আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট তার স্ত্রীর ফোন হ্যাক করিয়েছেন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ১০:৩৪:৪৫ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম তার ষষ্ঠ স্ত্রী প্রিন্সেস হায়া বিন্ত আল-হুসেইনের ফোন হ্যাক করিয়েছিলেন। নিজের সাবেক স্ত্রী প্রিন্সেস হায়ার মোবাইল ফোন হ্যাক করে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুম। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উচ্চ আদালতের একজন সিনিয়র বিচারপতি এ মন্তব্য করেছেন। ইসরাইলের তৈরি স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে তার এজেন্টরা এই হ্যাকিংয়ের কাজ করেছে বলে বুধবার লন্ডনের একটি আদালত রায় দিয়েছে।
লন্ডনের হাইকোর্ট বলছে, ব্রিটিশ বিচারককে সাবেক স্ত্রী প্রিন্সেস হায়ার ফোন হ্যাক করার নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম। এছাড়া ডিভোর্স মামলা চলাকালীন হায়ার আইনজীবী বারোনেস ফিয়ানো এবং নিক ম্যানারের ফোনও টার্গেট করা হয়।
ব্রিটিশ আদালতে রায়ের পর জর্ডানের প্রিন্সেস ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদের সাবেক স্ত্রী হায়া বলেছেন, তিনি শিকারির কুনজরে পড়েছেন। তবে শেখ মোহাম্মদ বলেছেন, হ্যাকিংয়ের বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই।
ব্রিটিশ আদালত ফোন হ্যাকিংয়ের ঘটনাকে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ অপরাধ আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে।
শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম বিশ্বব্যাপী তার দেশকে বাণিজ্য এবং পর্যটনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর এক শীর্ষস্থানীয় গন্তব্যে পরিণত করার জন্য পরিচিত। ৭০ বছর বয়স্ক এই শাসক শত শত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক।
২০০৪ সালে জর্ডানের প্রয়াত বাদশা হুসেইনের মেয়ে ও জর্ডানের বর্তমান বাদশা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর সৎ বোন প্রিন্সেস হায়া বিন্ত আল-হুসেইনকে বিয়ে করেন শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম। তাদের দুই সন্তান আল-জলিলা এবং জায়েদ। ২০১৮ সালে তাদের দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরে। এরপর ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ছেলেমেয়েদের নিয়ে জার্মানি হয়ে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান।
গত বছর প্রিন্সেস হায়া তার স্বামী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের বিরুদ্ধে লন্ডনের আদালতে অপহরণ, জোরপূর্বক দেশে ফিরিয়ে নেওয়া, নির্যাতন এবং ভীতিপ্রদর্শন করার মামলা করেন। ২০২০ সালের মার্চে লন্ডনের হাইকোর্ট রায় দেয়, শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুম তার দুই কন্যাকে অপহরণ করে জোরপূর্বক তাদের ব্রিটেন থেকে দুবাইতে নিয়ে গেছেন, এবং তার সাবেক স্ত্রী প্রিন্সেস হায়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ভীতিপ্রদর্শন করে চলেছেন।
হাইকোর্ট একটি ফ্যাক্টফাইন্ডিং জাজমেন্ট বা এফসিজে প্রকাশ করে – যাতে এসব অভিযোগের সত্যতা মেলে।
উল্লেখ্য, খবরে প্রকাশ ৩৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে ২০১৯ সালে প্রিন্সেস হায়া দুই সন্তানসহ লণ্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তখন পলায়নের কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেন, “শেখ মোহাম্মদ তার বড় মেয়ে লতিফাকে বন্দী রাখা ও কারাগারে নির্যাতনের ব্যাপারে মিথ্যা বলেছেন। তাই তার সংসারে থাকা নিরাপদ না।” প্রিন্সেস লতিফা গত বছর তার বন্ধুকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে গোয়া থেকে আমিরাতের কমাণ্ডোরা ভারত সরকারের সহযোগিতায় ফেরত নিয়ে আসে। দুবাইয়ের এ কোটিপতি আমিরের ছয় শ কোটি টাকার সম্পদ আছে। তার আরেক মেয়ে প্রিন্সেস শামসা নিখোঁজ রয়েছে বলে মিডিয়ায় খবর এসেছে। ওদিকে শেখ মোহাম্মদ বলেছেন, “প্রিন্সেস হায়া বিশ্বাসঘাতক। তার অন্তরে যে চক্রান্তের ছল ছিল তা প্রকাশ হল।”