বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব: শাহ শামীম আহমেদ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২১, ৮:১১:১৮ অপরাহ্ন
বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব
➡️ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আদর্শের জন্য লড়াই করে শহীদ হয়েছেন ১৫ আগস্ট ১৯৭৫। শত্রুরা ভেবেছিলো তাকে চিরতরে এ ধরা থেকে বিদায় না করতে পারলে আদর্শকে নির্মূল করা যাবে না। তাই শেখ মুজিবুর রহমানকে যতটুকু বিপদ হিশেবে চিহ্নিত করেছিলো ততটুকু তাঁর আদর্শকেও ভয় করেছিলো শত্রুরা। এ কারণে দেখতে পাই শেখ মুজিবুর রহমানের তিরোধানের পর পরই ১৫ আগস্টসহ ৪ নভেম্বরের ঘটনাবলিতে নিহতদের বিচার তামাদি করতে ইন্ডিমিনিটি বিল পাশ করা হয়। ইন্ডিমিনিটি বিলের মাধ্যমে আদর্শকে মাটিচাপা দেয়ারই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিলো। যাতে আদর্শকে ধারণ করে কেউ আর দাঁড়াতে না পারে সে ব্যবস্থাই পাকাপোক্ত করে শত্রু পক্ষ। কিন্তু ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ইতিহাস সত্যানুন্ধানের সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায়, সত্য উজ্জীবিত থাকেই। এছাড়া কোনো আদর্শবাদী নেতাকে মেরে ফেললেই যে তাঁর আদর্শেরও মৃত্যু ঘটবে এটা ইতিহাস প্রমাণ করে না। এ রকম সক্রেটিস থেকে শুরু করে বহু মনিষীকে প্রাণ দিতে হয়েছে, কিন্তু তাদের আদর্শের মৃত্যু ঘটেনি। বাঙালি জাতিয়তাবাদ, ধর্মনিরেপক্ষতা,গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল ভিত্তি। এই মৌলিকধারণাকে বাস্তবায়ন করার যে অঙ্গীকার মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছিলো দেশ ও জাতি বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু, আদর্শের নেতা। কায়েমী স্বার্থবাদী মহল মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত এই চেতনা ও আদর্শের প্রধান শত্রু ছিলো, যে শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করেছে সর্বস্তরের বাঙালি। বাংলাদেশ স্বাধীনতালাভ ছিলো সেই কায়েমী ¯া^র্থবাদীদের পরাজয়,বাঙালির বিজয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালির বিজয়ের প্রতীক, আদর্শ ও চেতনার প্রতীক। তাঁর আদর্শই তাকে জাতির পিতার মর্যাদার আসনে অধিষ্টিত করে। এই মর্যাদাটিও শত্রুরা মেনে নিতে পপরেনি। তাই স্বাধীনতার শত্রুরা সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নির্মমভাবে কুন করে। এরপরও ক্ষান্ত হয়নি তারা। মুজিবাদর্শের অপরাপর সৈনিক জাতীয় চার নেতাকে চিহ্নিত করে তাদের বাধা হিশেবে। এই আদর্শবাদী রাজনীতিকরা আদর্শের শুধু মশালই ছিলেন তা নয়, আদর্শের যোদ্ধাও ছিলেন। সর্বোপরি আদর্শবাদী যোদ্ধা ছিলেন বঙ্গবন্ধু, জাতির কান্ডারি।
তাঁর শাহাদাত দিবস ১৫ আগস্ট। এদিনটি জাতীয় শোক দিবস। জাতির জন্য এদিনটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। যে অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে, ক্রীড়নকরা জাতিকে এবং জাতির নাম বাঙালি শব্দটিও মুছে দিয়ে বাংলাদেশী শব্দ চাপিয়ে দিয়েছিলো। নিশ্চিহ্ন করতে চেষ্টা করেছিলো মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ও ইতিহাসকে। তাই,এই মহান নেতার তিরোধান দিবসটি স্বভাবিক কোনো দিবস নয়, শোকাবহ, শোকে মুহ্যমান। আজ ২০১৫ সাল। স্বাধীনতা, জাতির পিতা ও জাতির নাম মুছে দেয়ার অপচেষ্টার চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত। এই কায়েমী স্বার্থবাদীমহল তাদের ধারণাকে আকড়ে থাকলেও ইতিহাস ক্ষমা করেনি। তাদের বিচার ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে, জাতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, মুজিবাদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ এবং বাঙালি জীবনে,সমাজের গতিধারায়। প্রশ্ন আসতে পারে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন কি ছিলো? সোনার বাংলা কাকে বলে? বঙ্গবন্ধু কোন ধরনের সোনার বাংলা চেয়েছিলেন? আর শত্রুরা কেন পছন্দ করেনি? কেন তাকে খুন করে সপরিবারে? মুক্তিযুদ্ধের মহান নেতা ও সৈনিকদের কেন জেলের ভেতর ঢুকে হত্যা করে? এসব প্রশ্নের সহজ উত্তর মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি ও চেতনায় নিহিত। কেন যুদ্ধ করতে হয়েছে জাতিকে? এরও উত্তর মুক্তিযুদ্ধের মূল অঙ্গীকারে স্পষ্ট। জাতি যুদ্ধ করেছে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায়। সব মানুষের আকাঙ্খা ছিলো শোষণমুক্তি। মেহনতি মানুষ মজুর শ্রেণী, শ্রমিক কৃষক পেশাজীবী ছাত্র শিক্ষক লেখক বুদ্ধিজীবী সর্বমহল তাই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলো। এই যুদ্ধে