জাতীয় শোক দিবস আজ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ৯:৩৫:০১ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদন: জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে শাহাদতবরণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্য ও কলঙ্কময় কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল সেই বিপদগামী সেনারা।
জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে আজ স্মরণ করছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমণ্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং তার ছেলে আরিফ ও সুকান্তবাবু, মেয়ে বেবি, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় তারা প্রাণে রক্ষা পান।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খোন্দকার মোশ্তাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে আইন হিসেবে অনুমোদন করে তৎকালীন সরকার।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ একুশ বছর পর ক্ষমতায় এলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামি বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২রা অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করেন। ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনিদের বিচারের লক্ষ্যে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ই জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ই মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়।
১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ নানা বাধার কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। অন্যদিকে, ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় প্রদান করে। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। কিন্তু অপর বিচারক এবিএম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালের অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচারকাজ থেমে থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩শে আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন এবং ২৩শে সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে ৫ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। ২০০৯ সালের ১২ই নভেম্বর ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯শে নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮শে জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। ২০২০ সালের ১২ই এপ্রিল ভারতে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর আরও এক খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বঙ্গবন্ধু’র আরও ৫ খুনি এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা হলেন- আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহউদ্দিন খান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই খুনিদের তথ্য কেউ দিলে সরকার তাকে পুরস্কার দেবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারো আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সকল সহযোগী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দিবসটির শুরুতে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সর্বস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ই আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনসহ ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও দোয়া মাহফিলের অয়োজন করবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনসহ মহানগরের নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। দুপুর ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল, গোপালগঞ্জ জেলা ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাদ জোহর কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে ১৫ই আগস্টের প্রথম প্রহরে (রাত ১২টা ১ মিনিট) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩/৭-এ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০) মোমবাতি প্রজ্বালন ও বিশেষ প্রার্থনা, সকাল ৯টায় তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করেছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়। সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে। দুপুরে সারা দেশে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও গণভোজের আয়োজন করা হবে। বাদ আসর ধানমণ্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবে। ১৬ই আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবসের স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদা এবং ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালনের জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দলের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় শোক দিবসকে ঘিরে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত কয়েকদিন রাজধানীতে বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। ডিএমপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শোক দিবসে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে।




