আজ মধ্য শাবানের পুণ্যময় রজনী
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মার্চ ২০২২, ১০:৪৭:৩৮ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক : আজ শুক্রবার। আজ দিবাগত রাত মধ্য শাবানের পুন্যময় রজনী, মানে পবিত্র শবেবরাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় দিবাগত রাতে মহান আল্লাহর রহমত কামনায় ‘নফল ইবাদত-বন্দেগীর’ মাধ্যমে পবিত্র শবেবরাত উদযাপন করবেন।
মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ লাভের আশায় বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরে মগ্ন থাকবেন। অনেকে রোজা রাখেন, দান-খয়রাত করেন। অতীতের গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করবেন।
ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি হালুয়া, ফিরনি, রুটিসহ হরেক রকমের উপাদেয় খাবার তৈরি করা হবে। এসব খাবার বিতরণ করা হবে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে। অনেকে রাতভর ইবাদত করে ভোরে কবরস্থানে যাবেন। চিরনিদ্রায় শায়িত আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করবেন।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে শুক্রবার বাদ মাগরিব ও বাদ এশা এবং রাত ২টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে “পবিত্র শবে বরাত এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য” শীর্ষক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সকল ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান লিখেছেন, ‘‘আরবি চান্দ্রমাসের মধ্যে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ শাবান মাসের মধ্যভাগে রয়েছে লাইলাতুল বরাতের মতো পুণ্যময় রজনী। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রি হাদিসের পরিভাষায় ‘লাইলাতুন নিস্ফ মিন শাবান’ অর্থাৎ ‘শাবানের মধ্যবর্তী রজনী’কে উপমহাদেশে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। প্রতিবছরের মতো শবে বরাত মুসলমানদের কাছে রমজান মাসের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। আসন্ন মাহে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য শাবান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতময় মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) অধিক হারে এ সময় দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের ওপর বরকত নাজিল করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন!’ (মুসনাদে আহমাদ)
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে শাবানের মধ্য রজনীটি আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে পুণ্যময় ও মহিমান্বিত বলে বিবেচিত। আল্লাহ তাআলা মানবজাতির জন্য তাঁর অশেষ রহমতের দরজা এ রাতে অবারিত করে দেন। রাত জেগে নফল ইবাদত করে গুনাহখাতা মাফ ও অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন এবং অনুতপ্ত বান্দাদের পাপমুক্ত করে দেন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মধ্য শাবানের রাত্রিতে আল্লাহ তাআলা রহমতের ভান্ডার নিয়ে তাঁর সব সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় আবির্ভূত হন এবং মুশরিক অথবা হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (তাবারানি) অন্য হাদিসে আছে, ‘আল্লাহ তাআলা ১৫ শাবানের রাতে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং এ রজনীতে কেবল মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বায়হাকি, ৩/৩৮০)
আল্লাহ তাআলা মানবসমাজ তথা বিশ্বের সব সৃষ্টির পরবর্তী বছরের ভাগ্য এই রাত্রিতে পুনর্নির্ধারণ করেন। তিনি মুমিন বান্দাদের আকুতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের উত্তরণের পথ দেখান। এ দিন সূর্যাস্তের পর থেকে তিনি মানুষের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এ জন্য মুসলমানদের কাছে শবে বরাতের নফল ইবাদত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রজনী আসে তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত করো এবং পরের দিন রোজা রাখো। কেননা প্রতিটি রাত্রিতে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। সুবহে সাদেক পর্যন্ত এ আহ্বান অব্যাহত থাকে।’ (ইবনে মাজা)’’
শাহসুফি সাইয়েদ আহমাদুল্লাহ যোবায়ের লিখেছেন, ‘‘এই রাতের অধিকাংশ ইবাদত নফল। এই রাতের নফল নামাজের ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই, বরং অন্যান্য নফল নামাজের মতো দুই রাকায়াত বা চার রাকায়াতের নিয়ত করে সুরা ফাতেহার পর যে কেনো সুরা মিলিয়ে যত ইচ্ছা পড়া যায়। তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যে, রাতভর নফল ইবাদত করে ফজরের নামাজ যেন কাজা না হয়। কেননা, হাজার রাকাআত নফল নামাজের সাওয়াব কখনো এক ওয়াক্ত ফরয নামাযের সমতুল্য হবে না। শবেবরাতে যেমন পালনীয় বিষয় রয়েছে, তেমনি এই রাতে কিছু বর্জনীয় বিষয়ও রয়েছে। এই রাতে আতশবাজি, হইহুল্লোড়, অহেতুক কাজে লিপ্ত থাকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে নিজে কোনো ইবাদত করা যাবে না।’’



