সাংবাদিকদের নিয়ে পৌর মেয়র মুহিবের কটুক্তির প্রতিবাদ, বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের নিন্দা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২৩, ৯:০৮:১২ অপরাহ্ন
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি: সম্প্রতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, দর্পণ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক রহমত আলী এবং জাতীয় দৈনিক মানবজমিনের প্রাক্তন মফস্বল সম্পাদক ও দৈনিক শুভ প্রতিদিনের প্রধান বার্তা সম্পাদক সালমান ফরিদসহ সাংবাদিকদের নিয়ে বিশ্বনাথ পৌর সভার মেয়র মুহিবুর রহমানের কটূক্তি, ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব।
মঙ্গলবার (২ মে) বিশ্বনাথ প্রেস ক্লাবের পক্ষে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সভাপতি তজম্মুল আলী রাজু ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদুর রহমান মিলাদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ‘মেয়র’র মতো একটি জনপ্রতিনিধি ও স্পর্শকাতর-দায়িত্বশীল চেয়ারে বসে সাংবাদিক সমাজের প্রতি পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের বিষোদগার, বিভিন্ন অশালীন আচরণ বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা এটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য ও বালখিল্য আচরণ’ বলে মন্তব্য করেন।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এ ধরনের শালীনতাবিবর্জিত বক্তব্য সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত ও অগ্রহণযোগ্য। মেয়র মুহিবুর রহমানের এমন অশালীন বক্তব্য দেশে-বিদেশে সাংবাদিক সমাজকে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান জাতীয় পর্যায়ে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিক ছাড়াও বিশ্বনাথের স্থানীয় সাংবাদিকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যে বক্তব্য রেখেছেন বা রাখছেন, তা চরম অশালীন ও অশোভনীয়। তিনি মাঠ পর্যায়ের সংবাদকর্মীদের ‘সাংবাদিক’ না বলে ‘সংবাদ সংগ্রাহক’ বলে হেয় প্রতিপন্ন করেন, যা দেশ-বিদেশের সাংবাদিক সমাজকে ব্যথিত করেছে।
সম্প্রতি একটি অনুমোদনহীন ও নামসর্বস্ব অনলাইন টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান বলেছেন, স্থানীয় সাংবাদিকরা যেসব দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেন সেসব পত্রিকার সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বলবেন। যদি তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে তিনি বিশ্বনাথে ওইসব সংবাদপত্র পুড়িয়ে ফেলবেন। তাছাড়া স্থানীয় সংবাদকর্মীদের তিনি ঢালাওভাবে অপসাংবাদিক, টাউট-বাটপার বলেও মন্তব্য করেন।
বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের নেতারা বলেন, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক দু’বারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের মন্তব্য স্বাধীন সাংবাদিকতা পেশা ও মুক্ত গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হুমকির শামিল। মিডিয়া ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তার এমন উস্কানি ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনও। কোনো সাংবাদিককে নিয়ে তার অভিযোগ থাকলে তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করে তিনি সাংবাদিক সমাজকে শুধু হেয় প্রতিপন্নই করেননি; পেশাগতভাবেও হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন। আর গোটা সাংবাদিক সমাজকে করেছেন অপমান। এ ধরণের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ একজন জনপ্রতিনিধির কার্যকলাপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। এটি এক ধরণের উগ্রতা, যা গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি প্রকাশ্য হুমকির শামিল।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১১ এপ্রিল বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান মেয়রের চেয়ারে বসে একটি ফেসবুক পেইজে লাইভ বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে সাংবাদিক রহমত আলীকে ‘তথাকথিত’ এবং ‘নামধারী’ সাংবাদিক উল্লেখ করে বলেন, ‘ওই রহমত আলী একটি ম্যাগাজিনে লিখে বসলো যে, বিশ্বনাথে প্রবাসীদের উদ্যোগে একটা কলেজ স্থাপিত হয়েছে, আমার নামটাও সেখানে দিলো না। আমি যে এত কষ্ট করে কলেজটি করলাম অন্তত আমার নামটা সেখানে থাকা উচিত ছিল।’
এ প্রসঙ্গে বলা আবশ্যক, বহু বছর আগের একটি প্রকাশনাকে কেন্দ্র করে এখন পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার এমন বিষোদগার বোধগম্য নয়। এছাড়াও একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সিলেটের সুনামখ্যাত ও পরিচ্ছন্ন সিনিয়র সাংবাদিক সালমান ফরিদ এবং তার পরিবারকে নিয়েও সম্প্রতি একাধিক সভায়, ফেসবুকে লাইভে অশালীন মন্তব্য ও আক্রমণাত্মক ভাষা প্রয়োগ করেন। এমন কি পৌরসভার দু’জন কাউন্সিলারের উপস্থিতিতে মেয়রের সমর্থকরা সালমান ফরিদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে তাকে বিশ্বনাথে আসতে না দেওয়া ও তার বাড়িতে ‘হামলা’ করারও প্রকাশ্য হুমকি দেন।
বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের এসব অশালীন আচরণ এবং অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশের আহবান জানান বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সংবাদিকরা। ভবিষ্যতে এ ধরণের আক্রমনাত্মক কথাবার্তা পরিহার না করলে অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি প্রদান করবেন বলে জানান প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ।




