এআই শ্রেষ্ঠত্ব: যুক্তরাষ্ট্র কি চীনের কাছে হেরে যাবে?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১:১৬:০৯ অপরাহ্ন
সারওয়ার চৌধুরী: বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আছে বলে জানানো হচ্ছে। বিশেষ করে মৌলিক গবেষণা ও আধুনিকতম মডেল তৈরির ক্ষেত্রে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই এগিয়ে থাকা যতটা বড় দেখায়, বাস্তবে ততটা নয়—আর যদি দেশটি মৌলিক বিজ্ঞান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহায়তা কমিয়ে দেয়, তবে এই ব্যবধান দ্রুত কমে যেতে পারে। চীন এ ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিদ্বন্দ্বী, কারণ তাদের কাছে রয়েছে বিপুল তথ্যভান্ডার, দ্রুত বিনিয়োগের গতি, এবং তুলনামূলক কম খরচে উদ্ভাবনী মডেল তৈরির সক্ষমতা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা তাদের অগ্রগতি ধরে রাখতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও চিপ রপ্তানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উপর দিতে বলছেন।
পর্দার আড়ালের কথা
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে প্রায় সমান অবস্থানে আছে।
সেন্টার ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজির (CSET) নির্বাহী পরিচালক হেলেন টোনার ব্যাখ্যা করেছেন—এই দুই দেশের কৌশল একেবারেই ভিন্ন। চীন জোর দিচ্ছে ওপেন-সোর্স উন্নয়নের ওপর, আর যুক্তরাষ্ট্র নির্ভর করছে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রভাবের ওপর। তিনি আরও ব্যাখ্যা করেছেন, “এআই-এ জেতা” আসলে কী অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং এর প্রকৃত মানে কী।
যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধার পক্ষে যেসব যুক্তি
মৌলিক গবেষণা:
যুক্তরাষ্ট্র মৌলিক এআই গবেষণায় শক্তিশালী অবস্থানে আছে। সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত গবেষণাপত্রের সংখ্যাই তার প্রমাণ, যা দীর্ঘমেয়াদি উদ্ভাবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উন্নত মডেল:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর অধিক সংখ্যক উল্লেখযোগ্য এআই মডেল তৈরি করছে।

আরও পড়ুন—
বিশ্ব দ্রুত ধনী হওয়ার দিকে, আইডিয়া হবে সবচেয়ে বড় সম্পদ, ২০৩০ সালে যা দেখবে মানুষ
জনবল ও অবকাঠামো:
CryptoSlate-এর মতে, যুক্তরাষ্ট্র চিপ ডিজাইন, ক্লাউড অবকাঠামো এবং ভেঞ্চার ফান্ডিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এখনো স্পষ্টভাবে এগিয়ে।
ডিপ লার্নিংয়ের শিকড়:
এআই-এ (বিশেষ করে ডিপ লার্নিংয়ে) যে সব যুগান্তকারী সাফল্য এসেছে, তা এসেছে মৌলিক গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ফল হিসেবে—যে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিকভাবে দক্ষ।
চীনের যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা
দ্রুত অগ্রগতি ও খরচ দক্ষতা:
টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং একটি ইউটিউব ভিডিওর মতে, চীন খুব দ্রুত এই ব্যবধান কমিয়ে আনছে—কখনও কখনও কম উন্নত হার্ডওয়্যার ব্যবহার করেই খুব কম খরচে সমমানের মডেল তৈরি করছে।
কৌশলগত সুবিধা:
ফরচুন জানায়, চীন বিশাল জনসংখ্যা থেকে সংগৃহীত তথ্য, সরকারের শক্ত বিনিয়োগ, এবং ব্যাপক বিদ্যুৎ-নির্ভর অবকাঠামো (যেমন বিশাল ডেটা সেন্টার চালানোর সক্ষমতা) থেকে বড় সুবিধা পাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত দুর্বলতা:
এআই-র পথিকৃৎ জিওফ্রে হিন্টন সতর্ক করেছেন যে, মৌলিক বিজ্ঞান ও গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল কমিয়ে দিলে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ এআই উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি একে তুলনা করেছেন “বীজ খেয়ে ফেলার” সঙ্গে — অর্থাৎ ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা। (টাইমস অব ইন্ডিয়া ও বিজনেস ইনসাইডার)
আরও কিছু যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী নেতার মতে, বৈশ্বিক বাজারে এআই চিপের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে অবকাঠামো ও নীতিমালায় আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন। (টেক পলিসি প্রেস)
তার মানে—
এআই দৌড়টি এখনো চলমান ও জটিল। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে থাকলেও ভবিষ্যতে এই অবস্থান টিকিয়ে রাখতে হলে মৌলিক গবেষণা ও অবকাঠামোয় বিনিয়োগ বজায় রাখতে হবে। একইসঙ্গে চীনের দ্রুত অগ্রগতি ও কৌশলগত সুবিধার মোকাবিলায় কার্যকর নীতি গ্রহণও জরুরি।




