শ্রীলংকায় অভাব থেকে ক্ষোভ আগুন কারফিউ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০২ এপ্রিল ২০২২, ৯:২৪:২২ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে শ্রীলংকা। দেশটিতে দিনের ১৩ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না। বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করতে পারছে না সরকার।
সংকট মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতায় ক্ষোভে ফুঁসছে দেশটির সাধারণ মানুষ। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে কয়েকশ মানুষ তার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে নিরাপত্তাকর্মী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ ৪৫ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। বিক্ষোভের পর রাজধানী কলম্বোয় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হলেও শুক্রবার ভোরে তা তুলে নেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসি, আলজাজিরা, এএফপি ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
পুলিশের মুখপাত্র এসএসপি নিহাল থালদুওয়া জানান, কলম্বোর মিরিথানায় রাজাপাকসের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ চলাকালে কিছু লোক বাসভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের প্রতিহত করতে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ ঘটনায় ৩১ পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতাল সিএনএইচ ও সাউথ টিচিং হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিক্ষোভের ঘটনায় তিন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাদেরও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশের আরেক কর্মকর্তা দাবি করেন, বিক্ষোভকারীদের হাতে রড ও ধারালো অস্ত্র ছিল। তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। রাজাপাকসের বাসভবনের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সেনাবাহিনীর একটি বাস ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙা একটি প্রাচীর থেকে ইট খুলে নিয়ে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে ছোড়েন তারা।
বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতায় থাকা রাজাপাকসের পরিবারের সব সদস্যকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার জন্য দাবি জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বিক্ষোভকারী নারী ও পুরুষদের ‘পাগল, পাগল বাড়ি যাও’ বলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। রাজাপাকসের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী। তার ছোট ভাই বাছিল রাজাপাকসে অর্থমন্ত্রী। আরেক ভাই চামাল রাজাপাকসে কৃষিমন্ত্রী। আর রাজাপাকসের ভাতিজা নামাল রাজাপাকসে ক্রীড়ামন্ত্রী।
বিক্ষোভকারী ২৬ বছর বয়সি অজিথ পেরেরা আলজাজিরাকে বলেন, এখানে জীবনযাত্রার অসহনীয় খরচ, জ্বালানির অভাব। বিদ্যুৎ নেই। এজন্য আমরা প্রতিবাদ করতে এসেছি। আমরা চাই প্রেসিডেন্ট, যিনি এত সংকটের মূলে, তিনি যেন বাড়ি ফিরে যান।
২১ বছর বয়সি আরেক বিক্ষোভকারী মোহাম্মদ আসরি বলেন, অর্থনীতি এতটাই খারাপ যে, আমরা দিনে দুবেলা খেতে পারছি না। আমাদের জীবনে এতটা খারাপ সময় আর আসেনি। আসরি জানান, তিনি টেলিভিশনে বিক্ষোভের খবর দেখে অন্য জেলা থেকে এসে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
স্বাধীনতার পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকা সবচেয়ে সংকটজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। শ্রীলংকার জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। দেশটির সরকারের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্য। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানিসহ জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারছে না সরকার। ডিজেল না থাকায় কয়েকদিন ধরে শ্রীলংকায় বাস চলাচল করতে পারেনি।
জ্বালানি সংকটে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় বের করছেন না। দিনে ১৩ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না। দেশটিতে এর আগে কখনোই এত বেশি সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার ঘটনা ঘটেনি। বিদ্যুৎ সংকটে পড়ে দেশটির প্রধান শেয়ারবাজারে লেনদেনও বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটিতে হু-হু করে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। কাগজের সংকটে অনুষ্ঠিত হয়নি পাবলিক পরীক্ষা। বন্ধ হয়ে গেছে দৈনিক পত্রিকার ছাপা সংস্করণ। প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবে সরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে শ্রীলংকার সরকার বলেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে তারা আর্থিক সহায়তা চাইবে। ভারত ও চীনের কাছ থেকেও আরও ঋণ চেয়েছে দেশটি।
করোনা মহামারির সময় পর্যটন খাত ও রেমিট্যান্সে বড় লোকসানের মুখে পড়ে শ্রীলংকা। অর্থনীতিবিদরা কর কমানো ও কয়েক বছর ধরে চলা বাজেট ঘাটতির জন্য সরকারের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন।




