ব্যবসা প্রসারে প্রধানমন্ত্রীকে ১৭ প্রস্তাবনা সিলেট চেম্বারের
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৭:৫৪:১৫ অপরাহ্ন
সিলেট অফিস : সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি খাতে বিরাজমান সমস্যা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৭টি প্রস্তাবনা দিয়েছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাহমিন আহমদ ১৭টি প্রস্তাবনা সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেনের হাতে তুলে দেন।
এদিন সকালে হবিগঞ্জের দি প্যালেস রিসোর্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি উদ্ভাবনী উদ্যোগ বিষয়ক বিভাগীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সিলেট চেম্বার সভাপতি নিজের প্রস্তাবনাগুলো প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাঠান।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক তাহমিন আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন এসব প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করাসহ সমস্যাগুলো সমাধানে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রস্তাবনায় তিনি বাংলাদেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেন। অথচ এসব খাতে কতিপয় সমস্যাবলী বিরাজমান থাকায় সিলেটের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যাহত ও নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব সমস্যাবলী নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
প্রস্তাবনাগুলো মধ্যে রয়েছে- সিলেট থেকে রপ্তানি বৃদ্ধিতে ওয়্যার হাউজ ও প্যাকিং হাউজ নির্মাণ, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যাগেজ সিস্টেম চালু, জকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ বর্ডার দিয়ে বাঁশ আমদানির সুযোগ প্রদান, সিলেটের সব স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি পুনরায় চালু, বিসিক শিল্প মালিকদের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ বন্ধকরণ, সিলেটে নতুন বিসিক শিল্প নগরী স্থাপন, তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দরের পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও ভাড়াকৃত জমিতে আমদানিকৃত মালামাল স্তুপীকরণে বিজিব কর্তৃক বাধা প্রদান বন্ধকরণ, ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশনে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু, শেওলা স্থলবন্দরে সোনালী ব্যাংকের বুথ খোলা, ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দরে উন্নীত না করা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে বাণিজ্যিক হারে গ্যাস বিল প্রদান না করা, সিলেটের পাথর কোয়ারীগুলোতে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন পুনরায় চালু, পুরাতন গ্যাস লাইন মেরামত, সিলেট আমদানি-রপ্তানি সহকারী নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সেবার মান বৃদ্ধি, এলজিইডি বিভাগের কাজের রেট পুনঃনির্ধারণ, কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্ট পুনরায় চালু এবং বিনিয়োগ ও পর্যটন খাতের বিকাশে রেল সেবার মান উন্নয়ন।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার ১০টি উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বৃহত্তর সিলেটের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যাবলী নিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক জুলিয়া যেসমিন মিলি।
অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের চার জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ বিভাগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিদ্যুৎ বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, সমাজসেবা অধিদপ্তর, বিসিকসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, চার জেলার রাজনৈতিক নেতা, জেলা চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি, জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন, প্রেসক্লাব এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তবনায় বলা হয়, বর্তমানে সিলেটের রপ্তানিকারকদের ঢাকা থেকে তাজা শাকসবজি ও ফলমূল যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে রপ্তানি করে থাকেন। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় হয়। তাই ঢাকার শ্যামপুরের মতো সিলেটে একটি ওয়্যার হাউজ ও সার্টিফিকেশন ল্যাব নির্মাণ করলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন, তেমনি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
এছাড়া ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যাগেজ সিস্টেম আড়াই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অবদান রাখা প্রবাসী যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই ভোগন্তি লাঘবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও ব্যাগেজ সিস্টেম চালুর দাবি জানান।
এছাড়া সম্প্রতি সিলেটে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতে প্রায় এক কোটি বাঁশের চাহিদা রয়েছে। সিলেটে বাঁশের যোগান অপর্যাপ্ত থাকায় জকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নদীপথে ভারত থেকে কম খরচে বাঁশ আমদানির সুযোগ তৈরি করে দিতে দাবি তুলে ধরেন।
পাশাপাশি এ অঞ্চলে ফলের টাটকা চাহিদা মেটাতে সিলেটের সব স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল আমদানি পুনরায় চালুর দাবি জানানো হয়।
এছাড়া সরকারি আইন অনুযায়ী বিসিক শিল্প নগরীর শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের বিধান বিসিক শিল্প মালিকদের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করছেন কর্তৃপক্ষ। তাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিকরা ক্ষতির সম্মুখীন এবং নতুন উদ্যোক্তারা শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হারাচ্ছেন। তাই বিসিকের শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ বন্ধ করার দাবি তুলে ধরেন।
সিলেটের খাদিমনগর ও গোটাটিকরে কোনো প্লট খালি না থাকায় নতুন উদ্যোক্তারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারছেন না। সিলেটে নতুন আরেকটি শিল্প এলাকা গড়ে তুলতে পারলে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করেও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে রপ্তানি করা যাবে। এছাড়া তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দরের পার্শ্ববর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন ও ভাড়াকৃত স্থানে আমদানিকৃত পণ্য রাখতে বিজিবি কর্তৃক বাধা প্রদান বন্ধকরণের দাবি জানিয়েছেন।




