বুক রিভিউ: ক’জন কৃতি সন্তান এর পাঠ প্রতিক্রিয়া
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২১, ২:৪৫:৩৬ অপরাহ্ন
বুক রিভিউ: ক’জন কৃতি সন্তান এর পাঠ প্রতিক্রিয়া :: মুহিব উদ্দিন চৌধুরী
▶️ লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান এর আরেকটি বহুল আলোচিত এবং পাঠক সমাদৃত বই ‘ক’জন কৃতিসন্তান’। এটি সাধারণ অর্থের বই বললে, পাঠকদের ভুল তথ্য দেয়া হবে। মূলত এটি একটি ইতিহাসগ্রন্থ। সিলেট জেলাধীন গোলাপগঞ্জ থানার, কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া, কিছু অধ্যায়ের সচিত্র দলিল রয়েছে ‘ক’জন কৃতি সন্তান বইটিতে। বইটি ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিলেটের আশা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়।
সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলা একটি প্রাচীন জনপদ। সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বহু কিছু ধারণ করে রেখেছে যুগ যুগ ধরে এ জনপদ।
বইটি পড়ে যে কেউ অনুধাবন করতে পারবে যে, লেখক আনোয়ার শাহজাহান কতটা সাহস করে এমন একটি বই লেখার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এক অনিশ্চয়তার মাঝে, বিস্তর তথ্যের দুষ্পাপ্যতা জেনেও অবিরাম পরিশ্রম করে গেছেন। কারণ তিনি জানতেন, সেদিন যদি এই বইটি রচনা করার উদ্যোগ তিনি না নিতেন, হয়তো সবকিছুর মতো, প্রকৃতির নিয়মে অনেক ইতিহাস কালের গর্ভে হারিয়ে যেতো। পাঠক বঞ্চিত হতেন, সেই অজানা ইতিহাস থেকে।
বিভিন্ন যুগে গোলাপগঞ্জ জেলায় জন্ম নিয়েছেন বহু খ্যাতনামা মনীষী, চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ প্রমুখ। যারা আজ জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে সুনাম অর্জন করে দেশের জন্য খ্যাতি বয়ে এনেছেন। লেখক সে সকল সফল ব্যক্তিদের জীবনী তুলে ধরেছেন, ‘ক’জন কৃতিসন্তান’ বইটিতে। যাকে বর্তমান পরিস্থিতিতে একটা ইতিহাসগ্রন্থও বলা যেতে পারে।
বইটি চারটি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে, গোলাপগঞ্জ উপজেলার পরিচিতি, দ্বিতীয় অধ্যায়ে আছে গোলাপগঞ্জের কৃতিসন্তানদের জীবনী, তৃতীয় অধ্যায়ে জানা যাবে, সাহিত্য সাধনায় গোলাপগঞ্জের ভূমিকা এবং সর্বশেষ চতুর্থ অধ্যায়ে পাঠকরা জানতে পারবে গোলাপগঞ্জের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অতীত ও বর্তমান।
‘ক’জন কৃতিসন্তান’ বইটির বিষয়বস্তু বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরার ক্ষুদ্র প্রয়াস নিয়েছি। যাতে করে পাঠক বুঝতে পারে বইটির গুরুত্ব। বিশেষত এটি যে এক ইতিহাসের দলিল তা সম্পর্কে জানতে পারবে।
গোলাপগঞ্জের কৃতিসন্তানদের জীবনী পাঠে, প্রথমেই যার নামটি চলে আসে, তিনি হচ্ছেন হজরত শাহনূর (রঃ)। যিনি হজরত শাহজালালের ৩৬০ জন সঙ্গীর মধ্যে গোলাপগঞ্জে যারা ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন, তাদের অন্যতম। তিনি গোলাপগঞ্জের ঐতিহাসিক কৈলাশ টিলায় বসতি স্থাপন করেন।
জানা যায়, হজরত মীর হাজরা (রঃ) সম্বন্ধে। যিনি আরব দেশের কুরাইশ বংশীয় একজন সাধক পুরুষ, আল্লাহর অলি। হজরত মীর হাজরা (রঃ) পঞ্চাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে সিলেট অঞ্চলে আগমন করে উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামে আস্তানা স্থাপন করেন।
পঞ্চদশ শতাব্দীর আধ্যাত্মিক গুরু মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য। যাকে তাঁর অনুসারীরা ভগবান কৃষ্ণের অবতার বলে মনে করেন। চৈতন্য গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা একটি ধর্মীয় আন্দোলন। যা ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা বৈষ্ণব বা পরমাত্মা হিসাবে প্রচার করে। আমাদের অনেকেরই হয়তো অজানা যে, বৈষ্ণব ধর্মের প্রর্বতক মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যে যখন ২৪ বছরে পর্দাপন করেন, তখন মাতা শচী দেবী তাকে পিতামহীর এক প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে, নিমাই মাকে প্রতিজ্ঞামুক্ত করার জন্য ঢাকাদক্ষিণ আগমন করেন। দিনটি ছিলো চৈত্রমাসের প্রথম রবিবার। দিনটিকে স্মরণ করে আজও চৈত্র মাসের প্রথম রবিবার স্থানটিতে সংক্রান্তি মেলা বসে থাকে। চৈতন্য দেব মন্দির গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণে অবস্থিত। ক’জন কৃতীসন্তান বইয়ে শ্রী চৈতন্যের জীবনের অনেক অজানা কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।
