মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা: কাদের
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ৫:৫২:১৪ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন দু-একজন ছাড়া কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। এতে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
নির্দেশনা অমান্য করা এমপি-মন্ত্রী এবং তাদের স্বজনদের তালিকা তৈরি করছেন তারা। ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের রিপোর্টে এ তালিকা তুলে ধরবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান না দেখালে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসাবেই গণ্য করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যারা উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান ছিলেন বা আছেন, তারা প্রিভিলেজ (বিশেষ ছাড়) পাবেন এবং এ সিদ্ধান্তের আওতার বাইরে থাকবেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা। নির্বাচনকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। এ নির্দেশনা না মানাকে দলের নীতিনির্ধারণীর সিদ্ধান্ত অমান্য করা এবং দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ বলেই বিবেচনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত দলীয় নির্দেশনা মেনে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে। তবে শেষ পর্যন্ত দলের নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা বিষয়গুলো সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এ বিষয়ে আমাদের রিপোর্ট (সাংগঠনিক সম্পাদকদের রিপোর্ট) ৩০ এপ্রিল আমাদের দলের সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরবর্তী ধাপের নির্বাচনের মাঠে এমপি-মন্ত্রীর যেসব স্বজন এখনো মাঠে আছেন, তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো নিয়েও আমরা কাজ করছি।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন যুগান্তরকে বলেন, তালিকা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে কার্যনির্বাহী সংসদে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
মূলত উপজেলা পর্যায়ে নিজেদের ক্ষমতার বলয় ধরে রাখতে মরিয়া স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীরা। ফলে শুরু থেকেই নানাভাবে এ নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন তারা। অনেকেই প্রার্থী করেন পরিবারের সদস্য বা নিকটাত্মীয়দের। এমন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর নির্দেশনা দেন এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবে না। এরপর ১৮ এপ্রিল থেকে সারা দেশে মন্ত্রী ও সংসদ-সদস্যদের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরাতে কাজ শুরু করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এক সপ্তাহ নানা মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দেন তারা।
সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়েছে। প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের অন্তত ১৪ জন সংসদ-সদস্যের ১৭ জন স্বজন নির্বাচনের মাঠে আছেন। দলের নির্দেশনার পরও উলটো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এমপি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন এমপি ও সাবেক মন্ত্রীর ছেলে, চাচাতো ভাই, ভাতিজার বউ। এখন সংশ্লিষ্টদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। তবে উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান যারা আবারও প্রার্থী হয়েছেন, তারা এমপি-মন্ত্রীর স্বজন হলেও বিশেষ প্রিভিলেজ পেতে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম যুগান্তরকে বলেন, একজন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন বা আছেন, তিনি আবার প্রার্থী হয়েছেন, তাকে তো আর কারও ভাই বা শ্যালক বলে নির্বাচন থেকে সরানো যায় না। এজন্য তারা এ সিদ্ধান্তের আওতার বাইরে থাকবেন। তারা এ প্রিভিলেজটা পাবেন। তিনি আরও বলেন, তবে এর বাইরে যারা আছেন, তাদের বিষয়ে দলের কঠোর সিদ্ধান্ত আছে। যারা নির্দেশনা উপেক্ষা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, মূলত দুই ধরনের বিষয় সামনে রেখে তালিকা হচ্ছে। প্রথমত, যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব এমপি-মন্ত্রী তাদের স্বজন বা পছন্দের ব্যক্তিদের নির্বাচনের মাঠে রেখেছেন, তাদেরও তালিকা করা হচ্ছে। তবে এ তালিকা তৈরি নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কারণ, স্বজনের সীমা সম্পর্কে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। এছাড়া অনেকেই আছেন যারা আগেও জনপ্রতিনিধি ছিলেন। কেউ কেউ আছেন যারা এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয় হলেও দীর্ঘদিন ধরে দলের পদপদবিতে রয়েছেন।
এবার চার ধাপের ভোটে প্রথম পর্বে ১৫০টি উপজেলায় ভোট হবে ৮ মে। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় এবং ২৯ মে তৃতীয় ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া তফশিল না হলেও ৫ জুন চতুর্থ ধাপের ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রী ও সংসদ-সদস্যদের বিষয়ে দলীয় এ সিদ্ধান্ত উপজেলা নির্বাচনের চার পর্বের জন্যই প্রযোজ্য বলে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার কথা বলা হলেও এমপিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা এবং তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধেই বা কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।