লিজ ট্রাসের পতনের কারণ আর সুনাক সফল হওয়ার সম্ভাবনা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ২:২০:৪০ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা রক্ষণশীল রাজনীতিক লিজ ট্রাস। তার জীবনের নানা দিক বিশ্লেষণ করলে একজন অস্থিরমতি নারী চরিত্র বেরিয়ে আসে, যিনি তরতরিয়ে কেবল ওপরের সিঁড়ির দিকে উঠে গেছেন। কীভাবে, কার সাহায্যে উঠছেন, কেন উঠছেন, তা ভাবেননি। শেষ পর্যন্ত পরিণতি যা হওয়ার তা–ই হয়েছে। দ্রুত উপরে ওঠা থেকে হঠাৎ পতন। তুলনামূলক কম যোগ্যতা নিয়ে বড় পদে বসলে তার ফল যা হয়, লিজ ট্রাস এর জ্বলজ্বলে উদাহরণ।
লিজ ট্রাসের ভাই বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁদের পরিবার দাবা খেলায় ভাল ছিল। কিন্তু খেলা শুরু হলেই লিজকে পাওয়া যেত না। কারণ, সে পরাজয়ের ভয়ে ভীত থাকত। হারতে চাইত না। এমন মন-মানসিকতা যার, তার কী ধরনের পরাজয় হয়, সেটাও দৃষ্টান্ত হয়ে গেল।
যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে ক্ষত রেখে বিদায় নেওয়া লিজ ট্রাস যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানেই সফল হওয়ার সম্ভাবনা ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের। যদিও তাঁর ওপর নিজ দল থেকেই প্রবল চাপ আছে। অপরদিকে বিরোধী দল লেবার পার্টির দিক থেকে রয়েছে পার্লামেন্ট ভেঙে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি।
ওদিকে, যুক্তরাজ্যের মানুষদের একটি অংশের কাছে ঋষির সুনাম রয়েছে। বরিস জনসনের মন্ত্রিসভায় ২০২০ সালে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের বন্দোবস্ত করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
ব্রেক্সিটপন্থী ও অভিবাসনবিরোধী হিসেবে পরিচিত সুনাক তাঁর অর্থমন্ত্রী হিসেবে জেরেমি হান্টকেই রেখে দেন। গত ১৭ নভেম্বর জেরেমি হান্ট তাঁর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এতে লিজ ট্রাসের নীতি যে কতটা ভ্রান্ত ছিল, পুনরায় তা দেখিয়েছেন তিনি। কর বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরকারি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরেছেন।
নতুন বাজেটে আয়কর প্রদানের ক্ষেত্রে স্তর বিন্যাস করা হয়েছে। উচ্চ করযোগ্য আয়ের সর্বোচ্চ সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে আরও বেশি মানুষকে এখন উচ্চহারে কর দিতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য এ রকম পদক্ষেপ না নিয়ে উপায় ছিল না ঋষি সরকারের। কারণ, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে এরই মধ্যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার এখন ১১ শতাংশের ওপরে। আগামী বছর অর্থনীতি আরও সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে হবে। বিরোধী দল লেবার পার্টি নতুন নির্বাচন চাইছে বটে, তবে এতে কনজারভেটিভ দলের ঋষি-বিরোধীদের তেমন সায় নেই। এই সংকটের সময় নির্বাচন করে পরাজিত হতে চায় না দলটি। এই পরিস্থিতি হয়তো শাপে বর হতে পারে ঋষির জন্য। বেশ লম্বা সময় কাজের সুযোগ পেয়ে টিকে থাকার সম্ভাবনা ‘অশ্বেতাঙ্গ’ এই প্রধানমন্ত্রীর।