ব্রাজিল: বলসোনারোর বিরুদ্ধে ২৭ বছরের সাজা কার্যকরের নির্দেশ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৫:৪৫ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তার উত্তরসূরির বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া এই রায়কে ব্রাজিলের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক রাজনৈতিক ও আইনি নাটকের চূড়ান্ত পর্ব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বলসোনারোর আপিল প্রত্যাখ্যান করে তার এই সাজা চূড়ান্ত করেছে।
বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েস আদেশ দেন, বলসোনারোকে ব্রাসিলিয়ার ফেডারেল পুলিশ সদর দপ্তরে সাজা ভোগ শুরু করতে হবে। গত শনিবার থেকে পৃথক মামলায় তিনি আটক অবস্থায় আছেন। গৃহবন্দী অবস্থায় নজরদারির যন্ত্র ‘অ্যাংকল মনিটর’ নষ্ট করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
বলসোনারোকে ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে পরাজিত হওয়ার পর অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২৭ বছর ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
রাজনীতির মঞ্চে এই রায় বলসোনারোর জন্য বড় একটি ধাক্কা। এই সাজার ফলে তিনি শুধু ক্ষমতা থেকেই বিতাড়িত হননি, বরং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার অধিকারও হারিয়েছেন।
২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সামরিক শাসন-নেতৃত্বের প্রতি বলসোনারোর ঝোঁক, জনতুষ্টিবাদী বক্তৃতা ও বিভাজনমূলক অবস্থান ব্রাজিলকে গভীর রাজনৈতিক মেরুকরণে ঠেলে দিয়েছিল।
২০২২ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর তার অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। এখন তিনি দণ্ডিত, সরকারি পদে নিষিদ্ধ এবং একসময়কার ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার প্রতি সমর্থন তুলে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন ⤵
ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রাজিলের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছেন। বলসোনারো বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওই শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
কংগ্রেসম্যান লিন্ডবার্গ ফারিয়াস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আজ ব্রাজিলের গণতন্ত্রের জন্য এক স্মরণীয় দিন। আমাদের ইতিহাসে প্রথমবার একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জেনারেলদের অভ্যুত্থানচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে দেখলাম।’
বলসোনারোর আইনজীবী সেলসো ভিলার্দি অভিযোগ করেন, আদালত অত্যন্ত দ্রুত রায় ঘোষণা করেছে এবং আপিলের জন্য আরও সময় দেওয়া উচিত ছিল। তিনি জানান, আইনি দল রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।
২০২২ সালে অভ্যুত্থান পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগের পর গৃহবন্দী অবস্থায় ১০০ দিনেরও বেশি সময় কাটান বলসোনারো। ওই সময় তার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কাছে হস্তক্ষেপ চাওয়ার অভিযোগও উঠে আসে।
বলসোনারোর ছেলে এদয়ার্দো বলসোনারো রয়টার্সকে বলেন, তার বাবার প্রতি এটি ‘মানসিক নির্যাতন’ এবং ‘একটি সাজানো মামলা’। আরেক ছেলে কার্লোস জানান, কারাগারে গিয়ে তিনি বাবাকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া অবস্থায় পেয়েছেন।
তবুও বলসোনারো দাবি করছেন, আগামী বছর তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অন্যদিকে তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠ মহল দক্ষিণপন্থী রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে এবং ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য একজন বিকল্প রক্ষণশীল প্রার্থী তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।




