ফেঞ্চুগঞ্জের অনন্য গুণবান ব্যক্তিত্ব ইন্তাজির খান
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১:১১:৪৬ অপরাহ্ন

মনসুর আহমদ খান
জন্ম ও বংশ পরিচয় : ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার এক অনন্য গুণবান ব্যক্তিত্ব ইন্তাজির খান। শিক্ষা সমাজসেবায় নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তিনি। উপজেলার পাঠানটিলা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম ১৯১৮ সালের ৬ জানুয়ারি।
তাঁর পিতার নাম আলহাজ মদরিছ খান। মায়ের নাম সিতারা বানু চৌধুরী। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ইন্তাজির খান ছিলেন দ্বিতীয়। শিক্ষিত মসুলিম পরিবারে জন্ম নেয়া আলহাজ ইন্তাজির খান ছিলেন একজন উচ্চশিক্ষিত লোক।
শিক্ষাজীবন : আলহাজ ইন্তাজির খান মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর বাবাকে হারিয়েছিলেন। সিলেট সদর থানার কুচাই ইউনিয়নের নয়াগাওঁ গ্রামে খালার বাড়িতে থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন। পরে ১৯৩৭ সালে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন (বর্তমান এসএসসি সমমানের)।
১৯৩৯ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে উচ্চশিক্ষা পিপাসু ইন্তাজির খান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সেখা থেকে বি এ পাশ করেন ১৯৪২ সালে।
কর্মজীবন : সেই সময়টাতে এলাকায় উচ্চশিক্ষিত লোকের খুব অভাব ছিল। যে দুএকজন ভাল শিক্ষিত ছিলেন তাদের খুব কদর ছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে ভাল চাকুরির প্রস্তাব আসতো। তৎকালীন ফেঞ্চুগঞ্জ থানার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে পারিবারিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় এবং স্কুলটির তখনের প্রধান শিক্ষক শশী বাবরু অনুরোধে ১৯৪৫ সালে তিনি সহকারী প্রধান শি ক্ষক হিসেবে এতে যোগদান করেন। পর্রবতী সময়ে এতে কর্মরত থাকা
অবস্থায় বি.টি (BT) সনদ লাভ করেন। ১৯৫৫ ইংরেজিতে তিনি কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। শিক্ষার জন্য নিবেদিত প্রাণ আলহাজ ইন্তাজির খান জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়টুকু কাসিম আলি উচ্চ বিদ্যালয়ে কাটান। ১৯৮৩ সালের মে মাস পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৩৮ বছর কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সরকারি অন্যান্য দায়িত্ব পালন করেন। যেমন: কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজি বিষয়ের দীর্ঘদিন প্রধান পরীক্ষকের
(Head Examiner) দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে তিনি নিয়মিত উপস্থিত হতেন। তিনি অবসরের পরেও আজীবন কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষা বিস্তারে অবদান : ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, ফেঞ্চুগঞ্জ মোহাম্মদীয়া ফাজিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আলহাজ ইন্তাজির খান ছিলেন অন্যতম। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর পিতা অধ্যক্ষ ইয়াহয়া চৌধুরীর অনুরোধে ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে ইংরেজির অবৈতনিক প্রভাষক হিসেবে পার্টটাইম অধ্যাপনা করেন এবং মোহাম্মদীয়া ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিষয়ের অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে অবদান রাখেন।
সমাজ সেবায় অবদান : শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের পাশাপাশি সমাজসেবায় ও তাঁর অবদান মানুষ আজীবন স্মরণ করবে। ভারত পাকিস্তান বিভাগের আন্দোলনে তিনি ১৯৪৭ সালে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা স্থাপনসহ ফেঞ্চুগঞ্জের তৎকালীন অনেক সংগঠন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক অবকাঠামো গঠনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ফেঞ্চুগঞ্জ শাহী ঈদগাহ, ইসলামী
পাঠাগার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয় তাঁর প্রচেষ্টায়। তিনি ১৯৮৮ সালে ১৮ আগস্ট থেকে ১৯৮৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপিত হয়। এছাড়াও অনেক সামাজিক সংগঠনের সংগঠক ছিলেন তিনি। ১৯৭৮ সালে তিনি পবিত্র হজব্রত পালন করেন।
মৃত্যু : ১৯৮৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ৭১ বছর বয়সে এ মহান জ্ঞানতাপস
পরলোক গমন করেন। কাসিম আলী স্কুলের আজীবন রেক্টর সম্মাননা এবং তাঁর জানাজায় হাজার হাজার লোকের উপস্থিতি ও দোয়া কর্মবীর আলহাজ ইন্তাজির খানের উন্নত জীবন যাপনের সাক্ষ্য বহন করে। আল্লাহ তাঁর জন্যে জান্নাতের শান্তিময় সম্মানিত স্থান মঞ্জুর করুন।
ছেলে ও মেয়ে : মৃত্যুকালে তিনি পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে যান। ছেলে মেয়ে সবাই শিক্ষিত সমাজে সুনামের সাথে প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে প্রয়াত শওকত ওসমান খান, ছোট ছেলে মাসুদ আহমদ খান দেশে ও সুইডেনের সফল ব্যবসায়ী। দ্বিতীয় ছেলে মনসুর আহমদ খান যুক্তরাজ্যে, তৃতীয় ছেলে মাহফুজ আহমদ খান সুইডেনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও চতুর্থ ছেলে মাহবুব আহমদ খান ফেঞ্চুগঞ্জ মোহাম্মদীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে সুনামের সাথে কর্মরত। বড় মেয়ে হেলেনা খানম যুক্তরাষ্ট্রে, দ্বিতীয় মেয়ে শামসুন্নাহার খানম দেশে ও ছোট মেয়ে মুজিবুন্নাহার খানম যুক্তরাজ্যে সম্মানের সাথে বসবাস করছেন।
উল্লেখ্য, প্রয়াত আলহাজ ইন্তাজির খানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিষ্ঠিত। তাঁর নানামুখী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ‘মরণোত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ফাউন্ডেশন পদক’ প্রদানের মাধ্যমে তাকে সম্মানিত করা হয়েছে।




