ঝুঁকিতে ব্যাংক খাত, সব সূচক নেতিবাচক, মূলধন দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে বাংলাদেশ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২১ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৫:৫৮ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশের ব্যাংক খাতের প্রায় সব সূচকেই নেতিবাচক অবস্থা। ফলে ব্যাংকগুলোয় ঝুঁকির মাত্রাও বেড়েছে।
বেড়ে গেছে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণও, যা ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি থেকে বেড়ে এখন ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য খাতের সব ঝুঁকি মিলে বাস্তবে এর পরিমাণ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি।
মূলত খেলাপি ঋণ ও অবলোপন করা খেলাপি ঋণের বিপরীতে এবং অন্যান্য খাতে পর্যাপ্ত প্রভিশন না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা এ সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মূলধন সংরক্ষণের দিক থেকে ১০ শতাংশের কম রয়েছে ১১টি ব্যাংকে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশ বাড়লে ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। তবে এখানে সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো-বর্তমানে এ খাতের তিনজন বড় ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলেই ২২টি ব্যাংকের মূলধন ঝুঁকিতে পড়বে।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ এখন বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। ঋণ আদায় বাড়িয়ে এগুলো কমানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে ঋণ পুনঃতফশিল করে খেলাপির হার কমানো হলেও বাস্তবে সুফল মিলবে না। এজন্য ব্যাংকগুলোকে কঠোর হতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ছাড় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সরকারকে কঠোর আইন করতে হবে।
ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের কারণে দেশের ব্যাংকগুলোর মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী হচ্ছে না।
মূলধন পর্যাপ্ততার হিসাবে ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অবস্থান সবার নিচে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২২ অনুসারে, দেশের ব্যাংকগুলো গত বছর মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (সিএআর) ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ ধরে রেখেছে।
সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।
পাকিস্তানের ব্যাংকগুলোর এই অনুপাত ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, ভারতের ১৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
মূলধন ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের অনুপাত হিসেবে পরিচিত সিএআর এমন সূচক যা দিয়ে একটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা তুলে হয়।
সেই হিসাবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন।
২০১৭ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ১০ দশমিক ৮ শতাংশ সিএআর বজায় রেখেছিল। সে সময় শ্রীলঙ্কায় সিএআর ছিল ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ ও ভারতে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
যদিও দেশের ব্যাংকগুলোর মূলধনের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে, তবে এটি এখনো প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাংকগুলো তুলনায় কম। স্থানীয় ব্যাংকাররা বলছেন, ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের কারণে দেশের ব্যাংকগুলোর মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত মার্চে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এটি আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বেশি। ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ খেলাপি ঋণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ এক ডজন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির কারণে তারা দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে অবস্থান করছে। তবে, দেশের কয়েকটি বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের মূলধন তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় আছে।
মার্চে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের সিএআর ছিল ৫ দশমিক ৯০ শতাংশে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৩ বিশেষায়িত ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটি নেতিবাচক ৩৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এর বিপরীতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সিএআর ছিল ১৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর ছিল ৩১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
মার্চ শেষে ১১ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৯৪ কোটি টাকা ঘাটতি আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঋণের বড় অংশ খেলাপিদের কাছে আটকে আছে। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাচ্ছে না।’




