কানাডার ভিসা থাকা সত্বেও সিলেটের ৪২ জনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরতে হল যেকারণে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৫৭:০১ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: নিজেদের একদম সাদা পাসপোর্টে তারা কানাডার ভিসা পেয়েও বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসতে হয়েছে বাড়িতে। পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যথারীতি ইমিগ্রেশনও সম্পন্ন করে বিমানে ঢাকায় পৌঁছেন। কিন্তু ঢাকা থেকে কানাডাগামী বাংলাদেশ বিমানে উঠার সময় ধরা পড়ে জালিয়াতির ঘটনা। ফলে বিমানবন্দর থেকে ফিরতে হয় ৪২ জন সিলেটের যাত্রীকে।
জানা যায়, তারা যে আমন্ত্রণপত্র (ইনভাইটেশন) দিয়ে ভিসা অকে করেছিলেন ওটা ছিল ভুয়া। ৪২ যাত্রীর সবাই কানাডায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণে সে-দেশে যাচ্ছিলেন।
একই বিয়ের আমন্ত্রণপত্র দিয়ে সিলেট থেকে আরও বেশ কয়েকজনকে ভিসা লাগিয়ে কানাডায় পাঠায় একটি সিন্ডিকেট। বিমান কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে যে মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রণ দিয়ে ভিসা অকে হয়েছিল, ওই মেয়ের বিয়ের কোনো অনুষ্ঠানই হচ্ছে না ওখানে।
জানা যায়, কানাডার টরন্টো ও সিলেটের কতিপয় এজেন্সি মিলে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করানোর একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কানাডা থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ভুয়া আমন্ত্রণপত্র (ইনভাইটেশন) তৈরি করে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে তারা প্যাসেঞ্জারদের কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ টাকার চুক্তি করে। ভিসা হলে তারা প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কানাডার টরেন্টোতে একটি ‘কাল্পনিক বিয়ের’ অনুষ্ঠান দেখিয়ে আমন্ত্রণপত্র তৈরি করে। বিয়েতে অংশ নেওয়ার জন্য কাল্পনিক কনে, কনের মা, বাবা, ভাই ও চাচা শতাধিক ব্যক্তিকে আমন্ত্রণপত্র পাঠান। সিন্ডিকেটের সদস্যরা ওই আমন্ত্রণপত্র দিয়ে তাদের চুক্তিকৃত প্যাসেঞ্জারের কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করেন। কাকতালীয়ভাবে বেশিরভাগ আবেদনকারীর ভিসাও হয়ে যায়। যাদের ভিসা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই এর আগে দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে যাননি। মানে, তারা সাদাপাসপোর্টধারী ছিলেন।
ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অক্টোবরের মাঝামাঝি ২৫ জনকে কানাডায় পাঠায়। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে যান আরও ৮ জন। কোনো ধরণের ঝামেলা ছাড়াই তারা কানাডায় পৌঁছায়। কানাডায় পৌঁছেই তারা শরণার্থী দাবি করে কানাডা সরকারের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
দুই দফায় ৩৩ জন নিরাপদে কানাডায় পৌঁছার পর গত ৬ নভেম্বর ওই সিন্ডিকেট ভিসাপ্রাপ্ত আরও ৪২ জনকে কানাডায় পাঠানোর চেষ্টা করে। সহজে ইমিগ্রেশন পার হতে তারা বাংলাদেশ বিমানের সিলেট-ঢাকা-টরেন্টো ফ্লাইটের টিকেট কাটেন। যথারীতি তারা সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে কানেকটিং ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছেন।
ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, ৬ নভেম্বর সোমবার রাতে ওই ৪২ জন ট্রানজিটে অপেক্ষা করার সময় বিমানের পাসপোর্ট চেকিং ইউনিটের সদস্যদের সন্দেহ হয়। তারা দেখতে পান, ওই যাত্রীদের প্রায় সবার সাদা পাসপোর্টে কানাডার ভিসা লাগানো। এতে তাদের সন্দেহ আরও বাড়ে। এসময় বিমান কর্মকর্তারা তাদের আমন্ত্রণপত্র ও হোটেল বুকিং দেখতে চান। তখনই চমকে যান কর্মকর্তারা। তারা দেখতে পান, ওই যাত্রীদের সবাই একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কানাডা যাচ্ছেন। আর হোটেল বুকিংয়ের পরিবর্তে তারা কিছু বাড়ি ভাড়ার কাগজপত্র দেখান।
কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে কিছু যাত্রী জানান, তারা যেহেতু একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন তাই একত্রে থাকার জন্য তারা বাসা ভাড়া নিয়েছেন। আবার যাত্রীদের কেউ কেউ বিমানবন্দরে বসেই হোটেল বুকিং করেন। কানাডায় বিয়েতে অংশ নিতে একসাথে বাংলাদেশ থেকে এতো লোক যাওয়ার বিষয়টিতে খটকা লাগায় বিমান কর্মকর্তারা তাদের ভিসা যাচাইয়ের জন্য সিঙ্গাপুর ও দিল্লিস্থ কানাডার ভিসা অফিসে ইমেইল পাঠান।
যাত্রীদের জানানো হয় যে, কানাডা বর্ডার এজেন্সি নিশ্চিত করার পর তাদেরকে বিমানে উঠানো হবে। নির্ধারিত ফ্লাইট চলে গেলেও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদেরকে হোটেলে রেখে পরে পাঠাবে। কিন্তু পরদিন সকাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ও দিল্লি থেকে কোনো তথ্য না পাওয়ায় বিমান কর্তৃপক্ষ পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন সিল কেটে দিয়ে লাগেজসহ তাদেরকে ফেরত পাঠায় বাড়িতে।