মহাবিশ্বের গভীরে এক ‘নীরব নৃত্য’, দুটি ব্ল্যাকহোল একে অপরের চারপাশে ঘুরতে দেখা গেল
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৭:৫১ অপরাহ্ন
অনুপম বিজ্ঞান ডেস্ক: মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা এমন একটি দৃশ্য ধারণ করেছেন, যেখানে দুটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল একে অপরের চারপাশে কক্ষপথে ঘুরছে। মহাকাশবিজ্ঞানীরা একে “কসমিক ডেথ স্পাইরাল” বা মৃত্যুচক্রও বলছেন — কারণ এই দুটি ব্ল্যাক হোল অবশেষে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে এক বিশাল শক্তির বিস্ফোরণ ঘটাবে।
ঘটনাটি কোথায় ঘটছে
দূরবর্তী এক গ্যালাক্সিতে অবস্থিত এই জোড়া ব্ল্যাক হোল সিস্টেমটির নাম OJ287। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। সিস্টেমটির কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক হোলটির ভর সূর্যের তুলনায় প্রায় ১৮ বিলিয়ন গুণ বেশি, আর ছোটটি তার তুলনায় প্রায় ১৫০ গুণ ছোট। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এদের কক্ষপথ সম্পূর্ণ হতে সময় লাগে প্রায় ১২ বছর।
কীভাবে দেখা গেল
ব্ল্যাক হোল নিজে আলো নির্গত করে না, তাই সরাসরি দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু যখন তাদের চারপাশের গ্যাস ও ধূলিকণাগুলো বিশাল টান বা আকর্ষণে ঘূর্ণায়মান হয়ে উত্তপ্ত হয়, তখন সেখান থেকে শক্তিশালী বিকিরণ ও “জেট” বেরিয়ে আসে। এই জেটের গতিপথ ও পরিবর্তন বিশ্লেষণ করেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে, দুটি ব্ল্যাক হোল একে অপরের চারপাশে ঘুরছে।
এই চিত্রটি ধারণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক রেডিও টেলিস্কোপ ও স্পেস রেডিও অবজারভেটরি (RadioAstron)–এর সহায়তায়। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি ছবিতে দেখা যায়, দুইটি উজ্জ্বল জেট ক্রমশ দিক পরিবর্তন করছে — যা বাইনারি ব্ল্যাক হোল মডেলের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।

আরও পড়ুন—
বিশ্ব দ্রুত ধনী হওয়ার দিকে, আইডিয়া হবে সবচেয়ে বড় সম্পদ, ২০৩০ সালে যা দেখবে মানুষ
কেন এটা এত গুরুত্বপূর্ণ
এটি শুধু এক মহাজাগতিক দৃশ্য নয়, বরং আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব যাচাইয়ের জন্যও এটি এক বড় প্রমাণ। দুটি বিশাল ভরের বস্তু যখন একে অপরকে প্রদক্ষিণ করে, তখন তারা মহাকাশে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ তৈরি করে। এই পর্যবেক্ষণ বিজ্ঞানীদের সেই তরঙ্গের উৎপত্তি ও আচরণ আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুই ব্ল্যাক হোল কয়েক হাজার বছরের মধ্যে একত্রে মিশে যাবে এবং তার ফলে সৃষ্ট তরঙ্গ মহাবিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। যদিও আমাদের জীবদ্দশায় সেটি দেখা সম্ভব নয়, তবুও এই আবিষ্কার মানব জ্ঞানের আরেকটি দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
মহাবিশ্বের গভীরে ঘটে যাওয়া এই “নীরব নৃত্য” আবারও মনে করিয়ে দিল — আমাদের জানা মহাজগৎ আসলে কত রহস্যে ভরা।




