পৌনে ৩ কোটি আত্মসাৎ : সাবেক প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি পলাতক
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১:৩৫:০৫ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক : এক স্কুলের আড়াই কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হক পারভেজ ও প্রধান শিক্ষক শফিকুর রহমান সিকদারের বিরুদ্ধে, চট্টগ্রামে।
বিদ্যালয়ের জমি কমিউনিটি সেন্টারের নামে ইজারা, বিশেষ ভাতার নামে প্রতি মাসে অর্থ উত্তোলন, টেন্ডার ও ভাউচার বিহীন নির্মাণ কাজ এবং কথিত ঋণ পরিশোধের নামে স্কুলের এফডিআর ভাঙাসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে এসব অর্থ হাতিয়ে নেন তারা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটি অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পর্যালোচনায়ও অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি বাদী হয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। এরপর থেকে পাঁচ মাস ধরে অভিযুক্ত দুজনই গা-ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশ বলছে, একাধিকবার অভিযান চালিয়েও তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, নগরীর পাথরঘাটা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ২ কোটি ৭৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০ মে নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়। স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি মো. ফজলে আজিজ বাবুল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে বিভিন্ন খাতে প্রধান শিক্ষক এককভাবে আত্মসাৎ করেন ২৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯২ টাকা।
এছাড়া প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে আত্মসাৎ করেন ২ কোটি ৫২ লাখ ৮৭ হাজার ৯২১ টাকা। এ নিয়ে স্কুলের শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। তদন্ত শেষে গত বছরের ১৬ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করে শিক্ষা বোর্ডের উপসচিব বেলাল হোসেন। প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২১ জুন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। একই বছরের ৮ নভেম্বর এডহক কমিটি গঠন করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মামলার এজাহার সূত্র জানায়, পাথরঘাটা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক শফিকুর রহমান সিকদার সাড়ে ৬ বছরে (২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন) বিশেষ ভাতার নামে অবৈধভাবে উত্তোলন করেন ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া স্কুলের বরাদ্দকৃত প্রধান শিক্ষকের পুরাতন ভবন ভেঙে লোহার এঙ্গেল ও ঢেউটিনসহ বিভিন্ন মালামাল নিজ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। যার বাজার মূল্য ৮ লাখ টাকা।
গত বছরের ২ জুলাই পূবালী ব্যাংকে স্কুলের অ্যাকাউন্ট থেকে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেন ২ লাখ টাকা। একই বছরের ২২ জুলাই স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৯৩ হাজার ৪৯২ টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নেন। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর স্কুলের অ্যাকাউন্ট থেকে পিয়নের নামে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে হাতিয়ে নেন দেড় লাখ টাকা। এছাড়া এসএসসি, জেএসসি ও পিএসসি শিক্ষার্থীদের সনদ প্রদান বাবদ ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকাসহ প্রধান শিক্ষক এককভাবে আত্মসাৎ করেন ২৩ লাখ টাকার বেশি।
পাথরঘাটা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা এডহক কমিটির সভাপতি মো. ফজলে আজিজ বাবুল বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে। বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ ছাড়াও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার শিক্ষা সনদ জালিয়াতির বিষয়ও উঠে এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত কোনোটিতে দ্বিতীয় বিভাগ থাকলে প্রধান শিক্ষক হতে পারবেন না এমন নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সাবেক প্রধান শিক্ষক এসএসসিতে তৃতীয় বিভাগে পাস করেও জালিয়াতি করে তার পদে বহাল ছিলেন।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলোও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দুজনই পলাতক। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে। (যুগান্তরের সৌজন্যে)