শাবিপ্রবি-র শতাধিক সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা জার্মানির লিস্টেনবার্গ পার্কে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৪৬:৫৯ অপরাহ্ন
রাজস্রী রাজু, জার্মানি থেকে : জার্মানির বার্লিন, ব্রান্ডেনবুর্গসহ আশপাশের শহরগুলোতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাস্ট) শতাধিক সাবেক শিক্ষার্থীর বাস। প্রবাস জীবনে কর্মব্যস্ততার ফাঁকে ক্যাম্পাসের সুখকর স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি এক হয়েছিলেন এই শিক্ষার্থীরা।
১১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) জার্মানির রাজধানী বার্লিন শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার লিস্টেনবার্গ পার্কে আয়োজন করা হয় এই মিলনমেলার।
দুপুর ১টার দিকে বার্লিন, ব্রান্ডেনবুর্গসহ আশেপাশের এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা পার্কে জড়ো হতে থাকেন। সবাই এক হতেই ধুমায়িত চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সবার মুখে মুখে ক্যাম্পাসের সেই পুরোনো দিনের গল্প শুরু হয়। একে একে চোখজুড়ানো সেই এক কিলো, ছোট্ট টিলার ওপর সবুজের মাঝে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার, হল, হ্যান্ডবল মাঠ, লাইব্রেরি বিল্ডিং, গোলচত্বর, কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম, শিকড়, নোঙ্গর, মাভৈ, রিম, সুপা, দিক থিয়েটারসহ ক্যাম্পাসের অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর গল্প যেন থামতেই চায় না। জম্পেশ আড্ডা, খানিক খুনসুটি যেন ক্যাম্পাসের সেই কবির কিংবা মাসুক মামার টংয়ের আবহ ফিরিয়ে নিয়ে আনে।
এরই মাঝে হঠাৎ নেমে আসে ঝুম বৃষ্টি। এই বৃষ্টি মনে করিয়ে দেয় বৃষ্টিতে এক কিলোতে হাঁটার ফেলে আসা দিনগুলো। ঘুরে ফিরে ক্যাম্পাসের বন্ধু-বান্ধবদের খোজঁ-খবর নেওয়া। যেন মনে হয় এইতো সেইদিন, আবার যদি ফিরে যাওয়া যেত বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর সেই পুরোনো দিনগুলোতে। আড্ডা শেষে দুপুরে পরিবেশন হয় দেশি খাবার।
মধ্যাহ্ন ভোজের পর শুরু হয় বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরিচয় পর্ব ও ফটোসেশন। এরপরই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্ব। এতে দরাজ কণ্ঠে গান গেয়ে শোনান ক্যাম্পাসের সবার প্রিয়মুখ পলাশ। পলাশের গানের সাথে সুর মিলিয়ে সম্মিলিত কণ্ঠে সবাই গেয়ে ওঠেন- আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।
মুহূর্তের মধ্যে সবাই যেন হারিয়ে গিয়েছিল ক্যাম্পাসের পুরোনো স্মৃতির পাতায়।
শিক্ষার্থীর অধিকাংশই জার্মানিতে এসেছেন মাস্টার্স করতে। পাশের কটবুস শহর থেকে এই মিলনমেলায় যোগ দিয়েছিলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিয়াসাত, বিবিএর আসিফ, ইউরোপা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত এন্থ্রোপলোজির সৌমেন, সুদূর ব্রেমেন শহর থেকে কম্পিউটার সায়েন্সের মুকুল। এছাড়াও যোগ দিয়েছিলেন তৌহিদ, নওশাদ, পার্থ , রাতুল, আনোয়ার, নোমান, কামালসহ গোটা পঞ্চাশেক সাস্টিয়ান।
বার্লিনে শশী কিংবা হিমেলের মতো অনেকেই করছেন চাকরি-বাকরি। দেশ থেকে সাস্টের অনেক কম্পিউটার সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট এসেছেন সরাসরি চাকরি নিয়ে। আর শামীমের মতো পুরোদস্তুর সংসারী সাস্টিয়ানদের সাথে গুটি গুটি পায়ে এসেছিল সেকেন্ড জেনারেশন।
অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন যাবত জার্মানিতে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন সাস্টিয়ান জিই’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সবার প্রিয়মুখ রসায়ন বিভাগের ৫ম ব্যাচের ছাত্র ড. নিধু লাল বণিক, যিনি সবার কাছে নিধু দা নামে পরিচিত। বর্তমানে তিনি একজন পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে ইউরোপিয়ান কমিশনে কর্মরত।
সমাপনী বক্তব্যে তিনি অনুষ্ঠান সফল করার জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতে সাস্টিয়ান বন্ধনকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে পরবর্তী কর্মসূচী এবং নতুন সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই ধরনের আয়োজনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গ্রাফিতির নগর বার্লিনে ধীরে সন্ধ্যা ঘনায়, একরাশ আনন্দ ও একবুক আশা নিয়ে সবাই পা বাড়ায় নীড়ের পানে। ফিরতে ফিরতে কানে বেজে ওঠে পুরোনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়/ ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।