মুতসুদ্দী মধ্যস্বত্ত্বভোগী, লুটেরা শ্রেণীর বিলুপ্তি ছিলো কাম্য। নিরাপদ বাসভূমি ছিলো আরাধ্য। উন্নত জীবনযাপন, অন্নবস্ত্র চিকিতসার নিশ্চয়তা ছিলো দাবী। সমৃদ্ধ এই শোষণহীন সমাজই সোনার বাংলা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো এই শোষণহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। শোষণ ও লুটপাট থেকে মুক্তির জন্য জাতি অস্ত্র ধরেছিলো কাদের বিরুদ্ধে? উত্তর, অস্ত্র ধরেছিলো কায়েমী স্বার্থবাদীদের বিরুদ্ধে। এই কায়েমী স্বার্থবাদীরাই পাকিস্তানি শোষক। আর ছিলো তাদের সহযোগী এদেশীয় দোশর, যারা মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছিলো, সহযোগিতা করেছিলো পাক হানাদারদের। দেশী বিদেশী এই মহল একজোট হয়েই বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার পরিজন, জাতীয় চার নেতা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারি স্বাধীনবাংলা সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদ, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ অন্যতম শীর্ষ নেতা কামরুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে হত্যা করে।
বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই বার বারই ফিরে আসতে হয় বঙ্গবন্ধু কাছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিয়ে আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি ঐতিহাসিক উচ্চারণ, অমিত শক্তিধারী জয়বাংলা স্লোগানের কথাও বলতে হয়। যে স্লোগান স্বাধীনতার অন্যতম শক্তি, যে স্লোগান অস্ত্র হয়ে ওঠেছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে। জয়বাংলা স্লোগান। সে সময় শেখ মুজিবের নামেই রনাঙ্গনে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তো মুক্তিযোদ্ধারা। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা সকলেই জানেন, যুদ্ধে শেখ মুজিব আর জয় বাংলা স্লোগান অবিচ্ছদ্য ছিলো। সেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জয়বাংলা স্লোগানকেও হত্যা করতে চেয়েছিলো ওরা। শত্রুরা ভেবেছিলো বঙ্গবন্ধুকে মুছতে হলে জয়বাংলা স্লোগানকেও মুছতে হবে। ১৫ আগস্ট তাই শুধু শোকাবহ নয়,জাতির জন্য চরম দুর্যোগের, চরম ক্রান্তিকাল। সেই ক্রান্তিকাল, সেই অমানিশাকাল অতিক্রান্ত করতে বাঙালি জাতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। দেশ ও জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছিলো সামরিক স্বৈরাচার, কালোটাকার মালিক লুটপাটকারিরা। এরা মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত ঐ কায়েমী স্বার্থবাদীরা। আরো ছিলো তাদের নব্য-পোষ্য সামরিক বেসামরিক প্রতিনিধিরা।
দীর্ঘ সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে জাতির ঘাড়ে চেপেবসা কায়েমী স্বার্থবাদীদের আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দেশের জনগণ পরাজিত করেছে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজকে ইতিহাস ঘুরে দাঁড়িয়েছে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আবার প্রজ্জ্বলিত হয়ে আজ জাতির ভাগ্যাকাশে একটি অনির্বান দীপশিখা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠায় লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন। দেশ পরিচালনা করছেন তিনি। দেশকে গড়ে তুলছেন। সমগ্র দেশবাসী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তলাবিহীন ঝুড়ি অপবাদের বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। বিশ্ব পরিসরে এ স্বীকৃতি দেশের জনগণের প্রাপ্য। অন্যদিকে, দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বে শান্তির বার্তা বহন করছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করেই বাঙালিরা প্রত্যয়শীল জাতির মর্যাদা রক্ষা করছে, গৌরব গাঁথা সৃষ্টি করছে শত অর্জনের মাধ্যমে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা হচ্ছে পর্যায়ক্রমে। কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে দেশ। আজ জীবিত বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জীবিত। যে আদর্শ বাঙালি জাতির স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করছে। সুখী সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে চলেছে। পৃথিবীময় জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান তাই আজ নিছক কোনো স্লোগান নয়Ñএকটি সমৃদ্ধ জাতির আত্ম পরিচয়। তাই এই আত্মপরিচয়কে বিশ্বে প্রতিষ্ঠার স্বপ্নবান মানুষটি হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবুর রহমান। তাই তিনি চিরঞ্জীব
শাহ শামীম আহমেদ:
রাজনীতিবিদ, লেখক ও কবি