অদ্ভুত এক আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী, যিনি শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও রিয়াজত অবিরাম মোজাহাদার, আজীবন জ্ঞান চর্চায় নিজেকে ব্রতী রেখেছেন তিনি শাহ আব্দুল ওহাব। ১৭৬৩ সালে গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ী গ্রামে তাঁর জন্ম।
আর্জুমন্দ আলী। যিনি ছিলেন, একজন স্কুল ইনসপেক্টর, ভাবুক ও সঙ্গীত-সাহিত্যপ্রেমী। আর্জুমন্দ আলী ১৮৭০ সালে ভাদেশ্বর পূর্বভাগ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৯১ সালে ‘প্রেম দর্পণ’ উপন্যাস রচনা করেন, যা মুসলমান রচিত প্রথম সামাজিক উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবার বকুনি খেয়ে গৃহত্যাগী খান বাহাদুর সরাফত আলী চৌধুরী পড়াশোনার পাঠ চুকিয়েও নিজ অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে পুলিশের চাকুরীতে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে একনিষ্টতার জন্য দ্রুত পদোন্নতি লাভ করে পুলিশের অতিরিক্ত সুপার পদে উন্নীত হন। ১৮৮৭ সালে বৃটিশ শাসনামলে তেজপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করায় ততকালীন সরকার তাকে খান বাহাদুর উপাধি প্রদান করে।
খান বাহাদুর সরাফত আলী চৌধুরী গোলাপগঞ্জের পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের শীলঘাট গ্রামে ১৮৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
মানব জীবনে মহৎ উদ্দেশ্য সাধনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশ ও জনগণের মঙ্গলের জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, দানবীর নাছির উদ্দিন চৌধুরী তাদের অন্যতম। গোলাপগঞ্জের এই কৃতিসন্তান ১৮৭১ সালে ভাদেশ্বরে জন্মগ্রহণ করেন। কর্মজীবনে তিনি প্রথমে সাব ডেপুটি কালেক্টর পদ এবং পরবর্তীতে ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেড ও এডিশনাল চীফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেড পদে উন্নীত হন। কঠোর শ্রম, ন্যায়পরায়ণতা, অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস এবং মহৎ আদর্শের ওপর নির্ভর করে তিনি নিতান্ত দরিদ্র অবস্থা থেকে জীবন সাধনায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
যিনি প্রথম ভারতীয় শুল্ক কমিশনার হিসেবে আসামে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তাঁর জন্মও কিন্তু গোলাপগঞ্জ থানার রণকেলী গ্রামে। তাঁর নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ চৌধুরী। তিনি গোলাপগঞ্জের সুনামখ্যাত এমসি একাডেমি উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ফলশ্রুতিতে তার নামানুসারের এমসি একাডেমি রাখা হয়।
ভারতের শিলং এ যিনি প্রথম মুসলিম ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, তিনি আব্দুল মালিক চৌধুরী। যিনি ১৮৯১ সালের ১লা এপ্রিল গোলাপগঞ্জ থানার ভাদেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আব্দুল মালিক একজন সাহিত্যিক হিসেবেও পরিচিত।
মাওলানা আব্দুস সুবহান চৌধুরী গোলাপগঞ্জের পূর্ব ভাদেশ্বর গ্রামে ১৮৯২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। যিনি খেলাফত আন্দোলন ও গান্ধীর অসহযোগসহ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রেখে গেছেন।
