মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা জেলা প্রশাসকের আহবানে সাড়া দেয়নি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০২২, ৬:০০:০২ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দৈনিক তিনশ টাকা মজুরি দাবিতে সাধারণ শ্রমিকদের ১২ দিন ধরে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি সহ সারা দেশের ১৬৭টি চা বাগানের অচলাবস্থার অবসান হয়নি।
জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বাগানে বাগানে ঘুরে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহবানের বার্তা পৌঁছে দিলেও তেমন সুফল আদায় করতে পারেননি বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের আহবান করা ২৫ আগস্টের বৈঠক স্তগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম।
জানা যায়, বুধবার সকাল থেকে মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানের কোনটিতে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেননি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলার কমলগঞ্জের মৃত্তিঙ্গা চা বাগানে বড়লেখায় চান্দগ্রাম সড়ক বন্ধ করে শ্রমিকরা তিনশ টাকা মজুরি দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। বাগানের চা শ্রমিক সঞ্জয় বাউরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া সব বাগানে শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন বলে জানা গেছে।
গত ২১ আগস্ট রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে চা শ্রমিক নেতাদের সমন্বয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নাহিদুল ইসলামসহ বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পালসহ ৭-৮ জন শ্রমিক নেতার মতামতের ভিত্তিতে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহারে ঐক্যমতে পৌঁছান। এরপর তারা সমঝোতা স্মারকে সাক্ষর করেন। ওই সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী ২২ আগস্ট থেকে শ্রমিকদের কাজে ফেরার বিষয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফল শেষে দেশে ফেরার পর ভিডিও কনফারেন্সে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে দৈনিক মজুরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরকম আরও ৫টি শর্তে উপস্থিত সকলে একমত হন। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক গত দুই দিন ধরে মজুরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের আহবান শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া, জেরিন, ফুলছড়িসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকদের সাথে কথাবলে ঘন্টা দুইয়েকের জন্য ২-৩টি বাগানে কাজে যোগদান করাতে সক্ষম হলেও ২৪ আগস্ট কোন বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, মজুরির বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা জেনে ২-৩ বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করলেও পরবর্তীতে তারা অবস্থানে ঠিক থাকতে পারেননি।
এ দিকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, নির্বাহী উপদেষ্টা রামভজন কৈরীসহ অনেকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তারা ফোন রিসিভড করেননি।
তবে মনু-ধলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরী মোবাইল ফোনে বলেন, অসুস্থতার জন্য বিভিন্ন বিষয় থেকে দূরে রয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি ও জেলার অভিভাবক জেলা প্রশাসকের সম্মানে চা শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়া উচিত ছিল।
উল্লেখ্য, তিনশ টাকা মজুরি দাবিতে সারা দেশের ১৬৭টি চা বাগানে ৯-১২ আগস্ট পর্যন্ত প্রতি বাগানে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন চা শ্রমিকরা। এতে সমাধান না হলে ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লাগাতার ধর্মঘট শুরু করেন চা শ্রমিকরা। ১৬-২১ আগস্ট পর্যন্ত মজুরি নির্ধারণে বিভিন্ন পর্যায়ে ৪টি বৈঠক হয়েছে। তাতে চা বাগানের অচলাবস্থা নিরসনের কোন কার্যকর সুযোগ সৃষ্টি হয়নি।