যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত আঘাত করার, ইরান জবাব দিতে প্রস্তুত, সংঘাত অনিবার্য?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৯:০৫:৫৪ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরান তার ভূখণ্ডে হামলার জন্য মার্কিন হুমকির তাৎক্ষণিক জবাব দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান জো বিডেন প্রশাসনকে হুমকির ভাষা ব্যবহার বন্ধ করতে এবং রাজনৈতিক সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আমিরাবদুল্লাহিয়ান নিশ্চিত করেছেন যে সমস্ত হুমকির প্রতি তেহরানের প্রতিক্রিয়া “তাত্ক্ষণিক এবং সুস্পষ্ট হবে,” সরকারি ইরনা সংবাদ সংস্থা আজ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে বলে লিখেছে আশশরকাল আওসাত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার বাইডেন ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি জর্ডানে একটি ড্রোন হামলায় রোববার তিন মার্কিন সেনা সদস্য নিহত হওয়ার পরে বদলা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা “বেশ কয়েকটি” প্রতিশোধমূলক অভিযানের রূপ নিতে পারে।
ওদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে প্রকাশ, জর্ডানে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান সমর্থিত কট্টর জঙ্গি গোষ্ঠী এ হামলা চালিয়েছে।
এখন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানকে পাল্টা ‘জবাব’ দেওয়ার কথা বলেছেন।
এতে করে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবার সরাসরি ইরানে আক্রমণ করবে কিনা। তবে ইরানের ওপর কোনও আক্রমণ করা হলে ইরানও ইতোমধ্যে পাল্টা আক্রমণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
যদিও কয়েক বছর ধরে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি অবশ্য এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে আশাবাদী।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনি বছরের শুরুতে জর্ডানে মার্কিন বাহিনীর ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটল। এর জেরে বাইডেন চাপে পড়েছেন।
যদিও এই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান, এই দুই দেশই জানিয়েছে যে তারা ‘যুদ্ধ’ চায় না।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে টানা হামলা ও ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশ দু’টি ‘সংঘাতের দিকে হাঁটছে’ বলে মনে করছেন পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্লেষকরা।
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী জর্ডানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালানো হয় বলে গত রোববার জানায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড। এ হামলায় ৩ মার্কিন সেনা নিহত হন, আহত হন ৩৪ জন।
হামলার জন্য ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছেন জো বাইডেন। হামলার জবাব খুবই কার্যকর উপায়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে হোয়াইট হাউস।
এই হামলার পেছনে কারা জড়িত সেটি স্পষ্ট না হলেও শুরু থেকেই সেন্ট্রাল কমান্ড ও বাইডেন ইরানকে দায়ী করছে। তবে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের এমন সন্দেহকে নাকচ করে দিয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ড্রোনটি আগে একটি বাসস্থানে পড়ার পর ঘাঁটিতে এসে পড়ে। এটি যদি সরাসরি আঘাত করতো, তাহলে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতো।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে জবাব দেবে, সে বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও পড়ুন—
ভারতের কাছে ৩ বিলিয়ন ডলারের ড্রোন বিক্রি যুক্তরাষ্ট্র আটকে দিলো
৩০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউজে বিস্তারিত না বললেও তিনি এতটুকু বলেন, আমি মনে করি না, মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের ব্যাপক পরিসরে যুদ্ধ করার প্রয়োজন আছে।
ইরান-সমর্থিত এক মিলিশিয়া গ্রুপ মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে এই হামলার দায় স্বীকার করলেও এই ঘটনায় ইরানকে দায়ী করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অর্থে আমি তাদের (ইরান) দায়ী মনে করি যে, যারা এসব করেছে, তাদের তারা অস্ত্র সরবরাহ করছে।
মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চায় যে এই হামলার জবাব দেওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা। উত্তরে তিনি সম্মতিসূচক জবাব দেন, হ্যাঁ।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, তবে এরপরও যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর আক্রমণ করে, তাহলে তেহরানও মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন সম্পত্তির ওপর হামলা চালাবে; মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন এক হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।
ইরান সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে এবং নজর রাখছে যে জর্ডানে মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতিক্রিয়া কী হয়।