যেসব কারণে বিজেপি হারলো, আর তৃণমূল জিতলো
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২১, ২:৩১:১৫ অপরাহ্ন
ভারতের পাঁচটি বিধান সভা নির্বাচন সম্পন্ন হলো। পাঁচের মধ্যে তিনটিতেই বিজেপি হেরেছে। যে-দুটিতে জিতেছে সে-দুটি ভারতের পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলোর মধ্যে দুটি: ত্রিপুরা ও আসাম। ত্রিপুরায় বিজেপিকে ভালবেসে ভোট দেয় নি। অন্য হিসাব…
অনুপম প্রতিবেদক: পাশের বাড়িতে কখন কী হচ্ছে সেদিকে প্রতিবেশীর নজর থাকেই। ভারতের পাঁচটি বিধান সভা নির্বাচন সম্পন্ন হলো। পাঁচের মধ্যে তিনটিতেই বিজেপি হেরেছে। যে-দুটিতে জিতেছে সে-দুটি ভারতের পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলোর মধ্যে দুটি: ত্রিপুরা ও আসাম। ত্রিপুরায় বিজেপিকে ভালবেসে ভোট দেয় নি। অন্য হিসাব। তারা বলছেন, শুধু তারা ক্ষমতার বদল চেয়েছেন। কেরালার বাম বিজয়ী দলের মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কেরালায় বিজেপির জায়গা নাই, কেরালার মানুষ ধর্মীয় বিভাজন চায় না’। কেরালা ধরা হয় ভারতের শতভাগ শিক্ষিত মানুষের রাজ্য।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ধর্মীয় বিভাজনের জোর চেষ্টা চালিয়েছে। রাজ্যের বিজেপি নেতাদের তুচ্ছ জ্ঞান করেছে। তবু স্থানীয় নেতারা পড়িমরি ব্যস্ত ছিলেন ঘোড়ার ঘাস কাটার কাজে। রাজ্য বিজেপি নেতারা প্রচার পর্বে অনেক পরিশ্রম করলেও তারা কাকে মুখ্যমন্ত্রী বানাবেন পরিস্কার করেন নি। এই সিদ্ধান্ত ছিল বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরই। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা বারবার বাংলার ‘ভূমিপুত্র’-ই মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে জানালেও আলাদা করে কারও নাম বলেননি। অন্য দিকে, তৃণমূলের মুখ ছিলেন ১০ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকা লড়াকু নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলার কোনও নেতাকে মুখ হিসেবে তুলে না ধরার জন্য নীলবাড়ির লড়াইয়ে বড় বেশি নির্ভরতা ছিল কেন্দ্রীয় নেতাদের উপরে। আর সেই নির্ভরতাকে ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি প্রাথমিক ভাবে মনে করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের এই আক্রমণকেই সমর্থন দিয়েছে বাংলার মানুষ।
২০১৬ সালে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ৩টি আসনে জিতেছিল। সেখান থেকে একেবারে ক্ষমতায় আসার যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল তা দলের অভিজ্ঞতার তুলনায় ছিল অতি আশা। লোকসভা নির্বাচনের ফল বিজেপির পক্ষে ছিল বলে বিধানসভা ভোটেও তারা জিতবে এমন ভাবা ঠিক হয়নি। তাই বিশাল ব্যবধানে হারতে হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে তৃণমূল থেকে যারা এসেছেন বিজেপিতে, তাদের প্রাধান্য দেওয়া দলের কর্মী, সমর্থক এবং ভোটটাররা ভাল চোখে নেয়নি বলেই মনে করছে বিজেপি। একই সঙ্গে রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, রাজ্যের সর্বত্রই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনেক ভুল ছিল। তাই বিশাল ব্যবধানে হারতে হয়েছে বিজেপিকে।
ওদিকে প্রতিকূলতা নেহাত কম ছিল না তৃণমূলের। তা সত্ত্বেও তৃতীয় দফায় রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে তৃণমূল কংগ্রেস ২১৩ আসনের বড় জয় নিয়ে। মমতা বানার্জির ‘দুয়ারে সরকার কর্মসূচি’ বিরোধীরা বিস্তর কটাক্ষ করলেও জনমানসে ইতিবাচক প্রভাব যে পড়েছে, তা ভোটবাক্সে বোঝা গিয়েছে।
বিজেপি-বিরোধী ভোট এককাট্টা হওয়া একটি অন্যতম প্রধান কারণ তৃণমূলের বিশাল বিজয়ে। লড়াই যে বিজেপি বনাম তৃণমূল হবে, তা আগে থেকেই ভেবে নিয়েছিলেন ভোটাররা। সেইসঙ্গে বিজেপিকে রুখতে পারবে একমাত্র তৃণমূল, এমন ভাবনাও কাজ করেছে। তার ফলে বিজেপি-বিরোধী ভোটের বেশিরভাগ তৃণমূলের ভোট ব্যাংকে গিয়েছে। সেই প্রমাণ মিলেছে তৃণমূলের ভোটের হার বৃদ্ধি পাওয়ায়। প্রাপ্ত ভোটের হারের নিরিখে সর্বকালীন রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বামেদের ভোটের বড় অংশ বিজেপিতে গিয়েছিল। তার ফায়দা পেয়েছিল বিজেপি। এবার বামেরা রামঅলাদের বিরুদ্ধে ছিল।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিজেপি সারা দেশে শক্ত সমালোচনার মুখে পড়ে। ফলে এ সময়টাতে তৃণমূলের দাপট বেড়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সেই সময় দেশে করোনার বাড়বাড়ন্ত তৈরি হয়েছিল। তা নিয়ে মোদী সরকারকে দোষী করে প্রচার চালিয়েছে তৃণমূল। ফলে ভোট কমেছে বিজেপির।
মমতার ব্যক্তিগত ক্যারিশমা একটি অন্যতম প্রধান কারণ তৃণমূল জিতে যাওয়ার।প্রথম থেকেই মমতা বলে এসেছেন, ২৯৪ টি আসনেই প্রার্থী তিনি। নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরেছেন। যথারীতি সেই প্রয়াস কাজে দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস বড় ব্যবধানে জয়ী হয়ে বিজেপির ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতিকে না বলেছে।