরকে নিরাপত্তা না দিয়ে বিপদের মুখে ফেলবেন। সরকার যেখানে বন্যার্তদের সহযোগীতা করতে শতভাগ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ওই নিরীহ মানুষগুলো যে কক্ষে আশ্রয় নিল নিজ হাতে পানির লাইন বন্ধ করে দিলেন, সার্কিট ফেলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে রাখলেন ডা. দেলোয়ার হোসেন সুমন। উনার ভিতরে কি কোন মানবতাবোধ নেই?