জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৯:০৪ অপরাহ্ন
রাজনৈতিক বিভাজন ও প্রশাসনিক জটিলতায় গতি হারাচ্ছে বাস্তবায়ন
অনুপম প্রতিবেদক: বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি হিসেবে ঘোষিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখন অনিশ্চয়তার মুখে। ঘোষণার প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এর কার্যকর কাঠামো, আইনগত ভিত্তি এবং বাস্তবায়ন রূপরেখা নিয়ে কোনো পরিষ্কার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সংগঠন ও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণে জাতীয় ঐকমত্যের প্রতীক হিসেবে সনদটি ঘোষণা করা হয়। এতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা, এবং নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তখন আশা করা হয়েছিল—সনদটি দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসন এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
বর্তমান পরিস্থিতি
বাস্তবায়নের জন্য গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কয়েক দফায় সুপারিশ দিলেও, মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্তরে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
গণভোটের সময়সূচি নির্ধারণ হয়নি
সনদের কিছু ধারা নিয়ে রাজনৈতিক মতানৈক্য
আইনগত কাঠামো তৈরিতে বিলম্ব
সরকারি সূত্র বলছে, “ধাপে ধাপে কাজ এগোচ্ছে”, তবে কমিশনের সদস্যরাই বলছেন, বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক ও বাজেট সংক্রান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি।
রাজনৈতিক অবস্থান
সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে যে সুপারিশ দিয়েছে, তা ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেসব বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সব সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না। এসব সুপারিশ শুধু জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া যে কোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) স্পষ্ট জানিয়েছে—গণভোট ও আইনগত নির্দেশনা ছাড়া তারা চূড়ান্ত অনুমোদনে যাবে না। অন্যদিকে, কয়েকটি জোটভুক্ত দল মনে করছে সনদটির কিছু ধারায় গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী ধারা রয়েছে।
আরও পড়ুন—
♦ ‘শাপলা’ প্রতীকেই আপোষহীন এনসিপি
♦ গণভোট: দ্রুতই সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
ফলে এক সময়ের ঐকমত্য এখন বিভাজনে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “সনদ নিয়ে ঐক্য না থাকলে এটি কেবল কাগুজে ঘোষণা হিসেবেই থেকে যাবে।”
প্রশাসনিক বাস্তবতা
কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, সনদের বাস্তবায়নে প্রথম ধাপে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বিকেন্দ্রীকরণ, দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন কমিশন সংস্কার, এবং তৃতীয় ধাপে নাগরিক অধিকারের আইন সংশোধন করার কথা ছিল।
তবে কোনো ধাপই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। বরং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বাস্তবায়ন নির্দেশিকা জারি না হওয়ায় কর্মকর্তারা দোটানায় রয়েছেন।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই সনদ কার্যকর করতে হলে এখনই রাজনৈতিক ঐক্য ফিরিয়ে আনা এবং আইনগত কাঠামো চূড়ান্ত করা জরুরি।
অন্যথায় এই সনদটি “ঐতিহাসিক সম্ভাবনা” থেকে “অবাস্তব প্রতিশ্রুতি”তে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারে নতুন যুগের সূচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দলীয় বিভাজন, আইনি অনিশ্চয়তা এবং প্রশাসনিক জটিলতা মিলিয়ে সনদটি এখন এক ধোঁয়াশায় আবৃত।
প্রশ্ন উঠেছে—এই সনদ কি বাস্তবায়িত হবে, নাকি দেশের ইতিহাসে আরেকটি অপূর্ণ অঙ্গীকার হিসেবেই থেকে যাবে?




