‘দুই ডোজ নেওয়ার পর তারাই এখন বড় বড় কথা বলছেন’
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুন ২০২১, ১২:৪২:০৩ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ভ্যাকসিন সংগ্রহের যথাসাধ্য চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ভ্যাকসিন ঘিরে যে বিশ্ব পরিস্থিতি, সেটিও অনুধাবন তারপর যেন কথা বলা বা সমালোচনা করা হয়, সে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, যাদের আমরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে বা আগে-ভাগে ভ্যাকসিন দিয়েছি, দুই ডোজ নেওয়ার পর তারাই এখন বড় বড় সমালোচনার কথা বলছেন। একে-ওকে গালি দিচ্ছেন। অনেক কিছু বলেন। আমরা সবই শুনছি। আর সে কারণেই অবাক লাগে। করোনা ও ভ্যাকসিন নিয়ে যে বিশ্ব পরিস্থিতি, এটা তো বুঝতে হবে!
বুধবার ২৩ জুন বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
এর আগেও করোনাকালীন গণভবন থেকে বের হতে না পারাকে বন্দি জীবনের সঙ্গে তুলনা করেছেন শেখ হাসিনা। এদিনও তিনি একই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের সবার জীবনকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে। সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি বোধহয় আমি। কারণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা আত্মীয়-স্বজন— কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ নাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছিলাম, যার মাধ্যমে এখন আপনাদের সঙ্গে বসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার সুযোগ পাই। রাষ্ট্রের কর্মসূচিও পালন করার সুযোগ পাই। তারপরও সেটি ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। আজ ৯৯ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। বিদ্যুৎ সুবিধা আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।
দেশের উন্নয়নে তৃণমূল মানুষের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উন্নয়নের কোনো ম্যাজিক না, এটা আমাদের পরিকল্পনা। এটা আমাদের দর্শন, আদর্শ। আমাদের গ্রামের মানুষ, তাদের সবার আগে গুরুত্ব দিয়েছি, যেটি জাতির পিতা চেয়েছিলেন। গ্রাম থেকে উন্নয়ন করা, গ্রামের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখের সাথী হয়ে তাদের দুঃখ দূর করা— আমরা ঠিক সেভাবে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি বলেই কিন্তু আজকে আমরা ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছি, এগিয়ে যেতে পারছি। এবং এ-ও জানি, আমরা পারব।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের যথেষ্ট কষ্ট দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সমস্যা। তারপরও আমরা একদিকে অর্থনৈতিক কর্মসূচির গতিটা সবসময় ঠিক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তারপরও হয়তো যে লক্ষ্যটা ছিল, সেটা পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু তারপরও বলব, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই এখন সবথেকে ভালো অবস্থানে আছে এবং থাকবে।
ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এই ভ্যাকসিন যখন গবেষণার পর্যায়ে ছিল, তখন থেকেই আমরা প্রতিটি জায়গায় যোগাযোগ করেছি। পৃথিবীর অনেক দেশ এখনো ভ্যাকসিন দিতে পারেনি। আমরা কিন্তু নিয়ে এসে দেওয়া শুরু করেছি। হ্যাঁ, ভারতে যখন মহামারি ব্যাপক আকারে শুরু হলো, তারা ভ্যাকসিন রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম। কিন্তু এখন আমরা আবার ভ্যাকসিন কিনতে শুরু করেছি। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে যেন এই ভ্যাকসিন পৌঁছে যায়, তার ব্যবস্থা আমরা পর্যায়ক্রমিকভাবে নিচ্ছি এবং সেটা আমরা করবই।
ভ্যাকসিন নিয়ে যারা সরকারের সমালোচনা করছেন, তাদের নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, তাদের আমরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে ভ্যাকসিন দিয়েছি। তারা দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আর এরপর তারাই আবার বড় বড় কথা বলতে শুরু করেছেন। তারা যখন ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তখন তো এসব কথা বলেননি! তাদের বিশ্ব পরিস্থিতিটাও তো বুঝতে হবে। যে ভ্যাকসিন আমরা চার ডলারে কিনেছি, এখন তা ১৫ ডলারে কিনতে হচ্ছে। সামনে হয়তো আরও বেশি দাম হবে। আমরা তো আগেই টাকা-পয়সা দিয়ে সব চেষ্টা করে রেখেছিলাম। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি তো আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই!
দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের পথ সুগম করতেও সরকার কাজ করছে বলে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে যেন এখন আমাদের এখানে গবেষণা হয়, আমরা নিজেরা যেন ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারি— এই ব্যবস্থা আমরা নেব। আমরা কিভাবে এখানে ভ্যাকসিন তৈরি করব, এর জন্য ইনস্টিটিউট তৈরি করা, গবেষণা করা— এর জন্য যা কিছু প্রয়োজন, সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। এ ধরনের পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। কাজেই যারা সমালোচনা করেন, তাদের বলব— একটু ধৈর্য ধরুন। দেখুন, আমরা কতটুকু কী করতে পারি। তারপর সমালোচনা করুন।
গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। সভায় ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বেন চার দশক: সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটির সম্পাদনা করেছেন দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, মহিলা সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী।