শরীরের সব খবরদাতা ই-স্কিন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০২১, ১২:০২:৫৪ অপরাহ্ন
অনুপম ডেস্ক: ই-স্কিন মানে ইলেক্ট্রনিক স্কিন বা বৈদ্যুতিক ত্বক, একটি ফিল্মের টুকরা, যা শরীরে লাগিয়ে রাখা যায়, যা থেকে চিকিৎসকেরা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিতে পারবেন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এ প্রযুক্তি সহজলভ্য হতে পারে। গবেষকেরা বলছেন, ই-স্কিন শরীরে লাগিয়ে রাখা যাবে সহজেই। এতে হৃৎস্পন্দন, ডায়াবেটিসসহ নানা তথ্য দূরে বসেই পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন চিকিৎসকেরা। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন ই-স্কিন নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জাপানের গবেষকেরা সম্প্রতি অত্যন্ত হালকা-পাতলা ই-স্কিন তৈরি করেছেন, যা ওয়াটার স্প্রে ব্যবহার করে বুকের কাছে লাগিয়ে রাখা যাবে। এই ই-স্কিন এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পরিধান করা যাবে।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক টাকাও সমেয়া এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক। সিএনএন বলছে, এই ই-স্কিন অনুমোদন পেতে অবশ্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হবে। তবে সমেয়া বলেছেন, তিনি এর সফলতা নিয়ে আশাবাদী। ই-স্কিন তৈরির ক্ষেত্রে তিনি সহযোগীদের সঙ্গে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
ই-স্কিন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ নমনীয় উপাদান পলিভিনাইল অ্যালকোহল, যাতে স্বর্ণের একটি স্তর থাকে। ই-স্কিন মূলত পরিধানযোগ্য সেন্সর, যা হৃৎস্পন্দন ও মাংসপেশি নড়াচড়ার বৈদ্যুতিক সংকেত ধরতে পারে। ছোট্ট একটি তারহীন ট্রান্সমিটার বুকের কাছে বাঁধা থাকে, যা হৃৎস্পন্দনের তথ্য নিকটস্থ স্মার্টফোন বা ল্যাপটপে বা ক্লাউডে পাঠায়। এতে অনেক দূরে বসেও চিকিৎসক সে তথ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
সোমেয়া সিএনএনকে বলেছেন, ই-স্কিন হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের পরিধানযোগ্য উপকরণ। আজকের মূলধারার পরিধানযোগ্য পণ্যের ভেতর রয়েছে স্মার্ট ওয়াচ ও গ্লাস যা ওজনে ভারী। কিন্তু ই-স্কিন অত্যন্ত পাতলা, হালকা, নমনীয় ও টেকসই।
সাম্প্রতিক ই-স্কিন নকশা করা হয়েছে মূলত জাপানের দ্রুত বেড়ে যাওয়া বয়স্ক জনগণের কথা মাথায় রেখে। গবেষক সোমেয়া বলেন, দূরে বসে কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিখুঁতভাবে দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ই-স্কিন টেকসই বলে এটি বিভিন্ন ক্রনিক রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধের মতো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া এটি অসুস্থতার প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
সোমেয়া জাপানের ডাই নিপ্পন প্রিন্টিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এলইডি ডিসপ্লে তৈরি করছেন, যা ব্যবহারকারীর হাতের পেছনে পরিধান করা যাবে। বয়স্ক মানুষ, যাঁরা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন না, তাঁদের এই স্ক্রিনে ই-স্কিনের তথ্য ছবিসহ বড় করে তুলে ধরা হবে। এতে সাধারণ ইমোজি পাঠিয়ে যোগাযোগের ব্যবস্থাও থাকবে। এতে বয়স্করা একাকী অনুভব করবেন না।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ই-স্কিনের বাজার ছিল ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ই-স্কিন অত্যন্ত নমনীয়, স্বয়ংক্রিয় মেরামত করার ক্ষমতা থাকায় এটি রোবোটিকস, প্রসথেটিক্স এবং স্বাস্থ্যের যত্নে ব্যবহারযোগ্য।
সোমেয়া ও তাঁর গবেষক দল রোবটের জন্য ২০০০ সাল থেকে ই-স্কিন তৈরি করে আসছে। এর বাইরে তাদের গবেষণাগার থেকে অন্য দুটি কোম্পানির জন্য পণ্য তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাইনটেলের জন্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রয়োগের উপকরণ ও জেনোমার জন্য স্মার্ট পোশাকের উপকরণ।
স্টার্টআপ জেনোমা তাদের তৈরি পাজামায় ই-স্কিন ব্যবহার করেছে, যা বিছানায় তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এ ছাড়া স্পোর্টসওয়্যারে ফিটনেস মনিটরিংয়ের জন্য ই-স্কিন ব্যবহার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি তাইকোয়ান্দো প্রশিক্ষক মানা উমেহারার সঙ্গে যৌথভাবে ই-স্কিনযুক্ত পোশাক তৈরি করেছে, যা অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্স বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। এ প্রযুক্তি শরীরের নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করে সে তথ্য ল্যাপটপে পাঠায়। বিশেষ সফটওয়্যার সেই তথ্য দৃশ্যমান করে তোলে। সোমেয়া বলেন, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া পর্যবেক্ষণে সাধারণত একাধিক ক্যামেরার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ই-স্কিন ব্যবহারে তার আর প্রয়োজন নেই।
করোনা মহামারির সময় উমেহারা তাঁদের কোচের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি। কিন্তু ই-স্কিন ব্যবহার করে তথ্য পাঠাতে পেরেছেন, যাতে দূরে বসেও তাঁর পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণ করা যায়।
সিএনএকে উমেহারা বলেন, ‘এখন আমি নিখুঁত নির্দেশনা পেতে পারব। আমাকে কতটুকু অগ্রসর হতে হবে বা কতটা শক্তিশালী হতে হবে, তার নির্দেশনা আমি পাব।’
ই-স্কিন উদ্ভাবক সোমেয়া বলেন, ফাইভ–জি প্রযুক্তি পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির ওপর দারুণ প্রভাব রাখবে। এর মধ্যে ই-স্কিনও থাকবে। দ্রুতগতিতে ব্যাপক তথ্য স্থানান্তরের ফলে রিয়েল টাইমে স্বাস্থ্য–সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।
সোমেয়ার ভাষ্য, ই-স্কিনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের বিভিন্ন ধরনের তথ্য পর্যবেক্ষণ করা। তা যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ছাড়াই করা যেতে পারে। সূত্র: দ্য ভার্জ, সিএনএন, প্রথম আলো