দেশের ৯০ ভাগ মানুষ অতিদরিদ্র হচ্ছে : জিএম কাদের
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১১:০৮:২৫ অপরাহ্ন
প্রতি বছর ২০ লাখ লোক চাকরির বাজারে আসছে। কিন্তু চাকরি পাচ্ছে ৪-৫ লাখ লোক
অনুপম নিউজ ডেস্ক : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, সরকার প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়ছে এবং দেশের উন্নয়ন হচ্ছে বলে দাবি করলেও প্রকৃত অর্থে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে। মানুষ দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্র হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় সরকারের উচিৎ রেশনিং করে তিন ক্যাটাগরির মানুষের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা। যতক্ষণ না দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আসে ততক্ষণ পর্যন্ত এ রেশনিং পদ্ধতি চালু রাখা।
মঙ্গলবার নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিলে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিএম কাদের বলেন, দেশে প্রবৃদ্ধির হার বেশ ভালো। আমাদের মাথাপিছু আয়ও ভালো। এগুলো খুশির খবর। কিন্তু আমাদের বেশির ভাগ মানুষ এ খুশিতে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। এ উন্নয়নের নামে আমরা দেখতে পাচ্ছি- এক শ্রেণি ধনী থেকে আরও ধনী হচ্ছে। গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে।
২০১৬ সালের একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, দেখা যায় ১০০ টাকা দেশ আয় করলে ওই টাকার ২৮ টাকা উচ্চতর ধনী শ্রেণির পকেটে যায়। আর একেবারে নিচের দিকে বা গরিবরা পায় মাত্র ১০ পয়সা। ধনী-গরিব আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। দেশে ৯০ শতাংশ সম্পদের মালিকানা ১০ শতাংশ মানুষের হাতে। আর ১০ শতাংশ সম্পদ ভোগ করছে বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ। এ ৯০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিনই দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্র হচ্ছে। আর ধনীরা টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। তারা বিদেশে টাকা পাচার করছে।
‘বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। ২০১৬ সালের পর থেকে টাকা পাচারের পরিমাণ আরো বেড়েছে। যারা রিপোর্ট প্রকাশ করতেন তারা রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারছেন না। কেননা সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ডাটা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হতো। এখন সরকারের সেসব বিভাগ এখন ডাটা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমাদের বা সবার সন্দেহ জাগছে- যারা টাকা পাচার করছে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা কিনা?’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরো বলেন, মানুষ যদি অনাহারে-অর্ধাহারে থাকে, দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্র হয়, তবে সেই উন্নয়নের কোনো মানে হয় না।
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছে জাতীয় পার্টি। সরকারের উচিত নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা ফেরাতে পদক্ষেপ নেওয়া।
চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
নগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়কারী রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, সাইদুর রহমান টেপা, সাইফুদ্দীন আহমদ মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান সেরিফা কাদের প্রমুখ।
এছাড়া আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ড. রাজীব রঞ্জন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, ৯ বছরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে সুশাসন দিয়েছিলেন। আজকে যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে তার ভিত কিন্তু গড়ে দিয়েছিলেন এরশাদ। দেশে ওষুধ নীতি প্রণয়ন করার কারণে আজ বিদেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত গার্মেন্টস শিল্পের ভিত্তি তার হাতেই হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স করে সাধারণ মানুষের দ্বারে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর কাজটিও তিনি করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নির্বাচন। জাতীয় পার্টি এমন কোনো নির্বাচন নেই, জন্মের পর থেকে যে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগামী নির্বাচন, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
প্রধান বক্তা মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা আছে। ২০১৮ সাল থেকে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে নেই। জাতীয় পার্টি তার নিজস্ব গতিতে, নিজস্ব পথে চলছে। গণতন্ত্রের কথা বলে তিন জোট এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। কিন্তু আজ গণতন্ত্রের কী অবস্থা তা দেশের মানুষ দেখছে। ক্ষমতার কোনো ভারসাম্য নেই। সর্বত্রই দুর্নীতি আর লুটপাট চলছে।
তিনি বলেন, দেশে পাঁচ কোটি লোক বেকার। প্রতি বছর ২০ লাখ লোক চাকরির বাজারে আসছে। কিন্তু চাকরি পাচ্ছে ৪-৫ লাখ লোক। আইনের শাসন ও মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। এ দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।