পাঁচটি কবিতা ➡️ হাসান শাহরিয়ার
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুন ২০২১, ৮:২৪:২৪ অপরাহ্ন
পাঁচটি কবিতা ➡️ হাসান শাহরিয়ার
মরা নক্ষত্র
জুনের বৃষ্টি। হঠাৎ এক মরা নক্ষত্রের খবর পাওয়া গেল।
ঐ নক্ষত্রের ছাইয়ের মত আমি, এইটা বুঝতে পারো তুমি?
আমার সকল ইচ্ছা আর আকুতি মিলাইয়া যাইতেছে কই?
জুনের বৃষ্টিতে তোমার ঘরের মত আমার মনটাও ভিজা
যেন ধূসর পান্ডুলিপি, হাহাকার আর বিলাপের ব্যবচ্ছেদ।
তোমার ঘর থেইকা এখন কতদূরে আমি…
তবুও যেইভাবে শুনতেছি ওই কুশিয়ারার ডাক
যেইভাবে ভাইসা থাকতেছে তোমার অমাময়ী মুখ
অন্ধকার আকাশে মেঘ ধইরা বইসা থাকা আবছা মল্লার
যেন ওই মুখে ঝরতেছে মরা নক্ষত্রের সকাতর ইতিহাস
কোন ভাষা নাই, নাই বর্ণ, শব্দ নাই। নাই বাক্য বিন্ন্যাস…
শুধু আকার___ কী নিরাকার
দৃশ্য যেমন বিনীতভাবে শুধু অদৃশ্যের স্তুতি করে
তোমার মুখে ঝরতেছে মরা নক্ষত্রের সকাতর ইতিহাস।
জুন ২০২১
রেইনম্যান রেইনম্যান, আই লস্ট মাই হোম
হাইওয়ে বাসে বইসা একটা ডেড সিটির দিকে যাইতেছি
প্রাচীন মমির মত বিষণ্ণ ভোরে।
বৃষ্টি পড়তেছে। ঘন বৃষ্টি। ঘনঘোর বৃষ্টি।
মুসল্লিরা ফিইরা গেছেন ঘরে।
বাসের ফ্রন্ট গ্লাস ধইরা এখনো ঝুলতেছে কিছু অন্ধকার।
পেন্ডুলামের মত দুলতেছে ওয়াইপার, হাবিল আর কাবিল।
বৃষ্টি যেন বখতিয়ারের ঘোড়া। ঝরটগবগ ঝরটগবগ ঝর।
ক্রসিংয়ের সময় ট্রাকের হেডলাইট জ্বলতেছিল যখন-
কার মুখ দেখা গেল? কী অসম্ভব বিভ্রম আমার!
বিশাল এক সাইনবোর্ড খালি পইড়া আছে হাইওয়ের পাশে।
ইচ্ছা হইতেছে একটা ছাতা লইয়া ওইখানে উইঠা যাই আমি।
নিঃসঙ্গ সাইনবোর্ড ধইরা সকাতরে ঝুইলা থাকি আমি।
রেইনম্যান রেইনম্যান, আই লস্ট মাই হোম।
আগস্ট ২০১৭
মাগরিবের সন্ধ্যা
মাগরিবের সন্ধ্যা, বৃষ্টি শুরু হইলো খুব।
তওবা আর শোকরানার ভিতর
মোনাজাত শেষ করলেন বিনীত মওলানা।
একটা বাচ্চা মাছির মুখ ভাইসা উঠলো কাছে
দ্বিধাগ্রস্থ, আত্মবিশ্বাসহীন
তার নিরেট স্বপ্ন যেন আমি, তার অবসাদের কারাগার।
জানালা ধইরা বিলাপ করতেছে শোক, ভিজা চোখ…
অন্ধকারে আবছা হইতেছে মানিক পীরের টিলা।
আমার তখন তোমার কথা মনে হইলো খুব।
তুমি কি ঝড়ের আভাস? তোমারে পাত্তা না দিয়া
মাগরিবের বৃষ্টিতে ভিজতে পারবো না আমি?
বিষণ্ণ ভাঁড়ের মত তোমার আকাশে ভাসতেছে চাঁদ…
মাগরিবের সন্ধ্যায় এক অলাতচক্রে তুমি খুঁজতেছ পথ
দরজার ওইপাশে তোমার বিরহ আমি পাইতেছি টের…
এপ্রিল ২০২১
বৃষ্টি—২
তখন বৃষ্টি হইতেছিল।
ভাবতেছিলাম, ভিজতে ভিজতে তোমার কাছে যাবো।
এক হাতে কুশিয়ারা নিবো, অন্য হাত খালি।
বৃষ্টি হইতেছিল।
ঘাটে খালি নৌকা, ভিজতেছে গোলাপি শাপলা ফুল।
এক হাতে কুশিয়ারা আছে, অন্য হাত খালি।
বৃষ্টি ঝরতেছিল।
মনে হইলো, একটু কাঁদবো না কি এক উদাস টিলার মত?
বৃষ্টি শেষ হইলো
আমার সকল শোক তোমার স্বগতোক্তির মুখোমুখি…
ফেব্রুয়ারি ২০২১
স্কুবা ডাইভার
অনেকদিন পর তোমার লগে কথা হইলো
বৃষ্টির ভিতর।
যেন নিখোঁজ এক স্কুবা ডাইভার
আচমকা ভাইসা উঠছে তার প্রেমিকার মনে।
বৃষ্টি ঝরতেছিল
তুমি হারাইয়া ফেলছো পথ।
যেন আমি তোমারে ডাইকা বলবো- পথের দিশা আছে।
আমি তোমারে বলতেছি, পথের দিশা নাই।
ইন ফ্যাক্ট, কোন পথ কি আছে?
তোমারে ধইরা পার হবো আমি, আমারে তুমি।
মুখোমুখি বিরতি। শূন্যস্থানের অবহার।
বিনীত এক জ্বিনের মত অতি সতর্ক থাকতেছি
সবকিছু পাশ কাটানোর পরে
যেমন মাফিয়াক্ল্যান, অনুগত প্রচুর কুকুর
আস্তে আস্তে মাইপা নিতেছি তোমার লুকানো দ্বিধা।
টলটলে চোখ তোমার
ভাবছো কোনদিন- ‘এতদিন কেমন ছিলাম’?
ছিলাম না তেমন। কী বলবো?
ভিতরে হল্লা করতেছে সময়ের বেকার ডাকপিয়ন।
তোমারে হাতে লইয়া ওইখানে যাইতেছে সে
তোমারে হাতে লইয়া ফের এইখানে আসতেছে সে
দরজা নাই। কোথায় দিবে টোকা?
মনে হয়, তোমারে হাতে লইয়া ঘুরতেছি আমি।
ফেব্রুয়ারি ২০২১