তালেবান কাতারের কাছ থেকে ‘সঠিক ইসলামি আইন পরিচালনা’ শিখবে কি?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০১ অক্টোবর ২০২১, ১:২০:৪৪ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক : তালেবান পশ্চাদমুখী ব্যবস্থা কায়েম করেছে। নারী শিক্ষা নিয়ে তালেবানের অবস্থান অত্যন্ত হতাশাজনক। তালেবানের উচিৎ কাতারের থেকে শেখা যে কীভাবে সঠিকভাবে ইসলামি আইন পরিচালনা করতে হয়। বলেছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরাহমান আল-থানি। এ খবর আল-জাজিরা দিয়েছে।
আল-থানির বক্তব্য থেকে এটা পরিস্কার যে, মানে কাতারের বিবেচনায় তালেবান মোল্লারা ‘সঠিকভাবে ইসলামি আইন পরিচালনা’ জানেন না। কিন্তু দুনিয়া সাক্ষী তালেবানকে এতো দূর ‘সফল’ করতে মোটা দাগের ভূমিকা রেখেছেন কাতারের নেতৃবৃন্দ। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে এমন যে, তালেবান মোল্লাদের ‘অযোগ্যতা’ আগে বুঝতে পারার সাধ্য কি ছিল না কাতারি নেতাদের?
নারী শিক্ষা নিয়ে তালেবানের নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন আল-থানি। ক্ষমতা দখলের প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও এখনও আফগান মেয়েরা হাই স্কুলে যেতে পারছে না। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়েও নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সংগঠনটি। এসব কারণে দোহায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিভাগের প্রধান জোসেফ বোরেলের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের কঠিন সমালোচনা করেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে সম্প্রতি কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যা একেবারেই কাম্য ছিলনা।
এখন কি কাতারের নেতাদের কাছ থেকে কিছু শিখবেন তালেবান নেতারা? মনে হয় উত্তরটি নাবোধক। কেননা, তালেবান নেতারা নিজেদেরকে অযোগ্য মনে করেন না। তারা লড়াকু। তারা নিজেদের মধ্যেও লড়াই করতে পারেন। না, এটা কেবল পশ্চিমাদের অপপ্রচার বলেই নিজেকে মহাবীর মহাজ্ঞানী ভাবলে বোকার স্বর্গে বসবাস হবে। ইতিহাস আছে, মুসলিম নেতৃবৃন্দ নিজেদের মাঝে ক্ষমতার লড়াই করেছেন। বড় বড় মুসলিম ফকিহদের মাঝেও মতবিরোধ ছিল।
এখন কাতারের দাবী তারা ইসলামি সরকার পরিচালনা করছে। ওদিকে সৌদি আরবের রাজাও মনে করেন তার দেশ ইসলাম মোতাবেক চলছে। মিশরের হাসান আল বান্নার অনুসারী ‘ইখওয়ান’ নিজেদের ’সঠিক ইসলামি’ মনে করে। তালেবান নিজেদেরকে ‘সাচ্চা মুসলিম’ মনে করে।
এতো সঠিকের মাঝে আসল সঠিক কারা? এ প্রশ্ন একজন সাধারণ মুসলমানের মনে বা একজন ‘অমুসলিমের’ মনে জাগতেই পারে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে তালেবানের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তার অন্যতম মধ্যস্ততাকারী ছিল কাতার। এর অধীনেই আফগানিস্তান ছেড়ে যায় মার্কিন সেনারা। আর সেই সুযোগেই দেশটি দখল করে ক্ষমতায় আসে তালেবান। কাতার এরপরেও তালেবানের সঙ্গে অন্য সব দেশের থেকে বেশি যোগাযোগ রেখেছে। কাবুল বিমানবন্দর চালু করতে প্রকৌশলী দল পাঠিয়েছিল দেশটি। তবে তালেবানের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে কাতারের হতাশা প্রকাশ পেতে দেখা যাচ্ছে।
কাতারের হতাশা দূর করতে এগিয়ে আসবে কি তালেবান? নাকি এ মতবিরোধ অন্যতর লেয়ার উন্মোচন করবে? আল-থানি বলেছেন, আমাদের উচিৎ তালেবানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তাদেরকে এমন সব পদক্ষেপ না নিতে আহ্বান জানানো। আমরা তালেবানকে বলতে চাই, তাদের দেখা উচিৎ কীভাবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ইসলামি আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। তারা কীভাবে নারী ইস্যুতে কাজ করছে। উদাহরণ হিসেবে কাতারের কথা তোলেন আল-থানি। বলেন, কাতার একটি মুসলিম রাষ্ট্র। এখানে ইসলামি ব্যবস্থা কায়েম রয়েছে। কিন্তু এখানে কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষায় ও সরকারে নারীদের সংখ্যা পুরুষ থেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
ইতিহাসের আলোকে দেখলে এটা পরিস্কার, তত্বীয় অবস্থান তাদের অভিন্ন হওয়ার দিকে যাবে না। কেবল বিশ্ব রাজনীতির গুটি কখন কোন্ দিকে যায়, এর হিসাবে তালেবান ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যে চীনের সাথে যেভাবে ‘দোস্তি’ করেছে, সেভাবেই ‘দোস্তি’ রক্ষা করতে চাইবে কাতার ও কাতারের ‘দোস্ত’দের সাথে।




