২৪ লাখ টন আলু হিমাগারে, ৪ হাজার কোটি টাকা লোকসানের আশংকা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ অক্টোবর ২০২১, ১২:০৮:০২ অপরাহ্ন
সিলেট অফিস, অনুপম নিউজ ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন এলাকার হিমাগারগুলোতে সংরক্ষিত ২৪ লাখ টন আলু দুই মাসের মধ্যে বাজারজাত করতে না পারলে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা লোকসান হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্নিষ্ট কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের। এ অবস্থায় ত্রাণ হিসেবে আলুর ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন দপ্তরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরও মিলছে না সুফল।
লোকসান কমাতে আলুর ব্যবহার বাড়ানো ও রপ্তানিতে গুরুত্ব দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। শিল্পে এর ব্যবহার ও রপ্তানিযোগ্য আলু চাষে চার বছর মেয়াদি রোডম্যাপও চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে এ মন্ত্রণালয়। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, দেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন, কিন্তু গত মৌসুমে পরিবেশ অনুকূলে থাকায় উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ১৪ লাখ টন। সে হিসাবে আলু উদ্বৃত্ত থাকছে ২৪ লাখ টন। উৎপাদিত আলু থেকে দেশের ৪০০ হিমাগারে ৪০ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল। করোনায় হোটেলসহ সব কিছু বন্ধ থাকায় ৬৫ শতাংশ আলুই বিক্রি হয়নি। এখন খরচের তুলনায় বাজারে দাম কম থাকায় অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না। অথচ আলুর নতুন মৌসুম শুরু হতে বাকি আর মাত্র দুই মাস। ফলে বিক্রি শেষ না হলে লোকসানের সঙ্গে নতুন আলু সংরক্ষণ নিয়েও জটিলতা তৈরি হবে।
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর দেশে আলু উৎপাদন ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়লেও এর বহুমুখী ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া কিছু দেশে আলু রপ্তানি করা হলেও আলুর জাত ও গুণগত মানের কারণে সেই বাজারও ধরে রাখা যায়নি।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশারফ হোসেন জানান, চলতি মৌসুমের আলু বাজারজাতকরণের আর মাত্র দুই মাস বাকি। এর মধ্যে সংরক্ষিত আলু বাজারজাত না হলে বিপুল পরিমাণ অবিক্রীত থাকবে। সেগুলো ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
তিনি বলেন, টিসিবির ডিলার ও ওএমএস কার্যক্রমে আলু বিক্রি জোরদার করা হোক। আলু রপ্তানিতে পাঁচ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার একটি রেফার ভেসেল (পচনশীল দ্রব্য পরিবহনের উপযোগী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাহাজ) সরকারিভাবে কেনার দাবি জানান তিনি। এ ধরনের জাহাজ কেনা হলে আলু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। এ ছাড়া রপ্তানি উপযোগী আলু উৎপাদনে উন্নত বীজ, মাটিজাত রোগবালাই দূরীকরণে বিশেষ ব্যবস্থা নিতেও বলেন তিনি। আলু থেকে তৈরি নতুন নতুন সুস্বাদু খাবার জনপ্রিয় করার জন্য উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মেলা আয়োজনের দাবি জানান মোশারফ হোসেন।
আলু সংরক্ষণের হিমাগারের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বিদ্যুৎ বিল স্থগিত রেখে তা পরে সারচার্জ ছাড়া পরিশোধের সুযোগ চান ব্যবসায়ীরা। চালের ওপর চাপ কমাতে আইনশৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর আবাসিক হলে আলু খাওয়ানো বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবও দেন তারা।
সরকার আলু উৎপাদনে ৮০০ কোটি টাকা সারের ওপর ভর্তুকি দিয়ে থাকে। সেই সারে আলুর বাম্পার ফলন হচ্ছে। কিন্তু আলুর বাজার তৈরি না হওয়ায় বছর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষককে। কৃষক ও হিমাগারের মালিকরা জানান, উৎপাদন ও হিমাগারের ভাড়াসহ প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আলুর জন্য চাষির খরচ হয় ৮৫০ টাকা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে সে আলুর দাম ৪০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি আলুর দাম মাত্র ৮ টাকা। খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে। (সূত্র : সমকাল)