ঢাকা রণক্ষেত্র, গয়েশ্বরকে বেধড়ক পিটুনি, আহত আমান, ধোলাইখালে গুলিবিদ্ধ ৬, মাথা ফাটলো এসআইয়ের
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুলাই ২০২৩, ৩:৩৬:৫৬ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর চারটি প্রবেশমুখেই বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। ধোলাইখাল, উত্তরা, মাতুয়াইল এবং গাবতলীতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধোলাইখালে পুলিশের বাধার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, বিএনপির কয়েকজন কর্মী গয়েশ্বর রায়কে বাঁচাতে ঘিরে ধরে আছেন। এসময় তাদের এলোপাতাড়ি পিটুনি শুরু করে। একপর্যায়ে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যান গয়েশ্বর রায়। মাটিতে পড়ার পরও বিএনপির এই অন্যতম শীর্ষ নেতাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে পুলিশ।
পরে তাকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়। এসময় ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদকেও আটক করা হয়।
এদিকে চারটি স্পট থেকে বিএনপির অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে।
গাবতলীতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে অ্যাকশনে নেমেছে পুলিশ। অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ বেশ কয়েকজনকে সেখান থেকে নিয়ে যায় পুলিশ ।
উত্তরায় জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদেরকে ধাওয়া দিয়েছে পুলিশ। উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এসময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ওদিকে বেলা ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সড়কে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দেন তারা। একপর্যায়ে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে লঠিচার্জ ও কাদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ। শুরু হয় দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।
এরা আগে বেলা ১১টায় ধোলাইখালে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. নিপুণ রায়ের নেতৃত্বে দলটির সহস্রাধিক নেতাকর্মী অবস্থান কর্মসূচি পালনে অংশ নেন। সড়কে অবস্থান নিয়ে সরকার বিরোধী নানা স্লোগান দেন তারা।
সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান নেয়। তাদের পাশাপাশি লাঠি হাতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়।
আমানের জন্যে জুস নিয়ে হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দল
রাজধানীর গাবতলীতে অবস্থান কর্মসূচি থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে আমানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার (২৯ জুলাই) দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে অসুস্থ আমানকে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে গিয়েছেন। তারা বিএনপি নেতাকে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো দুপুরের খাবার, বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী ফল ও জুসের বুকেট তুলে দিয়েছেন।
ধোলাইখালের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৬, মাথা ফাটলো এসআইয়ের
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের পরে ধোলাইখালের পরিস্থিতি বর্তমানে থমথমে। সড়ক ছেড়ে গেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। সেখানে অবস্থান করছে পুলিশ।
শনিবার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধোলাইখাল এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়।
ধোলাইখালের এই সংঘর্ষে পুলিশের শটগানের গুলিতে ছাত্রদল ও যুবদলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঢামেক কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, ধোলাইখাল থেকে ৬ জন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে এসেছে। তাদের সবার শরীরে পুলিশের শটগানের গুলি রয়েছে।
আহতদের মধ্যে মহিউদ্দিন রুবেল (৩০) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি, জাকিরুল আলম (৩০) কলাবাগান থানা ছাত্রদলের সভাপতি, এনামুল হক (৩০) কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নাট্য বিষয়ক সম্পাদক, মেহেদী হাসান আবির (২৯) কবি নজরুল ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আব্দুল আজিজ (২৮) পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ও ওবায়দুল হক (৪০) যুবদলের কর্মী।
অপরদিকে, একই সংঘর্ষে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হামলায় সুত্রাপুর থানার এসআই নাহিদ আহত হয়েছেন। হামলায় মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়েছেন তিনি। এসআই নাহিদকে বেধড়ক পেটাতে দেখা যায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের।
জানা গেছে, বিএনপির এই কর্মসূচি পালনের কথা ছিল নয়াবাজারে। সেখানে আজ সকাল সাতটা থেকে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যও সেখানে মোতায়েন করা হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা নয়াবাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ধোলাইখাল এলাকায় অবস্থান নেন। সেখানেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় পুলিশকে একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে দেখা যায়। উত্তেজিত নেতা-কর্মীদের ইট-পাটকেল ছোড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আটক করতে দেখা গেছে। এ সময় আহত হয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় আটক করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।




