হিমবায়ুর পালকি চড়ে এলো সুমঙ্গলা হেমন্ত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৫:৪৮ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশের প্রকৃতিতে আজ থেকে বিরাজ করছে সুমঙ্গলা হেমন্ত। ঋতুর রানী শরতের প্রস্থানের পরই হিমবায়ুর পালকি চড়ে হালকা কুয়াশার আঁচল টেনে আগমন হয়েছে তার। প্রকৃতিতে ফুটে ওঠেছে সুন্দর রূপবিভা। হরিদ্রাভ সাজবরণ করেছে পত্রপল্লব। কাঁচা সোনার রং লেগেছে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠে।
এ নিয়ামত যে তারই কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। তিনিই আপন কুদরতে শক্ত মাটির বক্ষ চিরে অক্ষতাবস্থায় এ ফসল আর ফলফলাদির ব্যবস্থা করেন। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের জন্য মাটিকে ব্যবহার উপযোগী করে দিয়েছেন…।’ (সূরা মূলক : ১৫)
মুক্তোবিন্দুর মতো স্বচ্ছ শিশির জমছে ঘাসের ডগায়; ধানের শিষের পরে। আদিগন্ত মাঠ জুড়ে এখন ধানের প্রাচুর্য, সবুজ স্বপ্ন দুলছে। হলুদে-সবুজে একাকার নয়নাভিরাম অপরূপ প্রকৃতি। চারদিকে ধূসর আবহ ঘিরে রাখছে। দিবসে সোনা ঝরা রোদ্দুর। অখণ্ড নীল আকাশ। হিম হিম, স্বল্পায়ু দিন ক্রমে ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে, শেষ বিকালে কুয়াশার আবছা চাদর প্রকৃতিকে ঢেকে শিশিরের শব্দের মতো নামছে সন্ধ্যা। নিস্তব্ধ গভীর নিশিথে টুপটাপ শিশির পতনের হিরণ্ময় শব্দ।’ সবুজ পাতার খামের ভেতর/ হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে/কোন পাথারের ওপার থেকে/ আনল ডেকে হেমন্তকে…আজ পয়লা কার্তিক।
আবহমান বাংলায় ষড় ঋতুর পরিক্রমায় এলো হেমন্ত। শরতের পর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্ত। নতুন ঋতুর আগমনে রূপ বদলায় প্রকৃতি। প্রকৃতির ম্লান, ধূসর ও অস্পষ্টতার অনুভূতি হানা দেয় চেতনলোকে। কবির কথায় ‘পুলকে আর বিষাদে ভরা’ থাকে এই ঋতু। হেমন্তকে বলা হয় শীতের বাহন। এই কার্তিকে প্রকৃতিতে প্রগাঢ় সবুজ যেমন পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় শীতের মিষ্টি আমেজ।
হেমন্ত মানেই নব উচ্ছ্বাস, নব সুর, নব শিহরণ। হেমন্তের নবজাগরণে কাননে কাননে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, পদ্ম, হাসনাহেনা, হিমঝুরি, দেবকাঞ্চন, রাজ-অশোকসহ নানা রং ও ঘ্রাণের অসংখ্য জাতের ফুল। সেসব ফুলের পাপড়ি ও গাছের পাতায় পাতায় ভোরের মৃদু শিশিরের স্পর্শ জানিয়ে দেয় শীত আসছে। তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস।
হেমন্তের রূপরসে সবচেয়ে বেশি আপ্লুত হয়ে ওঠেন কবি সাহিত্যিকরা। তাদের যাযাবর মনের অলিগলিতে খেলা করে নিত্যনতুন সৃষ্টি। সেই মধ্য যুগেই হেমন্ত তার আপন রূপমায় বাংলাসাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। মধ্য যুগের কবি কংকন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘কালকেতু’ উপাখ্যানেই প্রথম দেখা মেলে হেমন্তের। কবির ভাষায়, ‘কার্তিক মাসেতে হয় হিমের প্রকাশ/যগজনে করে শীত নিবারণ বাস।’
তবে শৈল্পিকতায় উৎকর্ষিত হয়েছে রবীন্দ্র-নজরুল যুগে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, জীবনানন্দ দাশদের মতো সাহিত্যিকদের সুনিপুণ হাতের স্পর্শে বাংলাসাহিত্যে হেমন্ত বন্দনা উৎকর্ষিত হয়ে ওঠে।