গোলপগঞ্জের আরেক কৃতিসন্তান কালী সদয় দত্ত। যিনি ছিলেন, সমাজ দরদী, হৃদয়বান এক মহান মানুষ। যিনি অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন। কালী সদয় দত্ত গোলাপগঞ্জ থানার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দত্তরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
মৌলানা আব্দুর রশীদ। লক্ষিপাশা গ্রামে এই কৃতি সন্তানের জন্ম। তিনি ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের এক নিবেদিত প্রাণ কর্মী। স্বাধীনতার বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। ১৯৪৬ সালে আসাম বিধান সভার সদস্য এবং একই সাথে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতি, সমাজ সংস্কারমূলক কাজে যিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন, তিনি গোলপগঞ্জের জোবেদা রহিম চৌধুরী। সিলেটের মহিলা জনসভায় প্রকাশ্যে যোগদানকারিনী একমাত্র মুসলিম মহিলা ছিলেন এই জোবেদা খাতুন।
গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরের আরো এক আলোচিত কৃতিসন্তান আহছান রেজা। যিনি ব্রিটিশ সরকারের অধিনে পুলিশ বিভাগে যোগদানের পর, সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
তিনি কুলাউড়া থানার ইটার জমিদার ছিলেন কুটু মিয়ার হত্যার আসামী করামুন্নেস সহ অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করে ১৯৩০ সালে সরকার কর্তৃক পুরস্কৃত হন।
ইসমাইল আলী। সমাজে অন্যায়-অত্যাচার শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। ইসমাইল আলী ঢাকাদক্ষিণের দত্তরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জীবনের আলোচিত ঘটনাগুলো জানতে পাঠকদের পুরো বইটি পড়তে হবে। তিনি ছিলেন নানকার আন্দোলনের অবিসংবাধিত নেতা।
রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে যারা খ্যাতি অর্জন করেন, তার মধ্যে কবি অশোক বিজয় রাহা অন্যতম। যিনি ১৯১০ সালে মিশ্রপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কর্মজীবনে তিনি ১৯৫১ সালে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে বিশ্বভারতীতে যোগদান করে গোলাপগঞ্জের মানুষের মুখ উজ্জ্বল করেন। সৃজনশীল সাহিত্য রচনার জন্য অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন অশোক বিজয় রাহা।
বাংলাদেশের খ্যাতিসম্পন্ন কৃষি বিজ্ঞানী ডঃ এস.ডি চৌধুরীও গোলাপগঞ্জ থানার রণকেলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সহ বাংলাদেশ বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্রদের রাজনীতে অংশগ্রহণের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যিনি লড়েছেন তিনি গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ী গ্রামের নুরুর রহমান চৌধুরী। ছাত্র রাজনীতিতে যার অবদান ও ভূমিকা অপরীসিম।
সেই সময়ে একমাত্র কলিকাতা মেডিকেল কলেজেই ডাক্তারী পড়ার সুযোগ ছিলো। আর সমগ্র আসামের জন্য নির্ধারিত ছিলো মাত্র ৩টি আসন। এই তিনটি আসনের একটি আসনের সুযোগ পান রায়গড় গ্রামের এই স্বনামধন্য ব্যক্তি ডঃ মুহিবুর রহমান চৌধুরী। পরবর্তীতে তিনি কলিকাতা মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রথম স্বাস্থ্য মহাপরিচালক ছিলেন।
পাকিস্তান সরকারের অধীনে অর্থ মন্ত্রনালয় ও কেবিনেট ডিভিশনের উপ-সচিব এর দায়িত্ব পালনকারী হেদায়েত আহমেদ গোলপগঞ্জের ভাদেশ্বর গ্রামের আরো এক কৃতিসন্তান। তার ভাই তাছাদ্দুক আহমেদ আসাম প্রদেশে মুসলিম ফেডারেশনের সভাপতিসছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি প্রগতিশীল মতবাদ গ্রহণ করলে পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়েন। আইয়ুব খানের সামরিক বাহিনীর শাসনামলে সময় হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্মগোপন থাকা অবস্থায় বৃটেনে চলে যান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। তিনি একজন খ্যাতিমান সাংবাদিকও ছিলেন। বৃটিনের রাণী কতৃক এমবিই উপাধি প্রদান করে।
ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের বারকোট গ্রামে জন্ম নেয়া ফারুক চৌধুরী কর্মজীবনের মাধ্যমে নিজ গ্রামের মানুষের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। ফারুক চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে লন্ডন, আবুধাবী, বেলজিয়ামের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি একজন লেখক হিসেবেও পরিচিত।
এক উজ্জ্বল খ্যাতিনামা পর্দার্থবিদ ডঃ সদরুদ্দীন আহমদ চৌধুরী। যিনি ফুলবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কর্মজীবনে অধ্যাপনা হিসেবেই যিনি নিজেকে নিয়োজতি রেখেছিলেন। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চান্সেলর ছিলেন।
তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার যাকে ‘তমঘায়ে পাকিস্তান’ খেতাবে ভূষিত করেছিলেন, তিনি বারকোট গ্রামে জন্ম নেয়া ইনাম আহমদ চৌধুরী। কর্মজীবনে যিনি সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হতে তুরষ্কে বাংলাদেশ রাস্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত থেকে যিনি ১৯৯২ সালে চাকুরী হতে অকালীন অবসর পান, তিনি রণকেলী গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মেজর জেনারেল (অবঃ) শফি আহমদ চৌধুরী। তার জীবনের ব্যাপক জানা-অজানা বিষয় জানা যাবে, বইটিতে।
এক সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারী পদে নিযুক্ত ছিলেন, ডঃ সৈয়দ মকবুল হোসেন। তাঁর জন্ম গোলপগঞ্জ থানার আমুড়া ইউনিয়নের সুন্দিশাইল গ্রামে। বর্তমানে একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে সমাজের বিভিন্ন স্থরে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখছেন। গোলাপগঞ্জের সাধারণ জনগণের কাছে একজন মানবপ্রেমী হিসেবে পরিচিত ডঃ সৈয়দ মকবুল হোসেন। তিনি গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজার নির্বাচনী এলাকার সাংসদও ছিলেন।
সিলেট সমাচার নামক বহুল প্রচারিত পত্রিকার সাংবাদিক মাহমুদ হক। শুধু সাংবাদিকতাতেই নিজেকে বদ্ধ করে রাখেননি। একজন সফল গীতিকারের উপাধীটাও তুলে নিয়েছেন সফলতার ঝুড়িতে। তার জন্ম আমুড়া ইউনিয়নের কদমরসুল গ্রামে।
উপরিউক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় কৃতি সন্তানদের তালিকা ছাড়াও আরো অনেকের তথ্য রয়েছে আলোচ্য বইটিতে।
বইটির আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ অধ্যায় ‘সাহিত্য সাধনায় গোলাপগঞ্জ’। এখানে গোলপগঞ্জের আরবী-ফারসী-উর্দু সাহিত্য ছাড়াও সিলেটী নাগরী সাহিত্য, আধুনিক সাহিত্য নিয়ে বিষদ আলোচনা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে লেখকদের উল্লেখযোগ্য বইয়ের তালিকা।
গোলাপগঞ্জের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উত্থান-পতন ও ধারাবাহিকতা সমন্ধে জানতে হলে, পড়তে হবে, বইটির চর্তুথ অধ্যায়ের ‘‘গোলাপগঞ্জের রাজনৈতিক কর্মকান্ড’’ অধ্যায়টি। গোলাপগঞ্জে সিপাহী বিপ্লবের ইতিহাস, খেলাফত অসহযোগ ও স্বদেশী আন্দোলন, নানকার বিদ্রোহ, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সহ
জানা-অজানা ব্যাপক তথ্যের সম্ভার এই বইটি।
মোট কথা, দেশের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, লেখক আনোয়ার শাহজাহান এর ‘‘ক’জন কৃতি সন্তান’ বইটি গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে। একজন পাঠকের জ্ঞানের পরিধি প্রসারে ‘ক’জন কৃতিসন্তান’ ব্যাপক ভূমিকা রাখবে, তা হলফ করে বলা যায়। উপরিউক্ত আলোচনায় তুলে ধরা কৃতি সন্তানদের জীবনের উত্থান-পতন, সংগ্রামের নানা ঘটনাগুলো বিস্তারিত পাঠ, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে অনুপ্রেরণা যোগাবে। এবং নিজেকে একজন প্রকৃত মানুষরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে ‘‘ক’জন কৃতি সন্তান’ বইটি।
মুহিব উদ্দিন চৌধুরী
সম্পাদক ও প্রকাশক
অনুপম নিউজ২৪ ডটকম