ব্রিটেনে কোভিড সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে, ‘প্ল্যান বি’ আসতে পারে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০২১, ১:১৫:৪৭ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক : ব্রিটিশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন বলেছে, এখনই সময় ব্রিটেনের কোভিড মোকাবেলায় ‘প্ল্যান বি’ চালু করা। নইলে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে পড়বে। দেশটিতে করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বাড়ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, আসন্ন শীতে প্রতিদিন এক লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত হবে আমরা দেখতে পাবো।
ব্রিটেনে করোনার প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রম অব্যাহত থাকা সত্বেও নিয়ন্ত্রণে নেই করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টগুলো। ব্রিটিশরা মহামারী নিয়ন্ত্রণের আগেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করা শুরু করায় সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে, মন্তব্য বিশেষজ্ঞ মহলের।
পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য হলো, ইংল্যান্ডের ৬০ জনের মধ্যে একজন করোনা ভাইরাস বহন করছিলেন। এখন তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ব্রিটেনে ডেল্টা, দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টও রয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিধিনিষেধ না থাকায় সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুর হারও।
গত জুলাইয়ে সমালোচনার মুখেই ব্রিটেন থেকে সব ধরণের বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করে নেয় বরিস জনসন সরকার। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে নাইট ক্লাব, বার, পার্কসহ সব জায়গায়তেই সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আর এতে কোভিডের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে।
গতকাল ব্রিটেনে একদিনে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ হাজার মানুষ প্রায়। গত তিন মাসের মধ্যে এই সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ। এ অবস্থায় আগামী কয়েক মাসকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে প্রস্তুত থাকার জন্য বৃটিশদের অনুরোধ করেছেন কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে আবার মুখে মাস্ক পরা এবং বাসায় বসে কাজ করার নির্দেশ আসতে পারে। বর্তমানে বৃটেনে করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ডোজ টিকা বা বুস্টার ডোজ দেয়ার কর্মসূচি এগুচ্ছে খুব ধীর গতিতে। এতে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এখনও পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় বৃটেনে করোনায় হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর সংখ্যা ভয়ংকরভাবে বেশি।
করোনা সংক্রান্ত এসএজিই কমিটির সদস্যরা সোমবার সতর্ক করে বলেছেন, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতের (এনএইচএস) ওপর চাপ কমাতে আরো একবার পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে সোমবার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মুখপাত্র বলেছেন, নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়ার পরিকল্পনা বর্তমানে তাদের নেই। সর্বশেষ পরিসংখ্যানের দিকে তারা ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছেন।
উল্লেখ্য, বিশ্বে করোনার টিকা দেয়া কার্যক্রম শুরু হয় বৃটেন থেকেই। তারাই প্রথম করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়। জনসংখ্যার শতকরা যে পরিমাণকে ডাবল ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে সেই তুলনায় তারা এখন ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। যাদের বয়স ৫০ বছরের ওপরে এবং ক্লিনিক্যালি যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, তারা করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ৬ মাস পরে বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। তারা বলছেন, বর্তমানে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের যে হারে টিকা দেয়া হচ্ছে, তাতে জানুয়ারি শেষের আগে তারা বুস্টার ডোজ পাবেন না।
কোভিড-১৯ অ্যাকচুয়ারিজ রেসপন্স গ্রুপের জন রবার্টস ডেইলি টেলিগ্রাফকে বলেছেন, বুস্টার ডোজ দেয়ার শুরুতে স্বাস্থ্য ও সামাজিক যত্ন বিষয়ক সেক্রেটারি অব স্টেট বলেছিলেন যে, সামনেই যেহেতু শরত এবং শীতকাল, তাই সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সুরক্ষা দিতে বুস্টার ডোজ দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে গতিতে টিকা দেয়া হচ্ছে, তাতে জানুয়ারি শেষ হয়ে যাওয়ার আগে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষকে বুস্টার ডোজ টিকা দেয়া সম্ভব হবে না। এসব মানুষ করোনার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। ওদিকে রেডিও এবং টিভিতে একটি নতুন বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। তাতে প্রবীণদেরকে করোনা ভাইরাসের বুস্টার ডোজ এবং ফ্লু ভ্যাকসিন নিতে বলা হচ্ছে।