নয় দলের চেষ্টা চলছে বিএনপি—জামায়াতের দূরত্ব কমাতে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২:২০:১৭ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: এক সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছিল একে অপরের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী। রাজপথ থেকে শুরু করে আলোচনার টেবিল—সব জায়গাই তারা ছিল পরস্পরবিরোধী অবস্থানে।
তাদের সেই রাজনৈতিক বিরোধ এখন নতুন রূপে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যকার সম্পর্কে দেখা যাচ্ছে। এক সময় জোট সরকার গঠন এবং আন্দোলন-সংগ্রামে মিত্র হলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই দুই দলের অবস্থান পাল্টেছে। বিশেষ করে জুলাই সনদ ইস্যু, সংস্কার ও আসন্ন নির্বাচনের পদ্ধতি, কৌশলগত ভিন্নতা ও একে অপরকে দায়ী করার প্রবণতা তাদের মধ্যে ফাটল স্পষ্ট করছে। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে জামায়াত নেতাদের বক্তব্য এই দূরত্বকে করছে প্রকট, তার বিপরীতে বিএনপির অবস্থান জামায়াতকে নিয়ে যাচ্ছে চরম প্রতিদ্বন্দ্বীর অবস্থানে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ফলে ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থান হতে পারে, যা গণতন্ত্রকামী শক্তিগুলোর জন্য মঙ্গলজনক হবে না। এমন প্রেক্ষাপটে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখা এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যেকার বিদ্যমান দূরত্ব কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে নয়টি রাজনৈতিক দল। দলগুলোর প্রত্যাশা, আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে। এতে করে চলিত মাসের মধ্যেই দুই দলের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্ব ঘুচিয়ে আনা সম্ভব হবে।
মূলত তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে তারা আলোচনা করবেন। সেগুলো হলো—সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব), জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবে বিএনপির দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’র সংখ্যা কমিয়ে আনা।
সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু এবং জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি রাজনৈতিক দল গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলনে নেমেছে, যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তারাও নির্বাচনমুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার চিন্তাভাবনা করছে। দুই দলের এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রাজনীতির মাঠ হঠাৎ করে অস্থির হয়ে ওঠার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি শঙ্কিত সাধারণ মানুষও। এমন অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের মধ্যেকার দূরত্ব কমিয়ে এনে সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে নয়টি রাজনৈতিক দল।
দলগুলো হলো—গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত ছয় দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ভাসানী জনশক্তি পার্টি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও গণঅধিকার পরিষদ। নতুন এই উদ্যোগ বা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে বাকি তিনটি দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে উদ্ভূত সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে। অন্যদিকে জুলাই সনদের সাংবিধানিক ও আইনগত বিষয়ে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ও এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হককে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দুই প্রধান দল বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি গতকাল শুক্রবার রাতে বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং পিআর ইস্যু নিয়ে দুই দলের মুখোমুখি অবস্থান নিরসন প্রয়োজন। তাই আমরা দুই দলের সঙ্গে বসে একটি সমাধানের পথ বের করতে চেষ্টা করব।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবার মনে শঙ্কা, ফেব্রুয়ারিতে আদৌ নির্বাচন হবে কি না? জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্যের কাছাকাছি পৌঁছানো গেলেও রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে আবার সংশয় দেখা দিয়েছে। আমি মনে করি, বিএনপি ও জামায়াত একজোট হলে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না। এ সময় নতুন ভূমিষ্ঠ হওয়া রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের মধ্যে বিতর্কে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় দেশের অগ্রগতি থমকে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’




