প্রযুক্তিতে নতুন দিগন্ত: ন্যানোবট নিজেই শরীরে ঢুকে কঠিন রোগের চিকিৎসা করবে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৫:১৮ অপরাহ্ন
অনুপম প্রযুক্তি প্রতিবেদক: ন্যানো রোবট হচ্ছে এমন এক ধরনের ক্ষুদ্র রোবট, যার আকার সাধারণত ১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটার (১ ন্যানোমিটার = ১ মিটারের এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ)।
এই রোবটগুলো এতটাই ছোট যে, এগুলো মানুষের চোখে দেখা যায় না — এমনকি সাধারণ মাইক্রোস্কোপেও দেখা কঠিন।
ন্যানো রোবট কীভাবে কাজ করে
ন্যানো রোবটগুলো সাধারণত ন্যানোটেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, এবং মাইক্রোইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি হয়।
তারা নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রোগ্রাম করা থাকে। যেমন:
শরীরের রক্তপ্রবাহে চলাচল করা
নির্দিষ্ট কোষ বা ভাইরাস শনাক্ত করা
ওষুধ সরাসরি আক্রান্ত স্থানে পৌঁছে দেওয়া
এদের চালানোর জন্য প্রায়ই রাসায়নিক শক্তি, চুম্বকীয় ক্ষেত্র, অথবা আলো (লেজার) ব্যবহার করা হয়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার
ন্যানো রোবটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবহার মেডিকেল সেক্টরে। উদাহরণস্বরূপ:
Cancer Treatment:
ন্যানো রোবট ক্যান্সার কোষ শনাক্ত করে শুধু সেই কোষে ওষুধ ছাড়তে পারে, ফলে সুস্থ কোষে কোনো ক্ষতি হয় না।
Virus বা Bacteria ধ্বংস:
রক্তে প্রবেশ করে ক্ষতিকর জীবাণু খুঁজে ধ্বংস করতে পারে।
Blocked Artery পরিষ্কার:
রক্তনালীতে জমে থাকা চর্বি বা ব্লকেজ পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিউরোলজিক্যাল থেরাপি:
ব্রেনের ক্ষুদ্র অংশে ওষুধ সরাসরি পৌঁছে দিতে পারে, যেখানে সাধারণ ওষুধ পৌঁছানো সম্ভব নয়।
যদিও ন্যানো রোবট এখনো প্রাথমিক ও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে, তবুও বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে এগুলোর মাধ্যমে চিকিৎসা, পরিবেশ ও প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটার আশা করছেন।
মূল চ্যালেঞ্জগুলো হলো—
রোবটের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখা, শরীরে ক্ষতি না করা, নৈতিকতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
নিজেরাই চিকিৎসা করে
বুসানের এক উচ্চপ্রযুক্তি গবেষণাগারে দক্ষিণ কোরীয় বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন ক্যানসার মোকাবিলার এক যুগান্তকারী পদ্ধতি—একটি ন্যানো রোবট বাহিনী, যা রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে শরীরে ভ্রমণ করে এবং শক্ত টিউমারে ঢুকে তা ভেতর থেকে ধ্বংস করে।
এই ন্যানোবটগুলো কোনো ওষুধ বহন করে না—তারা নিজেরাই চিকিৎসা।
প্রত্যেকটি ন্যানোবট তৈরি হয়েছে লোহার অক্সাইড দিয়ে, যার চারপাশে মোড়া রয়েছে একটি স্মার্ট পলিমার আবরণে। শরীরে ইনজেকশনের পর, বাহ্যিক চৌম্বক ক্ষেত্রের সাহায্যে এগুলোকে টিউমারের দিকে চালিত করা হয়।
টিউমারের কাছে পৌঁছালে, ন্যানোবটগুলো টিউমারের অ্যাসিডিক মাইক্রো-পরিবেশ শনাক্ত করে। নিশ্চিত হলে, তারা নিজেরাই বড় চেইনে রূপ নেয়, টিউমারের দেয়াল ফুটো করে, এবং চৌম্বক অনুরণনের (magnetic resonance) মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে তাপ উৎপন্ন করে।

আরও পড়ুন—
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ: এআইয়ের যুগে ওআইয়ের দাপট
এই তাপে আশপাশের স্বাস্থ্যকর কোষ নষ্ট হয় না—বরং এটি ক্যানসার কোষের প্রোটিনকে বিকৃত করে এবং কোষের প্রাক-নির্ধারিত মৃত্যুর (apoptosis) প্রক্রিয়া চালু করে দেয়।
চিকিৎসা শেষ হলে, ন্যানোবটগুলো ভেঙে পড়ে এবং দেহ স্বাভাবিকভাবেই এগুলোকে শোষণযোগ্য লৌহ আয়নে রূপান্তর করে নেয়।
প্রাথমিকভাবে ইঁদুরে চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে টিউমারের ৯০% অংশ সঙ্কুচিত হয়েছে—তাও আবার শরীরে কোনো বিষক্রিয়া ছাড়াই।
চিকিৎসা পদ্ধতিটি কেমোথেরাপির মতো সারা শরীর জুড়ে ওষুধ ছড়িয়ে না দিয়ে শুধুমাত্র আক্রান্ত স্থানে কাজ করে। বুদ্ধিমান এই রোবট বাহিনী যেন এক ক্ষুদ্র সেনাদল—শুধু শত্রু কোষকেই আক্রমণ করে।
ভবিষ্যতের ন্যানোবটগুলোতে ইমেজিং ডাই যুক্ত করা হবে, যা একসাথে নির্ণয় ও চিকিৎসা চালাতে পারবে। এমনকি RNA বহন করে নির্দিষ্ট টিউমার জিন বন্ধ করে দেওয়ার মতো ক্ষমতাও যোগ করা হবে।
এই প্রযুক্তির চূড়ান্ত স্বপ্ন কেবল ক্যানসার চিকিৎসা নয়—বরং ক্যানসার কোষকে খুঁজে বের করে, গোপনে ঢুকে, একেবারে কোষে কোষে ধ্বংস করে দেওয়া।




