ইসির বারণ সভা-সমাবেশে, মানতে চায় না বিএনপি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৮:০২ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশে নির্বাচনী প্রচার ছাড়া সভা-সমাবেশসহ সব রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজনের অনুমতি না দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চিঠি আমলে নিচ্ছে না নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও তাদের মিত্ররা।
তারা মতে, এ চিঠি আমলে নেওয়ার কিছু নেই। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক দমনপীড়নের মধ্য দিয়ে সরকার একটা একতরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছে। এই ডামি নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার অধিকার জনগণের রয়েছে। একদফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বিএনপি ও শরিকরা।
জানা গেছে, বর্তমান বাস্তবতায় দেড় মাস ধরে চলা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিই অব্যাহত রাখবে বিএনপি। এর ফাঁকে ফাঁকে পেশাজীবী ও দলীয় ব্যানারেও নেতাকর্মীদের জমায়েতের কর্মসূচি দিতে পারে। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় দলটি। রাজনৈতিক
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, নির্বাচন নির্বিঘ্নে করতে ইসির এ চিঠির পর সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও কঠোর হবে। এর ফলে বিএনপি আগামীতে কর্মসূচি পালন করতে পারবে কি না, এটা নিয়ে তারা সন্দিহান।
এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা নেই। যে কোনো প্রোগ্রাম করতে গেলে, সভা-সমাবেশ করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে সরকার যেখানে তাদের অনুমতি দেবে, তারা সেখানে করবে। আমাদের বক্তব্য হলো, নির্বাচনে বাধা সংক্রান্ত কোনো সভা-সমাবেশ, আন্দোলন কর্মসূচি থাকলে, সেটা যেন না করতে দেওয়া হয়। কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ করে ইসি চিঠি দেয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের নির্দেশনায় চলমান আন্দোলন দমানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ইসির এ চিঠির উদ্দেশ্য একটাই—বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ন্ত্রণ করা, বিরোধী দলের আন্দোলন দমানোর অপচেষ্টা করা। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে আর তার বশংবদ নির্বাচন কমিশন তাতে শেষ পেরেক ঠুকতে চাচ্ছে।
আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোট গ্রহণ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার ব্যতীত সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজনের অনুমতি না দিতে গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। ইসি বলছে, নির্বাচনী কাজ বাধাগ্রস্ত ও ভোটাররা ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত হতে পারে—এমন আশঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত।
ইসির চিঠি প্রসঙ্গে বিএনপি ও যুগপতের শরিক একাধিক নেতা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে এর আগে বহুবার রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বর্জন করেছে। এরশাদের আমলে, ১৯৯৬ সালে, ২০১৪ সালে এমনটা হয়েছে। তখন এমন কোনোকিছু হয়নি। কেবল সংবিধান স্থগিত থাকলে এ ধরনের সামরিক ফরমান জারি হতে পারে। সুতরাং এমন চিঠি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারবহির্ভূত, সাংবিধানিক বিধানের পুরোপুরি পরিপন্থি। ভোটে অংশ নেওয়া, ভোটের পক্ষে ক্যাম্পেইন করা যেমন নাগরিকের অধিকার; তেমনি একতরফা নির্বাচন, জালিয়াতির ভোটের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার অধিকারও জনগণের রয়েছে। নাগরিকদের এই অধিকার হরণ করার কোনো এখতিয়ার-অধিকার নির্বাচন কমিশনের নেই। নির্বাচন কমিশনের উচিত অবিলম্বে এই চিঠি প্রত্যাহার করা। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোকে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশের অনুমতি না দিতে আইজিপির কাছে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগ।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম মিত্র গণতন্ত্র মঞ্চ। মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, একতরফা-পাতানো নির্বাচনের বিপক্ষে জনমতকে সংগঠিত করার জন্য আন্দোলনের সব গণতান্ত্রিক ফর্ম আমরা অনুসরণ করব। এ ক্ষেত্রে আগামীতে হরতাল-অবরোধের সঙ্গে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি আমাদের বিবেচনায় আছে। এটার সম্পূর্ণ সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রয়েছে। নির্বাচন কমিশন কোনো প্রজ্ঞাপন বা চিঠি দিয়ে রাজনৈতিক দল ও জনগণের এই সাংবিধানিক অধিকার হরণ করতে পারে না।
জানা গেছে, বিএনপি ও যুগপতে থাকা মিত্রদের লক্ষ্য এখন ভোট ঠেকানো। এজন্য ভোটের প্রচার শুরুর দিন থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়কে আন্দোলনের ‘মোক্ষম সময়’ হিসেবে বিবেচনা করছে তারা। এ সময়ে হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ সমাবেশের মতো কর্মসূচি চালু থাকবে। এ ছাড়া নেতাকর্মীদের আত্মগোপন অবস্থা থেকে বাইরে নিয়ে আসতে দলীয় ব্যানারেও জমায়েতের কর্মসূচি দিতে পারে। এর অংশ হিসেবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে উপলক্ষ করে ঢাকায় বড় জমায়েত করতে চায় বিএনপি। ওইদিন রাজধানীতে বিজয় শোভাযাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।