ইসরাইলের স্পাইওয়্যার পেগাসাস যেভাবে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণে নেয়
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুলাই ২০২১, ১১:৪৪:২০ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক: বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের স্মার্টফোন বেশ স্মার্টলি (চতুরতার সাথে) নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে ইসরায়েলের তৈরি স্পাইওয়্যার পেগাসাস। নিয়ন্ত্রণে নেয়া ফোনে কথা বলা, ভয়েস আদান-প্রদান, ফোন তালিকাসহ এমনকি ফোনটি কখন কোথায় ছবি তুলছে, সেটাও হাজার হাজার মাইল দূর থেকে পেয়ে যাচ্ছে গ্রিক মিথের ডানাঅলা ঘোড়া (প্যাগাসুস) স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে। বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণি-পেশার মানুষের ফোনে এই আড়িপাতার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও ধর্মীয় নেতা।
বিশ্বের অন্তত ৪৫টি দেশের নাগরিক এই আড়িপাতার শিকার হয়েছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানসহ ১৭টি সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
যেভাবে স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রণ নেয় ‘পেগাসাস’:
তথ্য ফাঁসের জন্য প্রথমে একটি ভুয়া হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট তৈরি করে অন্য একটি হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে ভিডিও কল দেয়। যখন কোনও সন্দেহহীন ব্যবহারকারীর ফোন বেজে ওঠে, তখন ওই নম্বরে একটি ক্ষতিকর কোড চলে গিয়ে স্পাইওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যায়। কেউ ফোন রিসিভ না করলেও সফটওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে।
এরপর আক্রমণকারী ফোনের পুরো সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এটা এতটাই ভয়ঙ্কর যে, একবার স্পাইওয়্যারটি ইনস্টল হয়ে গেলে সহজেই যে কারও হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজিং ও কথা বলা, ভয়েস কল, পাসওয়ার্ড, কন্টাক্ট তালিকা, বিভিন্ন ইভেন্টের ক্যালেন্ডার, ফোনের মাইক্রোফোন এমনকি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ ও তাদের হাতে চলে যায়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব পরিচালনাকারী ক্লডিও গার্নিয়েরি গার্ডিয়ানকে বলেন, একবার কোনও ফোনে (স্মার্টফোন) পেগাসাস সফটওয়্যার ঢুকে গেলে এনএসও’র গ্রাহক পুরো ফোনটির দখল পেয়ে যায়।
‘ফোনের মালিকের মেসেজ, কল, ছবি, ই-মেইল সবই দেখতে পাবে, গোপনে ক্যামেরা কিংবা মাইক্রোফোন চালু করতে পারবে। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যালের মতো এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপের বার্তাগুলোও পড়তে পারবে’ যোগ করেন তিনি।
এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বরের একটি তালিকা ফাঁস হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে এনএসওর গ্রাহকেরা এসব নম্বরে আড়ি পেতেছে।
তবে ইসরায়েলি কোম্পানি ‘এনএসও’ এক বিবৃতিতে বলেছে, তালিকায় যে ৫০ হাজার ফোন নম্বরের কথা বলা হচ্ছে, সেটা ‘অতিরঞ্জিত’। তারা ৪০টি দেশের শুধু সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এই স্পাইওয়্যার বিক্রি করেছে। অর্থাৎ ৫০ হাজার সঠিক না হলেও, তারা যে স্পাইওয়্যারটি ব্যবহার করছে, বিক্রি করছে, তা তারা স্বীকার করছে। তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান।