তিন দিন বন্ধ থাকার পর আজ খুলেছে জুড়ির সোনারুপা চা বাগান
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২০ এপ্রিল ২০২১, ৯:৪৫:৪৬ অপরাহ্ন
সংবাদদাতা: মৌলভীবাজারের জুড়ীর সোনারুপা চা বাগান ৩ দিন বন্ধ থাকার পর আজ মঙ্গলবার খোলা হয়েছে। বাগানের ঠিকাদারগণ বকেয়া বিলের জন্য বাগান ব্যবস্থাপকসহ কোম্পানির কয়েকজন স্টাফকে মারধরের ঘটনায় মালিকপক্ষ শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগানের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছিল।
জানা যায়, আকিজ গ্রুপের মালিকানায় জুড়ী উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে ধামাই, আতিয়াবাগ ও সোনারুপা চা বাগান এবং শিলঘাট ও পুচি নামে দুইটি ফাঁড়ি চা বাগান রয়েছে। সোনারুপা চা বাগানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন। শ্রমিকদের বসতঘর নির্মাণ/সংস্কারের জন্য বাগানের কিছু শ্রমিক ঠিকাদার কাঠ সরবরাহ করেন। ইতিপূর্বে সরবরাহকৃত কাঠের কিছু বিল ব্যবস্থাপকের কাছে বকেয়া ছিল। সম্প্রতি কিছু কাঠের প্রয়োজন হলে ব্যবস্থাপক কোটেশনের মাধ্যমে কম দরদাতাকে অর্ডার দেন। আগের ঠিকাদাররা ওই কাঠ আটকালে ব্যবস্থাপক পুলিশ নিয়ে ঠিকাদারদের ঘরে ঘরে তল্লাশী করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েকজন ঠিকাদার তাদের লোকজন নিয়ে বাগানে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আগের বিলের জন্য বুধবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল থেকে ব্যবস্থাপক মালিক নেওয়াজ ওয়াইজকে নিজ কার্যালয়ে ঘেরাও করে রাখে। খবর পেয়ে কোস্পানীর উপ-মহা ব্যবস্থাপক শেখ কাজল মাহমুদ ও ইউপি চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন আহমদ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
তবে রাত সাড়ে ১১টায় ব্যবস্থাপক শুক্রবার (বৃহস্পতিবার নববর্ষের ছুটি ছিল) অফিস না করার শর্তে অবরোধ তুলে নেয়া হয়। কিন্তু শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় ব্যবস্থাপক এবং কোম্পানীর প্রধান কার্যালয় থেকে আসা কর্মকর্তা অফিসে যাবার পথে আগের ঠিকাদারগণসহ বাগানের শ্রমিকরা গাড়ি আটকিয়ে তাঁদের উপর হামলা চালায়। ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কুলাউড়া সার্কেলের সাদেক কাওসার দস্তগীর, জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী ও পূর্বজুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন আহমদ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠান। এ ঘটনায় ব্যবস্থাপক বাদী হয়ে জুড়ী থানায় একটি মামলা করেন।
এদিকে বাগান ব্যবস্থাপক মালিক নেওয়াজ ওয়াইজ, প্রধান কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান চৌধুরী ও ব্যবস্থাপকের ড্রাইভার দিলীপ রুদ্র পালকে কতিপয় শ্রমিক এবং তাদের সহযোগীরা গাড়ি আটকিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করায় এবং আইন শৃঙ্খলা বহির্ভূত হওয়ায় বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (অদ্যাবধি সংশোধিত) এর ১২ ধারা মোতাবেক ১৭ এপ্রিল শনিবার হতে বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আকিজ গ্রুপের ধামাই চা-বগান এবং চা-বাগান সমূহের উপ-মহা ব্যবস্থাপক শেখ কাজল মাহমুদ স্বাক্ষরিত পত্রে শনিবার (১৭ এপ্রিল) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সোনারূপা চা বাগান বন্ধের খবর পেয়ে ক্ষিপ্ত শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বাগান খুলে দেয়ার দাবি জানায়।
এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার সকাল ১১টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইউএনও আল-ইমরান রুহুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই সভায় আকিজ গ্রুপের চা-বাগান সমূহের উপ-মহা ব্যবস্থাপক শেখ কাজল মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুলাউড়া সার্কেল সাদেক কাওসার দস্তগীর, জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, পূর্বজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন আহমদ, জুড়ী ভ্যালি চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কমল বোনার্জীসহ বাগান পঞ্চায়েত নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মঙ্গলবার বাগান খোলা হয়। তবে বাগান ব্যবস্থাপক মালিক নেওয়াজ ওয়াইজকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানা যায়।