বিএনপি নেতারা আতংকে যেকারণে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০২ অক্টোবর ২০২১, ২:৪৬:০৮ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক : বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে করা ২০১৩-২০১৫ সালের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এসব রাজনৈতিক মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য, মধ্যসারি ও তৃণমূলের অনেক নেতাই আসামি। বিচারে অনেকের সাজাও হতে পারে এসব মামলায়। আইনি জটিলতায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির শীর্ষ এই দুই নেতা আইনি বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী নেতাদের অভিযোগ, আগামী দিনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবিতে আন্দোলন ঠেকানোর পাশাপাশি নির্বাচনে অযোগ্য করতেই সরকার তড়িঘড়ি করছে। তারা বলছেন, এসব মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করার পেছনে সরকারের দুরভিসন্ধি আছে। আইনজীবীরা বলছেন, একই ধরনের মামলা কোনোটির তারিখ পড়ছে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই। আবার কোনোটির ২০২২ সালের জানুয়ারিতে। তারিখ দ্রুত পড়ার বিষয়ে আদালত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মামলাগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে। বিশেষ উদ্দেশ্যে মামলাগুলোর দ্রুত বিচারকাজ করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্যতার বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা আছে-
‘তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।’
এ প্রসঙ্গে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনৈতিক মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রমে দ্রুত গতি দেখে মনে হচ্ছে, সরকারের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে। বিএনপি নেতাদের সাজা দিয়ে ভোটে অযোগ্য করতে চায় সরকার। এ ছাড়া বিএনপি যখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবছে তখনই মামলার বিচার কার্যক্রমে গতি আনা হয়েছে। কার্যত, আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করে বিএনপি নেতাদের ভয়ভীতি দেখাতেই এসব করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় লক্ষাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা-কর্র্মীরা পর্যন্ত এসব মিথ্যা মামলার আসামি। অনেকেই মামলার জালে জড়িয়ে বাড়িঘর ছাড়া। এসব করে তারা দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিচ্ছে।
জানা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় মির্জা ফখরুল ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, সিনিয়র নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ জোসেন, শওকত মাহমুদ, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলসহ মধ্যসারি ও তৃণমূলের সব নেতাই আসামি।
এর মধ্যে দুর্নীতির মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ কয়েকজনের বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রমের অবস্থা দেখেই বোঝা যায়, সরকারের কি উদ্দেশ্য। বিএনপি সামনে আন্দোলনে যাবে, সেটাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় সরকার। তাছাড়া দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সিনিয়র ও মধ্যসারির নেতারা যাতে অংশ না নিতে পারেন, সেই ধরনের অপতৎপরতাও চলছে। ন্যায় বিচার হলে এসব মামলা ধোপে টিকবে না।