আ.লীগের অনুকরণেই কি চূড়ান্ত আন্দোলনে বিএনপি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ১০:০৩:০০ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করে সরকার পতনের এক দফায় যাবে বিএনপি, এমন শোনা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে চূড়ান্ত করা হচ্ছে আন্দোলনের রূপরেখা। দলটি এবার অনেকটাই ১৯৯১ ও ২০০১ সালের বিরোধী দল আওয়ামী লীগের কৌশলকে অনুসরণ করছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকমহল।
তখন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ যেভাবে আন্দোলন করেছিল বিএনপিও ঠিক একই ছকে এগিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনের দাবি-দাওয়া ও কর্মসূচির অনেক ক্ষেত্রেই মিল আছে। আছে দল দুটির নেতাদের বক্তব্যেও মিল।
সেই সময় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা প্রদান, সংসদ থেকে পদত্যাগ, যুগপৎ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টি করে রাজপথে জোরালো আন্দোলন সৃষ্টি করেছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে দুটি আন্দোলনেই বলতে গেলে সফলতা পায় দলটি। শুধু রাজপথের আন্দোলন নয়, শরিকদের নিয়ে একসঙ্গে নির্বাচন এবং পরে সরকারও গঠন করেছিল বর্তমান ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপির এবারের আন্দোলনের ছক অনেকটাই আওয়ামী লীগের মতো। সরকার হটাতে চলছে বৃহত্তর ঐক্য গঠনের কাজ। বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই দেওয়া হবে আন্দোলনের রূপরেখা। ’৯৬-এর আদলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। সংসদ থেকে পদত্যাগের নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে। আন্দোলনে সফলতা এলে শরিকদের নিয়ে নির্বাচনি জোটের কথাও ভাবা হচ্ছে। নির্বাচনে জয়ী হলে মিত্রদের নিয়ে গঠন করা হবে জাতীয় সরকার।
আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও প্রাথমিকভাবে ৯ দফা দাবিতে মাঠে নেমেছে। এসব দাবি নিয়ে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় করা হবে মহাসমাবেশ। ওই সমাবেশকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। কী ঘোষণা আসছে মহাসমাবেশ থেকে। দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা থাকবে। তবে সরকার পতনের কোনো আলটিমেটাম দেওয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একটি গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে উঠেছে। চট্টগ্রামের গণসমাবেশে তা প্রমাণিত হয়েছে। সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার। তারা কখন যাবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তবে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে কোনো আন্দোলন হয় না। যারা এটা বলে তাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আছে কিনা সন্দেহ।
তিনি বলেন, অতীতে কোন দল কীভাবে আন্দোলন করেছে সেদিকে আমাদের নজর নেই। আন্দোলনের নিজস্ব একটা গতি আছে। দলের সিদ্ধান্ত মতো তা চূড়ান্ত করা হয়।
১৯৯১ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে বিএনপি। বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক ভালোই চলছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালের মার্চে মাগুরা উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগের পর তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তাই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সোচ্চার হতে থাকে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ সরকারবিরোধী আরও কয়েকটি দল নিয়ে এ ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় হয় তারা। ১৯৯৪ সালের ২৭ জুন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।
এ দাবিতে আন্দোলন জোরালো করতে এক পর্যায়ে সংসদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বছর ২৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলের ১৪৭ জন সংসদ-সদস্য স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দল ছাড়া একতরফা নির্বাচন করে বিএনপি। কিন্তু আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলের তীব্র আন্দোলনের মুখে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিতে বাধ্য হয়। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন করার পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।