রিমাণ্ড শেষে ডিবির ৫ পুলিশ কর্মকর্তা কারাগারে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ আগস্ট ২০২১, ১১:৩৮:১১ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক : মহাসড়কে গাড়ি থেকে ২০টি স্বর্ণবার ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে দায়ের করা ডাকাতির মামলায় ১৬৪ ধারায় ফেনী ডিবি পুলিশের দুই গাড়ি চালকের সাক্ষ্য আদালতে রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ফেনীর সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের আদালতে পুলিশের দুই গাড়ি চালক মঈনুল হোসেন ও আমজাদ হোসেন তুহিনের সাক্ষ্য রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম।
পিআইবি পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, স্বর্ণ ডাকাতির সময় ব্যবহৃত দুইটি গাড়ির চালক এ মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী। আসামি পুলিশ বিধায় পরবর্তীতে চাপে স্বাক্ষীরা ভয়ে সত্য গোপন করতে পারে। সে কারণে তাদের সাক্ষ্য আদালতে রেকর্ড করা হয়েছে। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ জাকির হোসাইন দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে ১৬৪ ধারায় তাদের সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। আদালতে গাড়ি চালকরা সাক্ষ্যে জানান, দুই গাড়ি চালক স্থানীয়। তাদের গাড়ি রিক্যুইজিশন করা ছিল।
জবানবন্দিতে বলা হয়েছে, স্বর্ণ বার ডাকাতির পর ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাশকে ফেনীর সীমানা পার করে দেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি সাইফুল। তার সঙ্গে ছিলেন এসআই মোতাহের হোসেন, মিজানুর রহমান ও নুরুল হক। ওই ব্যবসায়ী যাতে অন্য কোনো পুলিশ সদস্যের হাতে আটক না হন তা নিশ্চিত করতেই এই কৌশল নেন তারা। এর আগে আসামিদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ে তাদের ঘটনাস্থলে নেয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম আরও জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের আগে আসামি ডিবির বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক মোতাহের হোসেন, নুরুল হক ও মিজানুর রহমানকে মামলার তদন্তের স্বার্থে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর ফতেহপুর ফ্লাইওভার, মোহাম্মদ আলী বাজার, খাইয়ারা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই স্থানগুলো গত ৮ আগস্ট চট্টগ্রামের সোনা ব্যবসায়ী গোপালের গাড়ি থামিয়ে ২০টি সোনার বার লুটের ঘটনায় সম্পৃক্ত।
এদিকে, দুই দফায় ৬ দিনের রিমান্ড শেষে ডিবির বরখাস্ত ৫ পুলিশ কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতোহের হোসেন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) অভিজিৎ বড়ুয়া ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ রানাকে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হয়। ফেনীর সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন আসামীদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। রাতেই তাদের জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম।
এর আগে স্বর্ণবার ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী ও মামলার বাদির সাবেক ব্যবসায়ীক অংশীদার (পার্টনার), পুলিশের সোর্স ছমদুল করিম ভুট্টো গত রোববার ১৫ আগস্ট আদালতে ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃক্ততার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
অপরদিকে দুই দফায় ৮ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার বিকেলে স্বর্ণবার ডাকাতি মামলার প্রধান আসামি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বরখাস্ত পরিদর্শক (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম ভূইয়াকে আদালতে তোলা হবে।
মামলার এজহার ও তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাশ তার ২০টি স্বর্ণের বার লুটের অভিযোগে গত ১০ আগস্ট ফেনী মডেল থানায় ডাকাতির মামলা দায়ের করেন। মামলায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম ভূইয়া, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতোহের হোসেন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) অভিজিৎ বড়ুয়া ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ রানাকে আসামি করেন।
ডিবি পুলিশের অভিযুক্ত ৬ কর্মকর্তাকে ওই দিন রাতেই গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। একই দিন অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম ভূইয়ার বাসা থেকে ১৫টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন ডিবির অভিযুক্ত ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে জেলা পুলিশ। ওই মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের বরখাস্ত ৬ কর্মকর্তা ও মামলার বাদির সাবেক ব্যবসায়ীক অংশীদারসহ (পার্টনার) এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্তে জেলা পুলিশের শীর্ষ তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ।