কৃমির যে ৫টি সংকেত প্রাপ্তবয়স্করা প্রায়ই উপেক্ষা করেন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৩:৪৯ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: কৃমি সংক্রমণ শুধুমাত্র শিশুর সমস্যা নয়? আসলে প্রাপ্তবয়স্করাও এ ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন, বিশেষ করে যেখানে স্বচ্ছতা, খাবার ও পানির নিরাপত্তা পর্যাপ্ত নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে, হেলমিন্থ বা কৃমি এবং প্রোটোজোয়া প্রজাতির অন্ত্রপরজীবী এখনও বিশ্বব্যাপী বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করছে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো অনেকটা সূক্ষ্ম। হঠাৎ বেশি ক্ষুধা লাগা, মুখে ব্রণ বা দাগ দেখা, অনিয়মিত ক্লান্তি—এই সব প্রায়ই “স্বাভাবিক” হিসাবে মনে হয়ে যায়। কিন্তু এগুলো হতে পারে শরীরের একটি সতর্কবার্তা। চলুন জেনে নিই প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের ৫টি সাধারণ কিন্তু প্রায়ই উপেক্ষিত লক্ষণ।
১. বারবার ক্ষুধা বা অতিরিক্ত ক্ষুধা
আপনি যথেষ্ট খাচ্ছেন, হয়তো নিয়মিত ব্যায়ামও করছেন, কিন্তু তবুও বারবার ক্ষুধা অনুভব করছেন। এর কারণ হতে পারে অন্ত্রে কৃমি যা পুষ্টি শোষণকে বাধাগ্রস্ত করছে। উদাহরণস্বরূপ, আসকারিসিস ধরনের কৃমি শান্তভাবে শরীরের পুষ্টি শোষণ করতে পারে। ফলে শরীর “পুষ্টির ঘাটতি” অনুভব করে এবং ক্ষুধার সংকেত পাঠাতে থাকে। যদি নিয়মিত খাবার খাওয়া সত্ত্বেও ক্ষুধা কমে না, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২. অজানা ব্রণ, ফোসকা বা ত্বকের সমস্যা
ত্বকের ব্রণ, নতুন ফোসকা বা চুলকানো দাগ সাধারণত খাদ্যাভ্যাস, হরমোন বা মানসিক চাপের কারণে মনে করা হয়। তবে কিছু কৃমি সংক্রমণ ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, হুকওয়ার্ম লার্ভার কারণে উদ্ভূত কাটানিয়াস লার্ভা মাইগ্রান্স রোগে ত্বকে চুলকানো দাগ দেখা যায়। এছাড়াও, অন্ত্রের কৃমি পুষ্টির ঘাটতি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার পরিবর্তন বা ভিটামিন ও খনিজের অভাবে ত্বকের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি ব্রণ বা ফোসকা হজমজনিত সমস্যা বা অন্যান্য লক্ষণগুলোর সঙ্গে দেখা দেয়, তবে সাধারণ ব্রণের কারণের বাইরে তাকানো জরুরি।
৩. হজমে সমস্যা ও ওজনের পরিবর্তন
কৃমি সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণ হলো পেট ব্যথা, ফোলা, গ্যাস, বমি, ডায়রিয়া। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এগুলো অনেক সময় হালকা থাকে। হজমে হঠাৎ পরিবর্তন, গ্যাস ও ফোলাভাব, বিশেষ করে যদি হালকা ওজন কমে বা বজায় রাখতে কষ্ট হয়, কৃমির উপস্থিতির ইঙ্গিত হতে পারে। বড় পরিমাণে কৃমি শরীরের পুষ্টি শোষণ ব্যাহত করতে পারে। যদি হজমের সমস্যা দুই সপ্তাহের বেশি থাকে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪. রাতের চুলকানি বা অস্বস্তি
প্রাপ্তবয়স্করা প্রায়ই এটি উপেক্ষা করে। তবে থ্রেডওয়ার্ম বা পিনওয়ার্ম রাতের বেলায় মলদ্বারে চুলকানি সৃষ্টি করে যখন স্ত্রী কৃমি ডিম দেয়। যদি রাতের সময় চুলকানি অব্যাহত থাকে বা অন্তর্বাসে সাদা সুতো বা অংশ দেখা যায়, এটি স্পষ্ট সংকেত এবং চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।
৫. স্থায়ী ক্লান্তি, লোহিত অভাব বা হালকা অ্যানিমিয়া
যখন কৃমি শরীরের পুষ্টি গ্রহণ করে, হোস্ট যথেষ্ট লোহা, প্রোটিন বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পায় না। ফলে সাধারণ ক্লান্তি, ফর্সা চেহারা এবং কখনও কখনও অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে। WHO-এর মতে, ভারী কৃমি সংক্রমণ দুর্বলতা ও অপুষ্টির কারণ হতে পারে। যদি প্রাপ্তবয়স্কের স্থায়ী ক্লান্তি বা লোহিত অভাব থাকে, তবে পরজীবীর কারণে হতে পারে বলে চিকিৎসা পরীক্ষা করা উচিত।
প্রাপ্তবয়স্করাও কেন সতর্ক হতে হবে
শিশুরা দ্রুত বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে ঝুঁকিপূর্ণ, তাই কৃমি সংক্রমণের লক্ষ্য শিশুদের ওপর বেশি থাকে। তবে প্রাপ্তবয়স্করাও সংক্রমিত হতে পারে, যেমন কাঁচা বা অর্ধপাকা মাংস, মাছ, দূষিত পানি বা মাটির সংস্পর্শে। প্রাপ্তবয়স্ক সংক্রমণ অনেক সময় দীর্ঘকাল ধীরে ধীরে শরীরের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে এবং সূক্ষ্ম লক্ষণ ছাড়া থাকে।
কী করবেন যদি সন্দেহ হয়
আপনার লক্ষণগুলো নিয়ে চিকিৎসক বা গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের সঙ্গে আলোচনা করুন। ক্ষুধা, ত্বকের পরিবর্তন, হজমজনিত সমস্যা বা যেকোনো ভ্রমণ বা খাদ্যসংক্রান্ত ঝুঁকির কথা উল্লেখ করুন। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় হলে মল পরীক্ষা বা রক্ত পরীক্ষা করতে পারেন। অধিকাংশ কৃমি সংক্রমণ অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ যেমন আলবেনডাজল বা মেবেনডাজল দিয়ে কার্যকরভাবে চিকিৎসা করা যায়।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
হাত ভালোভাবে ধোয়া, অর্ধপাকা মাংস বা কাঁচা মাছ এড়ানো, সবজি পরিষ্কার করা এবং যেখানে কৃমির লার্ভা থাকতে পারে সেখানে খালি পায়ে না হাঁটা। এই সাধারণ সতর্কতা আপনাকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের সূক্ষ্ম লক্ষণগুলো চিনে নিলে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়।




